হযরত মুসা(আঃ)এর জন্ম বংশ ও পরিচয়-৫ম পর্ব
হযরত মুসা(আঃ) এর জন্ম বংশ ও পরিচয়-৪র্থ পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন
যা তার কার্যের ভিতরে প্রকাশ পেয়েছে। সে কোন কথা বলেনি। কি সাইজের কতটুকু ও কি মাপের বাক্স তৈরি করবে তাও জিজ্ঞাসা করেনি। সর্বশেষে মুজুরি ক্ষেত্রে কোন রুপ বাদানুবাদ করেনি এবং অতি দ্রুত কাজ সমাধা করে চলে গেছেন। যদি এ মিস্ত্রী মানুষ হত তবে এর ক্ষেত্রে বিপরীত অবস্থা প্রকাশ পেত। যা স্বাভাবিক ভাবে ঘটে থাকে। এ বিষয় টি এখানে আলোচনার মুখ্য বিষয় নয়। কারন আল্লাহ তার নবীকে রক্ষার ব্যাপারে ফেরাস্তাগণকে যে কোন দায়িত্ব দিতে পারেন। এটা কোন গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার নয়।
হযরত মুসা (আঃ) এর মাতা বাক্স তৈরি হয়ে গেলে ছেলে কে উত্তম রুপে দুধ পান করালেন। রেশমি কাপড় জড়িয়ে তাকে বাক্স ভর্তি করালেন। অতপর শেষ রাত্রে তাকে বহন করে নিল নদের পানির উপর ভাসিয়ে দিলেন। এবং পাঠ করলেন সুবানআল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ, লাইলাহা ইল্লাল্লাহ। খাতুনের আরও এক ছেলে মেয়ে ছিল। ছেলে নাম ছিল হারুন আর মেয়ের নাম ছিল মরিয়ম। তারা উভয় ছিল বেশ বড়। মুসা (আঃ) এর মাতা বাক্স টি নদী বক্ষে ছেড়ে দিয়ে মেয়ে মরিয়ম কে বললেন তুমি সকলের অগোচরে পাহারা দিয়ে নদীর পাশে হাঁটটে থাকবে। বাক্স টি কোথায় যায় এবং ওটার কি অবস্থা হয় তা লক্ষ্য রাখবে। মরিয়ম মায়ের কথায় সায় দিয়ে বাক্সের পিছনে নদীর তীরে হাঁটতে লাগল।
বাক্সটি চলতে চলতে ফেরাউনের প্রমোদ উদ্যানের পাশে প্রবাহিত ফোয়ারার লেকের মধ্যে ঢুকে পরে।এ সময় ভোরবেলা নদীর মুক্ত বায়ু সেবনের উদ্দেশ্যে ফেরাউন ও তার স্ত্রী আছিয়া উদ্যানের মাঝে বসা ছিল। তারা দেখল, নদী থেকে একটি বাক্স ভেসে এসে তাদের উদ্যানের খালের মধ্যে প্রবেশ করেছে। তখন কৌতূহলবসে আসিয়া এক দাসীকে বাক্স টি তুলে আনার জন্য পাঠাল। দাসী বাক্সটি লেক থেকে উঠানোর জন্য অনেক চেষ্টা করল, কিন্তু সে কোন রকমে উহা উত্তলন করতে পারল না। অবশেষে আছিয়ার নিকট এসে বলল ওটা একটা কাঠের বাক্স। ওটার ভিতরে কিছু একটা আছে। আমি খুব চেষ্টা করেও উপরে উঠাতে পারলাম না। তখন আছিয়া বাক্সের কাছে গিয়ে নিজ হাতে উপরে উঠিয়ে ফেললেন। এবং উপরের তক্তা খুলে ফেললেন। তখন দেখলেন একটি অপরূপ সুন্দর বালক রেশমি কাপড় দ্বারা আবৃত অবস্থাই ঘুমিয়ে আছে। আছিয়া চন্দ্রের ন্যায় উজ্জ্বল চেহারার ছেলেটিকে দেখে মহিত হলেন। এবং আদরে করে কোলে তুলে নিয়ে ফেরাউনের কাছে গেলেন।
অতপর তিনি ফেরাউন কে বললেন দেখুন মহারাজ কতসুন্দর একটা ছেলে। কে যেন ওকে বাক্স বন্ধি করে পানিতে ভাসিয়ে দিয়েছে। এমন উজ্জ্বল চেহারার ছেলে আমি জীবনে কখনও দেখেনি। আমাদের যখন কোন সন্তান নেই তখন এই ছেলেটি কে আমরা পালক পুত্র হিসাবে পালন করব। ফেরাউন বলল দেখ এই সেই ছেলে নাকি কে জানে যে আমার রাজ্যে বিধ্বস্ত করবে এবং আমাকে খোদাই দাবি থেকে বিচ্যুত করবে। অতএব এই ছেলে কে জীবিত রাখার অর্থ হবে শত্রু পতিপালন করে বড় করা। তুমি এই ভ্রান্ত লালসা থেকে বিরত হও। এবং ছেলেটি কে জাল্লাদের হাতে তুলে দাও। আছিয়া ফেরাউনের কথায় রাজি না হয়ে বেঁকে বসল। সে বলল এই ছেলে আপনার ক্ষতি করবে তা আমার মনে হয় না।
চেহারা দেখলে তা অনেক টা অনুমান করা যায়। অতএব আপনি এই সব বাজে কথা বলবেন না। আমি সন্তান হারা জীবনের অতৃপ্ত জীবনের অধিকারিণী হতভাগা এক মহিলা। আমার বুকে কোন দিন সন্তান আসবে কি না জানি না। অতএব এই ছেলেটি কে আমি মেরে ফেলতে দেব না। ওকে আমি বুকে জড়িয়ে মায়ের তৃপ্তি লাভ করবে। আমি আপনার কোন বাঁধা মানব না। যদি কোনদিন এই ছেলে আপনার বিরোধিতা করে সে দিন ওকে জাল্লাদ দিয়ে আমি দুখণ্ড করে দিব। আপনার সে দিন আর কিছু বলতে হবে না। এ দায়িত্ব টা আমার উপর ছেড়ে দিন। বিশেষ করে আমি জীবনে আপনার কাছে কিছু চাই নি। কোন কিছুর লোভে আকৃষ্ট হইনি। এমত অবস্থায় আপনি আমার একটি মাত্র দাবি মেনে নিবেন না? তাহলে আপনি আমাকে ভালবসেন তার প্রমান কি? ভালবাসার নামে কি শুধু কি প্রহসন করেছেন? মানুষ ভালবাসার জন্য সবকিছু করতে পারে আর আপনি সামান্য একটা আবদার রক্ষা করবেন না? ফেরাউন তার স্ত্রীর দাবির সম্মুখে নতি স্বীকার করতে বাধ্য হল। শেষ পর্যন্ত সে বলল তুমি এমন একটা দাবি আমার কাছে করলে যা নির্ঘাত মৃত্যুর হাতছানি।
হোক তবুও ভালবাসার সম্মুখে এটা নগন্য। ঠিক আছে তুমি ওকে প্রতি পালনের ব্যবস্থা কর। তখন আছিয়া বাচ্চাকে দুধ পান করানোর জন্য কয়েক জন ধাত্রীকে খবর দিলেন। ধাত্রীরা এসে বাচ্চাকে দুধ মুখে দেওয়া চেষ্টা করল কিন্তু বাচ্চা দুধ মুখে নিল না। অনেক চেষ্টা করেও বিফল হল তখন এক বৃদ্ধা বলল মা সকল বাচ্চারা সকলের দুধ পান করে না। অতএব তুমি আর কতিপয় ধাত্রী খবর দিয়ে দুধ পান করাও। দুধ না দিয়ে বাচ্চাকে রক্ষা করা সম্ভব নয়।
সূত্রঃ আল কোরআনের শ্রেষ্ঠ কাহিনী
হযরত মুসা(আঃ) এর জন্ম বংশ ও পরিচয়-৬ষ্ঠ পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন