জুল করনাইন ও ইয়াজুজ মাজুজ-২য় পর্ব
জুল করনাইন ও ইয়াজুজ মাজুজ-১ম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন
আল্লাহ তায়ালা রাসূল (সাঃ) আরজের জবাবে প্রথমেই জানলেন হে নবী! আপনি ইনশাল্লাহ না বলে কাফেরদের নিকট জবাব দেবার অঙ্গীকার করেছেন। এটা আপনার বড় ভুল হয়েছে। যে জন্য আপনি এগার দিন যাবত আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে কোন জবাব পান নি। আগামীতে যেন এ রকম ঘটনা না ঘটে। অতঃপর আল্লাহ তায়ালা রাসূল (সাঃ)-কে বললেন, হে রাসুল! কাফেরকুল আপনার নিকট যে প্রশ্ন করেছে তা তারা জানার জন্য করে নাই বরং আপনাকে জব্দ করার উদ্দেশে করেছে। আপনি তাদের সঠিক জবাব দিলেও তারা ইমান আনবে না।
তবুও আপনার শ্রেষ্ঠত্ব বজার রাখার জন্য আপনি তাদেরকে জবাব দিয়ে দিন। তারা রুহ সম্পর্কে প্রশ্ন করেছে আপনি বলে দিন রুহ শুধুমাত্র আল্লাহ তায়ালার একটি আদেশ মাত্র। উহা দেখা, স্পর্শ করা বা অনুভব করার জিনিস নয়। জুলকরনাইন সম্বন্ধে আমি আপনাকে বিস্তারিত অবগত করছি। আপনি তাদেরকে এ কথাগুলো জানিয়ে দিন। অতঃপর কোরআন পাকে জুলকরনাইনের বিস্তারিত বিবরণ প্রদান করা হয়।
সেকান্দার জুলকরনাইন নবী ছিলেন, না বাদশা ছিলেন তা নিয়ে মত বিরোধ আছে। তবে অধিকাংশ তাফসীরকারদের মতে তিনি নবী ও ছিলেন বাদশাও ছিলেন বলে উল্লেখ রয়েছে। তিনি যেমন উঁচু মানের নবী ছিলেন তেমনি সমগ্র পৃথিবীর বাদশা ছিলেন। তিনি আল্লাহ তায়ালার আদেশক্রমে পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্ত পর্যন্ত সফর করেন এবং মানুষকে হেদায়েত করেন।
এক সময় তিনি আল্লাহ তায়ালার আদেশে পৃথিবীর পশ্চিম প্রান্তে গিয়ে উপস্থিত হন। সেখানে তিনি আজব আজব দৃশ্য অবলোকন করেন। সুর্যকে তিনি সমুদ্রের ঘোলাটে পানির মধ্যে অস্ত যেতে দেখেন। সেখানে এক জাতের মানুষের সাথে তাঁর দেখা হয়। তাদের মাঝে তিনি দ্বীনের দাওয়াত পেশ করেন। কতক লোক অতি সহজে নবীর প্রতি ইমান আনল এবং শরীয়ত শিক্ষার জন্য উদগ্রীব হল। নবী তাদেরকে আদর স্নেহ করে দ্বীনের তালীম দেন। আর একদল লোক নবীর বিরোধীতা করে তাঁর সঙ্গে যুদ্ধে প্রবৃত্ত হওয়ার জন্য প্রস্তুত হল।
নবী তাঁর সৈন্য সামন্ত নিয়ে তাদেরকে চরম্ভাবে শিক্ষা দিলেন। অনেক বিদ্রোহীকে কতল করলেন। অতঃপর সেখান থেকে কিছু উত্তর দিকে অগ্রসর হয়ে দেখলেন এক বিশাল লোহার প্রাচীর ঘেরা একটি এলাকা। দেয়ালের মধ্যে প্রবেশ করার জন্য তিনি চতুর্দিকে সৈন্যদের নিয়ে ঘুরলেন। কিন্তু কোথাও কোন দরজা পেলেন না। অবশেষে তিনি একটি লোককে দেয়ালের উপর দিয়ে ভিতরে প্রবেশ করালেন। কথা ছিল লোকটি ফিরে এসে ভিতরের খবর জানাবে। কিন্তু দীর্ঘ সময় অতিবাহিত হল লোকটি আর ফিয়ে এল না। তখন আর একটি লোকটি দেয়ালের উপরে তুলে দেয়া হল। সে যেন ওখানের দৃশ্য দেখে খবর দেয়। কিন্তু এ লোকটি দেয়ালের উপর থেকে অদৃশ্য হয়ে গেল। সে আর ফিরে এল না।
তখন জুলকরনাইন ভাবলেন সেখানে কোন গজবী জাতির অস্তিত্ব বিরাজমান রয়েছে। তাই তিনি আর সম্মুখে অভিযান না চালিয়ে পৃথিবীর পূর্ব প্রান্তের দিকে যাত্রা করলেন। পথিমধ্যে তিনি বহু নতুন নতুন প্রাণী ও আশ্চার্যজনক দৃশ্যবলী অবলোকন করেন। এক নদীর তীরে গিয়ে তিনি দেখলেন নদীতে এক জাতের মানুষ বসবাস করছে যাদের সম্মুখ অর্ধেক মানুষের ন্যায় এবং পিছনের সাথে মেলামেশা করে না। জুলকরনাইন তার সৈন্যদের হুকুম দিয়ে দুজন অর্ধমৎস্য মানুষকে ধরে এনে পরীক্ষা করে দেখলেন । তারা প্রকৃত পক্ষে মানুষের কোন গুণাবলীর অধিকারী নয়। তারা এক প্রকার মৎসজাত প্রাণী। তিনি আরো সম্মুখ দিকে অগ্রসর হয়ে দেখলেন এক জাতের মানুষ পশুর ন্যায় চার পায়ে হাটে এবং তারা পাল বেঁধে জঙ্গলে বসবাস করে।
তিনি তাদের একজনকে ধরে এনে পরীক্ষা করে দেখলেন, ওদের আকৃতি মানুষের ন্যায় বটে কিন্তু কোন বুদ্ধি জ্ঞান তাদের নেই। বিশেষ করে এরা নবীর সৈন্যদেরকে দেখে গুহায় জঙ্গলে পলায়ন করতে ব্যস্ত হন। তখন নবী আর সেখানে বিলম্ব না করে সম্মুখে অগ্রসর হলেন। কিছুদূর গিয়ে তিনি দেখলেন একটি সুন্দর শহর। সেখানের মানুষ জ্ঞান-বিজ্ঞানে খুবই উন্নত। তখন তিনি তাদেরকে কালেমার দাওয়াত দিলেন। তাদের ভাষা বুঝা কঠিন ছিল। তাই ইঙ্গিতে এক আল্লাহর অস্তিত্বের উপর বিশ্বাস স্থাপনের দাওয়াত দিলেন। তারা বুদ্ধিমান জাত ছিল। তাই তারা নবীর দাওয়াত কবুল করল এবং তাঁকে যথেষ্ট সম্মান শ্রদ্ধা করল। নবী তাদের ব্যবহারে খুব খুশী হলেন এবং দীর্ঘ দিন তাদের মাঝে থেকে তাদের ভাষা শিক্ষা করলেন। অতঃপর তাদেরকে মুসলমান বানিয়ে নিলেন। সে শহরে একটি লোকও নবীর সামান্য বিরোধীতা করে নাই। এক বাক্যে দ্বীন কবুল করে নবীর খাছ উম্মতের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যায়। জুলকরনাইনের হেদায়েত করতে পারেন নি। যখন সেখানে আর একটি লোকও ঈমান গ্রহণে বাকী ছিল না তখন নবী সেখান থেকে পূর্ব দিকে যাত্রা করেন।
সূত্রঃ কুরআনের শ্রেষ্ঠ কাহিনী