রিসালাত – পর্ব ২
রিসালাত – পর্ব ১ পড়তে এখানে ক্লিক করুন
এর পরও তারা হযরত ঈসা (আঃ)-এর রিসালাত ও নবুয়তকে মেনে নিতে অস্বীকার করল এবং তার বিরোধিতায় উঠে পড়ে লাগল। তাকে নানাভাবে কষ্ট দিতে লাগল। আল্লাহ হযরত ঈসা (আঃ)-কে বিভিন্ন অলৌকিক নিদর্শন প্রদান করলেন। তন্মধ্যে চারটি নিদর্শন প্রধান। এক, তিনি মৃত্তিকা দিয়ে পাখি তৈরি করে তাতে ফুঁক দেয়ার পর এটা উড়ে যেত। কোরআনের ভাষায়-
أَنِّي قَدْ جِئْتُكُم بِآيَةٍ مِّن رَّبِّكُمْ ۖ أَنِّي أَخْلُقُ لَكُم مِّنَ الطِّينِ كَهَيْئَةِ الطَّيْرِ فَأَنفُخُ فِيهِ فَيَكُونُ طَيْرًا بِإِذْنِ اللَّهِ
অর্থঃ আমি তোমাদের রবের নিকট থেকে নিদর্শন নিয়ে এসেছি। আমি তোমাদের জন্য কাদামাটি হতে পাখির আকৃতির ন্যায় বানিয়ে দিতে পারি। অতঃপর এতে ফুঁক দিব আর তা আল্লাহর অনুমতিতে পাখি হয়ে যাবে। (সূরা আলে ইমরান)
কারো কারো মতে তিনি বাদুড় তৈরি করতেন কেননা, বাদুড়ের ডানাতে পালক নেই। ইহুদীরা যখন তাঁকে পাখি বানিয়ে দিতে বলল তখন তিনি কাদা মাটি দিয়ে একটি বাদুড়ের আকৃতি বানালেন। অনন্তর তাতে ফুঁক দিলেন। তৎক্ষণাৎ তা উড়তে শুরু করল। কথিত আছে যে, মানুষের দৃষ্টি যতদূর পর্যন্ত যায় পাখিটি উড়ে ততদূর পর্যন্ত গিয়েছিল। এরপর মরে মাটিতে পড়ে গিয়েছিল। এর কারণ উল্লেখ করতে গিয়ে অনেকে বলেন যে, আল্লাহর সৃষ্টি ও মানুষের সৃষ্টির মধ্যে ব্যবধান সৃষ্টির জন্যই এমন হয়েছিল।
তিনি জন্মান্ধ ও শ্বেত রোগী ভাল করতে পারতেন। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে-
وَأُبْرِئُ الْأَكْمَهَ وَالْأَبْرَصَ
অর্থঃ আমি জন্মান্ধ ও শ্বেত ভাল করতে পারি।
তিনি এ ধরণের রোগী দেখলে তিনি তার রোগ আরোগ্যের জন্য দোয়া করলে আল্লাহ পাক তাঁকে সুস্থ করে দিতেন। এ সংবাদ চতুর্দিকে ছড়িয়ে পড়লে রোগীরা দলে দলে তার কাছে আসত। এক বর্ণনায় আছে যে, কোন কোন দিন পঞ্চাশ হাজার রোগী পর্যন্ত জড় হয়ে যেত। তারা তার কাছে আসতে পারত না। সংবাদ পেলে তিনি নিজেই সে রোগীর কাছে গমন করতেন। তিনি আল্লাহর অনুমতিতে মৃতব্যক্তিকে জীবিত করতে পারতেন। তিনি বলেন- কোরআনের ভাষায়-
وَأُحْيِي الْمَوْتَىٰ بِإِذْنِ اللَّهِ
অর্থঃ এবং আমি আল্লাহর অনুমতিতে মৃতকে জীবিত করতে পারি। (সূরা আলে ইমরান)
হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত, হযরত ঈসা (আঃ) চারজন মৃতুকে জীবিত করেছিলেন। তন্মধ্যে একজনের নাম ছিল গাযর। গাযর হযরত ঈসা (আঃ)-এর সহযোগীদের একজন ছিলেন। গাযর মারা গেলে তার ভগ্নি হযরত হযরত ঈসা (আঃ)-এর কাছে লোক পাঠাল যে তার ভাই গাযর মৃতুবরণ করেছে। বায়তুল মুকাদ্দাস হতে গাযরের বাড়িতে পৌঁছুলেন। ইতোমধ্যে গাযরকে কবরস্থ করা হয়েছে। তিনি গাযরের বোনকে বলেন, আমাকে তার সমাধিস্থলে নিয়ে চল। গাযরের ভগ্নি হযরত ঈসা (আঃ) ও তাঁর সাথীদেরকে নিয়ে গাযরের সমাধিস্থলে নিয়ে গেল। হযরত ঈসা (আঃ) তার সমাধির পাশে দাঁড়িয়ে আল্লাহর কাছে দোয়া করবেন। আল্লাহ তাঁকে জীবন্ত করে দিলেন। গাযর কবর হতে বের হয়ে আসল। অতঃপর সে বহুদিন জীবিত ছিল এমন কি সে সন্তানের জনকও হয়েছিল।
দ্বিতীয় যে ব্যক্তিকে জীবিত করেছিলেন সে ছিল এক বৃদ্ধার পুত্র। তাফসীর গ্রন্থে তার নাম উল্লেখ না করে বৃদ্ধার পুত্র বলেছে। তাঁর মৃত্যুর পর তাকে খাটে রাখা হয়েছিল। লোকজন তার খাট বহন করে কবরের দিকে চলছিল। হযরত ঈসা (আঃ) এ পথ দিয়ে যাচ্ছিলেন। তিনি মৃতব্যক্তির জন্য দোয়া করলেন। আল্লাহর ইচ্ছায় সে জীবন ফিরে পেল। বৃদ্ধার পুত্র কাফন পরিহিত অবস্থায় উঠে খাটে বসে পড়ল। অতঃপর মাটিতে রাখা হল। বৃদ্ধার পুত্র কাফনের ভিতর হতে বের হয়ে আসল
এ কাপড় পরিধান করে স্বীয় পরিবার পরিজনের কাছে প্রত্যাবর্তন করল। অতঃপর সে বহুদিন পর্যন্ত জীবিত ছিল। এমনকি তার সন্তানাদিও হয়েছিল।