নীল নদে ফেরাউনের মৃত্যু-১ম পর্ব

তখন মিশরে হযরত মুছা (আঃ) এর বংশবলী ও উম্মতের নারি ও শিশু ছাড়া প্রাই ছয় লক্ষ। এদের নিয়ে হযরত মুছা (আঃ) সর্বদা বিব্রত থাকতেন। এদের উপর ফেরাউন কঠিন জুলুম চালিয়ে দিল, যাতে তাদের স্বাভিক জীবন-যাপন অত্যান্ত দুঃসহ হয়ে পড়ে। তখন হযরত মুছা (আঃ) বনি ইসরাইল দের কষ্ট সহ্য করতে পারলেন না। তিনি একদা আল্লাহর দরবারে হাত তুলে দেশ ত্যাগের অনুমতি প্রার্থনা করলেন। আল্লাহ তায়ালা নবীর দোয়া কবুল করলেন এবং তাতে অহি প্রেরন করে বললেন, হে মুছা, তুমি  রাতের অন্ধকারে বনি ইসরাইল দের নিয়ে নীল নদের তীরে চলে যাও। যেন ফেরাউন ও তাদের দলবল তোমাদের টের না পায়। তোমাকে আমি নদী পারাপার এর ব্যবস্থা করে দিব এবং ফেরাউন কে নীল নদে ডুবিয়ে মারব।

হযরত মুছা (আঃ) আল্লাহ তায়ালার অহি পেয়ে  নিশ্চিত হলেন এবং গোপনে বনিইসরাইল মধ্যে থেকে ইমানদার ও বিশ্বস্ত ব্যক্তিবর্গকে দেশ ত্যাগের সঠিক সময় জানিয়ে দিলেন। সকলে আল্লাহর দরবারে শুকরিয়া আদায় করে নিজ নিজ প্রস্তুত গ্রহনে ব্যস্ত হল। হযরত মুছা (আঃ) আর কিছু টা বুদ্ধি খাটিয়ে ফেরাউনকে বোকা বানালেন। হযরত মুছা (আঃ) পরের দিন বনি ইসরাইলদের একটি দল নিয়ে ফেরাউনের দরবারে গেলেন এবং বললেন, এরা সম্পর্ন নিরাশ্রয় হয়ে পড়েছে এদের আপনি কিছু সাহায্য করুন। ফেরাউন এই দৃশ্য দেখে খুবি খুশি হল। কারন বনিইসরাইল এর লোকেরা তার নিকট কোন দিন সাহায্য চাই নি। তাই এবার যখন তারা সাহায্য প্রার্থনা করতে এসেছে তখন তারা ফেরাউনের দলভুক্ত হওয়ার নিয়তেই বোধয় এই পথ ধরেছে। তাই ফেরাউন খুশি হয়ে দানের ভান্ডার খুলে দিয়ে বলল, তোমাদের যা কিছু প্রয়োজন নিয়ে যাও।

 আমি অনেক পূর্বে তোমাদের জন্য জামা-কাপড় খাদ্য, টাকা-পয়সা এ ভান্ডারে জমা করে রেখেছি। তোমরা যদি আরও পূর্বে  আমার নিকট আবেদন করতে তবে আর এ কষ্ট ও নির্যাতনের সম্মুখীন হতে হত না। অতএব তোমাদের প্রয়োজন অনুসারে যা কিছু দরকার নিয়ে যাও। ফেরাউন হামান কে বলল, নির্যাতনের আঘাতে বেসামাল হয়ে মুছা (আঃ) সহ সকলে পথে এসেছে। অতএব এখন থেকে ওদের প্রতি অত্যাচার কমিয়ে দিতে হবে। এমতা অবস্থায় তোমার পক্ষে সম্ভব হলে তাদের সর্বাত্রক সাহায্য কর। হামান বলল, আপনি ঠিক কথা বলেছেন ওরা নিতান্ত দুঃখ অবস্থায় জীবন-যাপন করছে। ঈদের দিনও ভাল ক্ষেতে পারি নি। আমি ওদের সাহায্য করব। হযরত মুছা (আঃ) ফেরাউন ও হামানের নিকট থেকে সাহায্য গ্রহন করে ফিরে আসলেন। যাতে ওরা হযরত মুছা (আঃ) ও বনি ইসরাইলদের প্রতি পাহারাদারির বিষয় টা শিথিল  করে দেয়। এইভাবে দুই দিন পার হওয়ার পরে তৃতীয় রাত্রে হযরত মুছা (আঃ) বনি ইসরাইল দের নিয়ে নীল নদের দিকে অগ্রসর হলেন। অতি গোপনে যথেষ্ঠ নিরবতা পালন করে তারা পথ চলতে থাকেন। সকলের মনে আনন্দের স্রোত বয়ে চলল। পরাধীন জীবনের সমাপ্তি ঘটিয়ে তারা আজ স্বাধীন জীবনের অনুসন্ধানে চলছে। যেখানে থাকবে না অত্যাচারিত নিপীড়ন ও অভাব। তাই সফরের ক্লান্তি তাদের ধরতে পারবে না। মহা আনন্দে তারা নীল নদের তীরে উপস্থিত হলেন।  হযরত হারুন (আঃ) ছিলেন সফরের প্রধান পথ প্রদর্শক। তিনি ছিলেন সফরের সম্মুখে আর পিছনে পিছনে ছিল গোত্রে গোত্রে বিভক্ত বিশাল জনসমুদ্র। হযরত মুছা (আঃ) বনি ইসরাইল সম্প্রদায়ের মহরমের নয় তারিখ রবিবার ভোর বেলা নীল নদের তীরে পৌঁছে সেখানে তাবু খাটিয়ে সেখানে আশ্রয় নিলেন। পানি খাদ্য কিছুর অভাব ছিল না। সকলের মনে ছিল আনন্দের এক মহা উচ্ছ্বলতা। রবিবার দিন ফেরাউন খবর পেল, হযরত মুছা (আঃ) বনি ইসরাইলদের নিয়ে দেশ ত্যাগ করছে।

সূত্রঃ কুরআনের শ্রেষ্ঠ কাহিনী

নীল নদে ফেরাউনের মৃত্যু-২য় পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন  

You may also like...

দুঃখিত, কপি করবেন না।