হযরত ইউসুফ (আঃ) এর সৎ ভাইদের যুদ্ধ-১ম পর্ব
হযরত ইউসুফ (আঃ)-এর সৎ ভাইয়েরা সপ্তাহ কাল মহা আড়ম্বরে কাটানোর পরে দেশে ফেরার আবেদন করলেন। হযরত ইউসুফ (আঃ) তাঁদের উট বোঝাই করে খাদ্য-শস্য দেবার আদেশ দিলেন এবং তাঁদের ফেরত বিনিময় সামগ্রী, কম্বলগুলো রেখে দিলেন। হযরত ইউসুফ (আঃ) একজন রাজ কর্মচারীকে বলে দিলেন বেনিয়ামিনের উটের পৃষ্টে যে মাল দেয়া হবে তাঁর মধ্যে রাজমহলের একটি পানপাত্র যেন গোপনে রেখে দেয়।
কর্মচারী প্রধানমন্ত্রীর আদেশ অনুসারে কাজ করলেন। অতঃপর তাঁরা বনিইয়ামিনকে নিয়ে নিজ দেশের উদ্দেশ্যে রওয়ানা করল। অল্প সময় পরে একদল অশ্বারোহী সৈন্য নিয়ে এগার ভাইয়ের কাফেলাকে ঘিরে ফেলল এবং বলল তোমরা রাজ দরবারের পানপাত্র চুরি করে এনেছ। অতএব তোমরা বন্দী। তোমরা সকলে রাজ দরবারে ফিয়ে চল। তোমাদিগকে তল্লাশি করতে হবে।
ভাইয়েরা রাজ কর্মচারীর কথা শুনে অবাক হল এবং বাধ্য হয়ে তাঁরা রাজ দরবারে ফিরে এল। তখন তাঁদের মালপাত্র তল্লাশি আরম্ভ হল। তৃতীয় নম্বরে যখন বেনিয়ামিনের মাল তল্লাশি শুরু হল তখন তাঁর মালের মধ্যে রাজ দরবারের পানপাত্রটি পাওয়া গেল। রাজ দরবারে এ খবর পৌঁছান হল। তখন দরবার থেকে হুকুম হল, যার মালের মধ্যে পানপাত্রটি পাওয়া গেছে, তাঁকে বন্দী হিসাবে দরবারে থেকে যেতে হবে। এটাই বিধান সঙ্গত আইন। এ আইনের ব্যতিক্রম কোনমতে সম্ভব নয়। অতএব বেনিয়ামিনকে চুরির দায়ের রাজবন্দী হিসেবে মিশর থেকে যেতে হবে। বাকী ভাইয়েরা তাঁদের মালামাল নিয়ে দেশে ফিরে যেতে পারে।
এ কথা শুনার পরে ভাইদের মধ্যে ভীষণ চঞ্চলতার সৃষ্টি হল। তাঁরা বনিয়ামিন কে ছেড়ে কেউ দেশে যেতে রাজি হল না। কারণ পিতার নিকট এবার তাঁরা কি বলে রেহাই পাবে? তাঁরা এ ব্যাপারে রাজ দরবারে অনেক আবেদন নিবেদন করে ব্যর্থ হল। সর্বশেষে তাঁরা মিশর সৈন্যদের সাথে যুদ্ধে লিপ্ত হবার কর্মসূচী গ্রহণ করল। হযরত ইউসুফ (আঃ)-এর নিকট এ খবর পৌঁছালে তিনি সেনাবাহিনীকে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হওয়ার আদেশ দিলেন। যেখানে হযরত ইউসুফ (আঃ) ভাইয়েরা অবস্থান নিয়েছিল, তাঁর কাছাকাছি গিয়ে সৈন্য দল অবস্থান নিল।
হযরত ইউসুফ (আঃ)-এর ভাইয়েরা ছিল মহাপরাক্রমশালী ও বড় যোদ্ধা। তাই তাঁরা হাজার সৈন্য বহরকে থোড়াই পরোয়া করলনা। একজনে বলল, আমি একাই মিশর বিজয়ের জন্য যথেষ্ট। আর একজনে বলল, শুধু পাথর নিক্ষেপ করেই সৈন্য দলকে পরাস্ত করা যাবে। এই বলে তাঁরা যুদ্ধ আরম্ভ করে দিল। মিশর সৈন্যরা বড় বড় অস্ত্র নিয়ে সম্মুখে অগ্রসর হল। আর ওরা শুধু পাঁচ মনে ওজনের ভারী পাথর উত্তোলন করে ওদের প্রতি নিক্ষেপ করতে আরম্ভ করে। এতে সৈন্যদের প্রথম দল জীবন নিয়ে পালিয়ে গেল। দ্বিতীয় দল সম্মুখে এলে তারাও ক্ষত-বিক্ষত হয়ে পালিয়ে যাওয়ার উপক্রম হল। এমন সময় হযরত ইউসুফ (আঃ) হযরত ইব্রাহীম (আঃ)-এর পাগড়ী নিয়ে উপস্থিত হন। যখন ভাইয়ের এই পাগড়ী দেখল তখন তাঁদের শরীর শিথিল হয়ে এল। পাথর উত্তোলনের ক্ষমতা আর তাঁদের থাকল না। তখন মিশর সৈন্যরা সম্মুখে এগিয়ে তাঁদের সকলকে বন্দী করল।
অনতিবিলম্বে বন্দীদের জেলখানায় স্থানান্তরিত করা হল। যদিও তাঁরা যুদ্ধ বন্দী কিন্তু তাঁদের প্রতি আচারণ করা হচ্ছিল বিশিষ্ট মেহমানের ন্যায়। এ নিয়ে ভাইদের মধ্যে অনেক কথা আলোচনা হল। রহস্য ঘেরা ব্যাপারটির কোন সঠিক কারণ খুঁজে কেউ বের করতে পারল না। কেউ বলল, আজিজ মেছের নিজেই ইউসুফ হবে। নাম বদলিয়ে মন্ত্রীর কাজ চালাচ্ছে। কেউ বলল, কিছুটা ইউসুফের ন্যায় মনে হয়। কেউ বলল, ইউসুফ যদি না হয় তবে আমাদেরকে এত সমাদর করবে কেন এবং কেনই বা আমাদের পারিবারিক খোঁজ খবর পুঙ্খানুপুঙ্খ রূপে নিল। আবার কেউ বলল, যদি ইউসুফ হত তাহলে আমাদেরকে আদরের বদলে মৃত্যুদণ্ড দিত এরূপ নান রকম আলোচনা করে তাঁরা দিন কাটাতে লাগল।
সূত্রঃ আল কোরআনের শ্রেষ্ঠ কাহিনী
হযরত ইউসুফ (আঃ) এর সৎ ভাইদের যুদ্ধ-২য় পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন