হযরত ইলইয়াস (আঃ) পর্ব ৪
পরিশেষে হযরত ইলইয়াস (আঃ) ইয়াহুদার রাজাকে বলেন, তোমরা আমার আহবানে সাড়া বা’ল দেবতার পূজা ত্যাগ করে এক আল্লাহর উপর ঈমান না আনলে তোমাদের উপর আযাব ও গজব অবতীর্ণ হবে। যাতে তোমরা সবাই ধ্বংস হয়ে যাবে হযরত ইলইয়াস (আঃ)-এর চরম সাবধান বাণী উচ্চারণ সত্ত্বেও ইয়াহুদা রাজা তৎপ্রতি কর্ণপাত করেনি অবশেষে আল্লাহর আযাব ও গজব নিপাত হয়ে এদেরকে ধরাপৃষ্ট থেকে নির্মুল করে দেয়।
রাজা ও তার লোকদের ধ্বংস হবার পর হযরত ইলইয়াস (আঃ) পুনরায় সামাররায় প্রত্যাবর্তন করে সেখানকার প্রতিমা পূজক রাজা আখিয়াব ও তার অনুসারীদেরকে আল্লাহর দ্বীনের দিকে আহবান জানাতে থাকেন। কিন্তু তার আহবান সত্ত্বেও হতভাগাদেরকে প্রতিমা পূজা থেকে ফিরিয়ে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস স্থাপনে রাজি করানো যায়নি। তারা আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস স্থাপনের বদলে তারা হযরত ইলইয়াস (আঃ)-এর প্রতি শত্রুতা পোষণ করতে শুরু করে। অবশেষে আল্লাহ তায়ালা এ জ্ঞানান্ধ পাপচারীদের শাস্তি প্রদানের সিদ্ধান্ত নেন। রোগ শোক আর উপর্যুপরি বহিঃশত্রুর আক্রমণে এ পাপচারী মানবগোষ্ঠী ধরাপৃষ্ট থেকে নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়। এরপর আল্লাহ তার প্রিয় নবী হযরত ইলইয়াস (আঃ)-কে নিজের কাছে তুলে নেন।
অন্য এক সূত্রে বর্ণিত আছে, হযরত ইলইয়াস (আঃ) বা’ল দেব প্রতিমার উপাসনা ত্যাগ করে এক আল্লাহর প্রতি ঈমান আনা ও তাঁর ইবাদতের দিকে আহবান করলে তথাকার শাসক এক আল্লাহর প্রতি ঈমান আনে, কিন্তু অল্প কিছু দিন পরেই এই দুর্ভাগা পথভ্রষ্ট হয়ে আবার বা’ল দেব প্রতিমার উপাসনা শুরু করে। রাজার অনুসারী হয়ে সর্বসাধারণ মানুষও পুনরায় প্রতিমা পূজার প্রতি লিপ্ত হয়ে পড়ে। হযরত ইলইয়াস (আঃ) তাদের মূর্খতায় অসন্তুষ্ট হয়ে বদদোয়া করেন। তাঁর বদদোয়ার ফলে তিন বছর পর্যন্ত বৃষ্টিপাত বন্ধ থাকে। দীর্ঘ খাবার ফলে শস্য উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। দেশব্যপী দুর্ভিক্ষ ছড়িয়ে পড়ে এ দুর্ভিক্ষের ফলে মানুষ এমনকি অবলা পশুগুলো পর্যন্ত মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়তে শুরু করে। এভাবে সমগ্র দেশ জীবশূন্য হয়ে পড়ার উপক্রম হয়। এ অবস্থায় ঈমান না এনে উল্টো মানুষ বলাবলি করতে লাগল, নবী হযরত ইলইয়াস (আঃ)-এর কারণেই আমাদের এ দুর্দশা। সুতরাং তাকে যেখানেই পাও হত্যা কর।
অথচ এ অবস্থায় এ দুর্ভাগাদের উচিত ছিল প্রতিমা উপাসনা পরিত্যাগ করে আল্লাহর উপর ঈমান আনা, কৃত অপরাধের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে নিজেদেরকে আল্লাহর ইবাদতে নিয়োজিত করা।
সহজ পথে না এসে তারা বাঁকা অবলম্বন করে এবং নবী হযরত ইলইয়াস (আঃ)-কে হত্যার সুযোগ অনুসন্ধান করতে থাকে। পরিস্থিতির ভয়াবহতা দেখে তিনি এক বৃদ্ধার গৃহে আত্মগোপন করেন। এ বৃদ্ধা ছিল তাঁর ভক্তদের একজন। আলইয়াসা নামে বৃদ্ধার এক পুত্র সন্তান ছিল। বৃদ্ধা স্বীয় পুত্রকে হযরত ইলইয়াস (আঃ)-এর সেবা পরিচর্যায় নিয়োগ করেন। কোন কোন ঐতিহাসিকের মতে আলইয়াসা (আঃ) হযরত ইলইয়াস (আঃ)-এর চাচাত ভাই। হযরত আলইয়াসা (আঃ) তাঁকে নিয়ে শহর থেকে শহরে পালিয়ে বেড়াতে থাকেন। এভাবে তিন বছর অতিক্রান্ত হয়। একদিন হযরত ইলইয়াস (আঃ) দুর্ভিক্ষক্রান্ত মানবগোষ্ঠীর শাসকের দরবারে উপস্থিত হয়ে বলেন, একাধারে তিন বছর পর্যন্ত তোমরা দুর্ভিক্ষের কবলে পতিত হয়ে অকথ্য দুঃখ-কষ্ট ভোগ করছ। অতএব এ অবস্থা নিরসনের জন্য তোমাদের উচিত তোমাদের উপস্থিত দেবতার কাছে মিনতি জানানো। তোমাদের উপাস্য দেবমূর্তি যদি অনাবৃষ্টি আর দুর্ভিক্ষের অবসান ঘটাতে না পারে তবে তোমাদের উচিত হবে আসমান যমীনের স্রষ্টা পালনকর্তা মহান আল্লাহর প্রতি ঈমান স্থাপন করে তাঁর কাছে এ দুর্দশার অবসানের জন্য আবেদন জানান।