আবদুল্লাহ ইব্রাহিম

আবদুল্লাহ ইব্রাহিম ( জন্ম অক্টোবর ১৯৩৪):

আবদুল্লাহ ইব্রাহিম, যিনি পূর্বে ডলার ব্র্যান্ড (Dollar Brand) নামে পরিচিত, একজন দক্ষিণ আফ্রিকান পিয়ানোবাদক এবং সংগীতজ্ঞ। তিনি ৯ অক্টোবর ১৯৩৪ সালে আদলফ জোহানেস ব্র্যান্ড (Adolph Johannes Brand) নামে জন্মগ্রহণ করেন। অপার্টহেইডের সময় ১৯৬০-এর দশকে, ইব্রাহিম নিউ ইয়র্ক সিটিতে চলে যান এবং ১৯৭০-এর দশকে দক্ষিণ আফ্রিকায় একটি সংক্ষিপ্ত প্রত্যাবর্তন ছাড়া, ১৯৯০ সালের শুরুর দিকে নির্বাসনে থাকেন। কয়েক দশক ধরে, তিনি বিশ্বজুড়ে ব্যাপকভাবে সফর করেছেন, বড় মঞ্চে একক শিল্পী হিসেবে বা ম্যাক রোচ, কার্লোস ওয়ার্ড এবং র্যান্ডি ওয়েস্টনের মতো অন্যান্য বিশিষ্ট সংগীতশিল্পীদের সাথে কাজ করেছেন এবং ইউরোপে ক্লাসিক্যাল অর্কেস্ট্রার সাথে সহযোগিতা করেছেন। ইব্রাহিম কেপ টাউনে, দক্ষিণ আফ্রিকায় জন্মগ্রহণ করেন এবং তার নাম ছিল আদলফ জোহানেস ব্র্যান্ড। ১৯৬৮ সালে, ইব্রাহিম সাময়িকভাবে কেপ টাউনে ফিরে আসেন, যেখানে তিনি ওই বছর ইসলাম গ্রহণ করেন এবং এর ফলে তার নাম ডলার ব্র্যান্ড থেকে আবদুল্লাহ ইব্রাহিমে পরিবর্তিত হয়। ১৯৭০ সালে তিনি মক্কায় হজ করেন।

 

ইসলাম গ্রহণ:

ইব্রাহিম ১৯৬৮ সালে ইসলাম গ্রহণ করেন, যখন তিনি কেপ টাউনে ফিরে আসেন। ইসলাম গ্রহণের পর তিনি তার নাম পরিবর্তন করে আবদুল্লাহ ইব্রাহিম রাখেন। ১৯৭০ সালে, তিনি মক্কায় পুণ্যাহজে যান।ইব্রাহিমের ইসলাম গ্রহণের পর, তিনি তার সংগীত কর্মজীবনে নতুন একটি দিক নিয়ে আসেন। তিনি রশিদ ভ্যালির সঙ্গে পরিচিত হন, যিনি তার কিছু অ্যালবাম প্রযোজনা করেন। ১৯৭৪ সালে প্রকাশিত “Underground in Africa” অ্যালবামটি ছিল একটি জ্যাজ, রক এবং দক্ষিণ আফ্রিকার জনপ্রিয় সংগীতের সংমিশ্রণ, যা খুবই সফল হয়।এই সময়ের মধ্যে তিনি “Mannenberg” রচনা করেন, যা দক্ষিণ আফ্রিকার সংস্কৃতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে ওঠে এবং এটি অ্যান্টি-অপার্টহেইড আন্দোলনের থিম টিউন হিসেবে পরিচিত হয়। তার সংগীতের মধ্যে আফ্রিকার জনগণের সংগ্রাম ও বিদ্রোহের চেতনাও প্রকাশ পায়।১৯৮১ সালে, ইব্রাহিম এবং তার স্ত্রী সাথিমা একটি রেকর্ড কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেন, যার নাম “একাپا”। ১৯৮৩ সাল থেকে তিনি “একায়া” নামে একটি গ্রুপ নেতৃত্ব দেন, যা বিভিন্ন ত্রয়ী এবং বিশেষ প্রকল্পগুলোর সংগীত পরিবেশন করে। তার সংগীত এবং ধর্মীয় বিশ্বাস দুইই তাকে একজন প্রভাবশালী শিল্পী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে, এবং তিনি আজও জ্যাজ ও আফ্রিকান সংগীতের মিশ্রণে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছেন।

 

ইসলামিক জীবনে তার অবদান:

আবদুল্লাহ ইব্রাহিমের ইসলামিক জীবনে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে।ইসলাম গ্রহণের পর, ইব্রাহিমের সংগীত এবং সৃষ্টিশীল কাজগুলি তার ধর্মীয় বিশ্বাসের প্রভাব গ্রহণ করেছে। তিনি ইসলামিক থিম ও আধ্যাত্মিক বিষয়বস্তু নিয়ে কাজ করেন, যা তার সংগীতে গভীরতা এবং সংবেদনশীলতা আনে।ইব্রাহিম ইসলামের সঙ্গে জ্যাজের সমন্বয় ঘটিয়েছেন, যা তাকে আফ্রিকান সংস্কৃতির প্রতিনিধিত্বকারী একজন বিশেষ শিল্পী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। তার সৃষ্টিতে ইসলামিক মূল্যবোধ ও নীতিগুলি প্রাধান্য পায়।তার সংগীত, বিশেষ করে “Mannenberg,” দক্ষিণ আফ্রিকার রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং জাতিগত বৈষম্যের বিরুদ্ধে একটি শক্তিশালী বার্তা প্রদান করে। তিনি আফ্রিকান ন্যাশনাল কংগ্রেসের সমর্থক ছিলেন এবং বর্ণবাদী সরকারের বিরুদ্ধে আওয়াজ তোলেন।ইব্রাহিম একজন সফল শিল্পী এবং সংগীতশিল্পী হিসেবে মুসলিম সম্প্রদায়ের জন্য একটি উদাহরণ হয়ে উঠেছেন। তার জীবন ও কাজগুলি মুসলিম যুবকদের জন্য অনুপ্রেরণা সরবরাহ করে।মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে তার কর্মজীবনে, তিনি ইসলাম সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে এবং সংখ্যালঘু মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে ঐক্য গড়ে তুলতে কাজ করেছেন।তিনি বিভিন্ন শিল্পীদের সাথে কাজ করে এবং তরুণ সংগীতশিল্পীদের প্রশিক্ষণ দিয়ে ইসলামি মূল্যবোধের উপর ভিত্তি করে একটি নতুন প্রজন্মের শিল্পী তৈরি করতে সহায়তা করেছেন।এভাবে, আবদুল্লাহ ইব্রাহিম তার সংগীত এবং ব্যক্তিগত জীবনের মাধ্যমে ইসলামিক জীবনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন।

 

আবদুল্লাহ ইব্রাহিম এখনও জীবিত আছেন এবং তার সংগীত জীবন ও কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। তিনি বিশ্বব্যাপী একটি প্রতিভাবান পিয়ানোশিল্পী এবং সংগীতজ্ঞ হিসেবে পরিচিত। তার কাজ এবং সংগীতের মাধ্যমে তিনি প্রভাব ফেলছেন এবং তিনি এখনও সংগীতাঙ্গনে সক্রিয় রয়েছেন।

You may also like...

দুঃখিত, কপি করবেন না।