এক বৃদ্ধা বুজুর্গের উপদেশ
হযরত জুন্নুন মিশরী (রঃ) বলেন, একদা গভীর রাতে আমি কোথাও যাচ্ছিলাম হঠাৎ শুনতে পেলাম কে যেন তেলাওয়াত করছে-
وَبَدَا لَهُم مِّنَ اللَّهِ مَا لَمْ يَكُونُوا يَحْتَسِبُونَ
অর্থাৎঃ আর আল্লাহ্র তরফ হতে তাদের সামনে এমন ব্যপার উপস্থিত হবে, যার ধারণাও তাদের ছিল না। (সূরা যুমারঃ ৪৭)
আমি কোরআন তেলাওয়াতের শব্দ লক্ষ্য করে নিকটে গিয়ে দেখলাম, পশমী জুব্বাহ ও পশমী বোরকা পরিহিতা এক বৃদ্ধা মহিলা ঐ আয়াত তেলাওয়াত করছে। তার এক হাতে একটি লাঠি এবং অপর হাতে ছিল একটি বদনা। সেই গভীর রাতের নির্জন পথে আমাকে দেখে তার মনে কোন প্রকার ভয়ভীতি বা ভাবান্তর ঘটনা না। আমাকে দেখামাত্র কোন প্রকার ভূমিকা ছাড়াই সে বলল, তুমি কে? আমি বললাম, আমি একজন মুসাফির! সে বলল, হে আল্লাহ্র বান্দা! আল্লাহ্ পাক সর্বদা তোমার সাথে আছেন, তিনি দুর্বলদের সাহায্য করে থাকেন। সুতরাং তুমি মুসাফির হলে কেমন করে?
হযরত জুন্নুন মিশরী (রঃ) বলেন, তার কথা শুনে আমার চোখে পানি এসে গেল। মহিলা নসীহত করল, তুমি কাঁদছ কেন? আমি বললাম, তোমার কথা শুনে আমার অন্তরে জখম বৃদ্ধি পেয়েছে। এবার সে বলল, আল্লাহ্ তোমার উপর রহম করুন, তুমি যদি সত্যবাদী হও, তবে তোমার কান্নার কারণ খুলে বল। আমি বললাম, সত্যবাদীরা কি কখনও কান্না করে না? সে বলল, না। কেননা, কান্না হল মনের সান্তনা। উহা দ্বারা মনের দুঃখ কষ্ট লাঘব হয়ত। আর আল্লাহ্ ওয়ালাদের দৃষ্টিতে এ জাতীয় কান্না দুর্বলতার লক্ষণ।
হযরত জুন্নুন মিশরী (রঃ) বলেন, তার কথা শুনে আমি পেরেশান হয়ে গেলাম। আমার অবস্থা লক্ষ্য করে সে বলল, হে মিসকীন! তুমি কি তোমার আত্মার ব্যধির কথা ভুলে গেছ? আল্লাহ্ পাক তোমার উপর রহম করুণ। অন্তরে আল্লাহ্ পাকের ভালবাসা এবং তার আগ্রহ সৃষ্টি কর। কেননা, একদিন তিনি মোহেব্বীন, সুফিয়ায়ে কেরাম ও আল্লাহ্ ওয়ালাদের সামনে বিকশিত হবেন। তারা আল্লাহ্ পাকের নৈকট্য ও দিদারের অমৃত শুধা পান করবে। অতঃপর আর তাদের কোন কামনা-বাসনা অবশিষ্ট থাকবে না। এ কথা বলে সে আমাকে ত্যাগ করে জঙ্গলের ভেতর অদৃশ্য হয়ে গেল।
হযরত জুন্নুন মিশরী (রঃ) আর এক ঘটনার উল্লেখ করে বলেন, একবার আমি নীল নদের তীরে ঘুরে বেড়াচ্ছিলাম। হটাৎ সেখানে একটি বিচ্ছুর উপর আমার নজর পড়ল। আমি একটি পাথর নিয়ে তাকে আঘাত করতে ইচ্ছা করলাম। বিচ্ছুটি তৎক্ষণাৎ দ্রুত পানির দিকে ছুটে গেল। সাথে সাথে একটি ভাসমান ব্যাঙ তার সামনে এসে উপস্থিত হল। বিচ্ছুটি তার উপর লাফিয়ে উঠতেই সে নদীর অপর প্রান্তের দিকে ছুটে গেল।
হযরত জুন্নুন মিশরী (রঃ) বলেন, ঘটনা দেখে আমার মধ্যে কৌতুহল সৃষ্টি হল। আমিও নদীতে নেমে তাদেরকে অনুসরণ করতে লাগলাম। ব্যাঙটি নদীর অপর প্রান্তে পৌছলে বিচ্ছুটি লাফিয়ে দাঙ্গায় উঠে গেল। সেখানে এক মদখোর মেশায় বিভোর হয়ে মাটিতে পড়েছিল। একটি বিষাক্ত সাপ তাকে দংশন করার প্রস্তুতি নিচ্ছিল। বিচ্ছুটি সাপের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে তাকে পরপর দংশন করল। ফলে চোখের পলকে তার অসাড় দেহটি মাটিতে লুটিয়ে পড়ল। সাথে সাথে বিচ্ছুটিও একদিকে অদৃশ্য হয়ে গেল। আমি এগিয়ে গিয়ে লোকটির গায়ে হাত দিলাম। সে চোখ খোলার পর তাকে ভীত সন্ত্রস্ত মনে হচ্ছিল। আমি তাকে অভয় দিয়ে বললাম, আল্লাহ্ পাক তোমাকে অলৌকিক উপায়ে হেফাজত করেছেন।
অতঃপর আমার নিকট বিস্তারিত ঘটনা শুনে সে কিছুক্ষণ নীচের দিকে মাথা ঝুকিয়ে রাখল। পরে আকাশের দিকে মাথা তুলে বলল, আয় পরওয়ারদিগার! তোমার নাফরমান বান্দাদের উপরই তুমি এত অনুগ্রহ কর, সুতরাং তোমার আদেশকৃত বান্দাদের উপর নিশ্চয়ই আরো অধিক অনুগ্রহ করবে। তোমার ইজ্জত ও জালালের শপথ! ভবিষ্যতে আর কখনো আমি তোমার নাফরমানী করব না। অতঃপর সে দুটি কবিতা পাঠ করল। যার অর্থ হল-
হে ঘুমন্ত ব্যক্তি! আল্লাহ্ তোমাকে ঐ সকল ক্ষতিকর প্রাণী হতে রক্ষা করছেন, যারা রাতের অন্ধকারে বিচরণ করে। তুমি কেমন করে এমন বাদশাহকে ভুলে ঘুমিয়ে থাক, যিনি তোমাকে অফুরন্তু নেয়ামত দান করেন?