হযরত ইউনুস (আঃ)-এর বংশ পরিচয় ও নবুয়তী-২য় পর্ব
হযরত ইউনুস (আঃ)-এর বংশ পরিচয় ও নবুয়তী-১ম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন
তখন ধর্মদ্রোহীদের মধ্যে কতকে নবীর প্রতি দুর্ব্যবহারের কথা মনে করল। তারা কতক নবীর সন্ধানে এদিক-ওদিক ছুটল। অনেক খোঁজ করার পরে তারা নবীর সাক্ষাৎ পেল। তখন উপস্থিত যারা ছিল তারা নবীর প্রতি ঈমান আনল এবং বাকি রোগাক্রান্তদের জন্য দোয়া প্রার্থনা করল। নবী বললেন, যারা আমার দাওয়াত কবুল করে ঈমান আনবে তাঁদের জন্য আমি দোয়া করব। তখন তারা নবীকে নিজ এলাকায় নিয়ে গেল এবং রোগাক্রান্ত ব্যাক্তিদের নিকট নিয়ে তাঁদেরকে ঈমানের অঙ্গিকারে বাধ্য করল।
তখন যারা কলেমা পাঠ করে ঈমান আনল তারা রোগমুক্ত হল। এ অবস্থা দেখে রোগাক্ক্রান্ত এলাকায় নবীকে নিয়ে টানাটানি আরম্ভ হল। নবী আল্লাহ্ তা’য়ালার প্রদত্ত আজাব প্রেরণে অত্যন্ত খুশী হলেন এবং দিবারাত্র ঘুরে ঘুরে এলাকায় মানুষদিগকে কলেমার তালীম দিতেন। এ সময় ঊক্ত এলাকায় বহু সংখ্যক মানুষ নবীর দাওয়াত কবুল করে মুসলমান হয়ে যায়। অবশ্য শেষ পর্যন্ত গুটিকয়েক লোক ব্যতীত আর সকলে পুনরায় ধর্মদ্রোহীদের দলভুক্ত হয়ে যায়। এভাবে নবী চল্লিশ বছর যাবৎ দ্বীনের দাওয়াত দিয়ে মাত্র হাতে গোনা কয়েকটি লোক ব্যতীত অন্য মানুষকে হেদায়েত করতে সক্ষম হন না।
নিনোয়া এলাকায় যুবক ও কর্মঠ লোকের সংখ্যা ছিল এক লক্ষ। শিশু ও বৃদ্ধদের সংখ্যা ছিল আরো পঁচিশ হাজার। মোট লোকসংখ্যা ছিল সোয়ালক্ষ।
নবী চল্লিশ বছর হেদায়েতের জীবনে মাত্র কয়েকশ মানুষকে মুসলমান বনাতে সক্ষম হয়েছিলেন। বাকি সমস্ত মানুষ কাফের ও মূর্তি পূজার অন্তর্ভূক্ত ছিল।
নবী জীবনের অধিকাংশ সময় হেদায়েতের কাজ করে যখন সন্তোষ্ঠজনক কোন ফল লাভ করতে সক্ষম হলেন না, তখন তিনি ক্ষোভে বিহ্বল হয়ে পড়লেন। দিবারাত্র খুব চিন্তামগ্ন অবস্থায় কাটাতে আরম্ভ করলেন। অতৃপ্তির ক্লান্তিতে তাঁর মন বিষিয়ে উঠল।
একদা তিনি আল্লাহ্ হুকুম ছাড়াই শহর ছেড়ে অন্যত্র চলে যাবার সিদ্ধান্ত নিলেন। দুই পুত্র ও স্ত্রীকে নিয়ে রওয়ানা করলেন। কিছুদুর অগ্রসর হওয়ার পরে পথে একটি ছোট নদী পড়ল। নদীতে পানি খুব কম ছিল। নবী এ অবস্থায় বড় ছেলেটিকে নদীর তীরে দাঁড় করিয়ে রেখে ছোট ছেলেকে কাঁধে নিলেন এবং স্ত্রীকে ধরে নদীর পানিতে নামলেন, এমন সময় স্রোতের একটা বড় ঝাপটা এসে কাঁধের ছেলেটিকে ছিটকে ফেলে দিল এবং স্ত্রীকে হাত থেকে ফসকে নিল। নবী হঠাৎ বিপদে খুবই বিচলিত হলেন এবং অনেকক্ষণ যাবত স্ত্রী ও পুত্রকে চর্তূদিকে খোঁজ করলেন। কিন্তু বহু খোঁজ করেও তাঁদের কোন হদিস পেলেন না। অবশেষে নিরাশ হয়ে নদীর তীরে এসে দেখলেন, নদীর তীরে দাঁড় করানো ছেলেটিকে বাঘে নিয়ে গেছে। তখন তিনি আল্লাহ্ তা’য়ালার আদেশ অমান্যের পরিণাম সম্বন্ধে সচেতন হলেন।
তিনি নিজের অন্যায় কাজের জন্য আল্লাহ্র দরবারে ক্ষমা প্রার্থনা করে পুনরায় নিনোয়া শহরে ফিরে এলেন। সেখানে পৌঁছে তিনি হেদায়েতের কাজে খুব জোর দিলেন। কিন্তু মানুষ তাঁর কথায় তেমন অনুপ্রাণিত হল না। তারা বরং নবীকে আরো বিদ্রূপ করে ও তাঁর স্ত্রী-পুত্র হারানোর কথা বলে জব্দ করার চেষ্টা করল।
সূত্রঃ কুরআনের শ্রেষ্ঠ কাহিনী
হযরত ইউনুস (আঃ)-এর বংশ পরিচয় ও নবুয়তী-তৃতীয় পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন