সাদেক আলী
মুন্সি মোহাম্মদ সাদেক আলী :
মোহাম্মদ সাদেক আলী,যিনি জন্মগ্রহণ করেছিলেন শ্রী গৌর কিশোর সেন , তিনি উনবিংশ শতাব্দীর বাংলার একজন বিশিষ্ট বাঙালি মুসলিম লেখক, কবি এবং জেলা জজ ছিলেন। তাকে সিলেটি নাগরি লিপিতে লেখালেখি করা সবচেয়ে বিখ্যাত লেখক হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তার শ্রেষ্ঠ কীর্তি “হালাত-উন-নবি” (নবীর অবস্থা), যা সিলেট অঞ্চলে অত্যন্ত জনপ্রিয়তা লাভ করে এবং পরবর্তীতে বাংলা লিপিতে প্রতিলিপি করা হয়।শ্রী গৌর কিশোর সেন প্রায় ১৮০০ সালের আশেপাশে একটি বাঙালি বৈদ্য পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন।১৮১৮ সালের আগস্টে, তিনি মৌলভি মোহাম্মদ ইয়াসিফের দ্বারা ইসলামের মৌলিক শিক্ষা গ্রহণ করেন। সেন আরবি এবং ফারসি ভাষার প্রতি আগ্রহী হয়ে ওঠেন, তাই তিনি হিংগাজিয়া থানার এক গোয়েন্দা মীর মুন্সি আবুল ফজলের কাছে অধ্যয়ন করেন।তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে ইসলাম গ্রহণ করেন এবং নিজের নাম পরিবর্তন করে সাদেক আলী রাখেন। তিনি আরও উল্লেখ করেন যে তিনি হানাফি মাযহাবের অনুসারী ছিলেন।
মুন্সি মোহাম্মদ সাদেক আলীর ইসলামিক জীবন:
মুন্সি মোহাম্মদ সাদেক আলীর ইসলামিক জীবন ছিল তার সাহিত্য ও সমাজের প্রতি অঙ্গীকারের প্রতিফলন।সাদেক আলী তার ইসলামিক জীবনে ধর্মীয় জ্ঞান, নৈতিকতা এবং মানবিকতা নিয়ে কাজ করেছেন, যা তাকে একজন মহান লেখক ও সমাজকর্মী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।
সাদেক আলী মৌলভি মোহাম্মদ ইয়াসিফের কাছ থেকে ইসলামের মৌলিক শিক্ষা গ্রহণ করেন, যা তার ধর্মীয় জীবনের ভিত্তি গড়ে তোলে।তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে ইসলাম গ্রহণ করার পর হানাফি মাযহাবের অনুসারী হন, যা তাকে ইসলামী আইন ও অনুশাসনের প্রতি গভীর জ্ঞান অর্জনে সহায়তা করে।সাদেক আলী ইসলামিক সাহিত্য ও শিক্ষার প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। তার রচনা “হালাত-উন-নবি” ইসলামের শিক্ষা ও নবীর জীবন নিয়ে লেখা হয়, যা সিলেট অঞ্চলে ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করে।তার ইসলামিক জীবন শুধু ধর্মীয় অধ্যয়নেই সীমাবদ্ধ ছিল না; তিনি মুসলিম সমাজের উন্নয়নের জন্যও কাজ করেছেন। তার লেখা এবং কর্মের মাধ্যমে তিনি মুসলিমদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে সহায়তা করেছেন।সাদেক আলীর জীবনে আধ্যাত্মিকতার একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান ছিল। ইসলাম গ্রহণের পর তিনি আল্লাহর প্রতি নিবেদিত ছিলেন এবং তার লেখালেখিতে ধর্মীয় মূল্যবোধ ও নৈতিকতার প্রতিফলন ঘটাতেন।তার জীবনে ইসলামিক প্রতিষ্ঠানগুলির গুরুত্ব ছিল। সাদেক আলী মসজিদ এবং অন্যান্য ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলির উন্নয়নে এবং পরিচালনায় সক্রিয় ছিলেন।
সাদেক আলী মৃত্যুর পর দীর্ঘ সময় পর ১৮৬২ সালে, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়। সিলেট শহরের বন্দর বাজারে একটি অগ্নিকাণ্ড ঘটে, যা ইসলামীয়া প্রেসকে ধ্বংস করে দেয়, যা ছিল বৃহত্তম সিলহেটি নাগরি মুদ্রণকারী প্রেস। তবে, “হালাত-উন-নবি” পুথির বাংলা লিপিতে সংস্করণগুলি উৎপাদন ও প্রচার অব্যাহত ছিল। এই পুথিটি ২০১৪ সালে উত্স প্রকাশন কর্তৃক প্রকাশিত নাগরি গ্রন্থ সংগ্রহে অন্তর্ভুক্ত হয়, যা বিভিন্ন নাগরি পুথির একটি নির্বাচনী সংকলন।