ফেরাউনের পরাজয়ের পর – পর্ব ৬
ফেরাউনের পরাজয়ের পর – পর্ব ৫ পড়তে এখানে ক্লিক করুন
পুনরায় আল্লাহ্ তাদেরকে একমাসের সময় দিলেন। কিন্তু তাদের অবস্থান কোন পরিবর্তন আসল না। তাই তাদের ওপর পুনরায় আল্লাহ্ আযাব নাযিল করলেন। এবার পাঠালেন উকুন ও ঘুন। উকুনে ফেরাউন সম্প্রদায়ের লোকদের মাথায় কেশ এবং পোশাক পরিচ্ছদ পরিপূর্ণ হয়ে গেল। যেন উকুনের ঢল নেমেছে। উকুনের কামড়ে তারা অতিষ্ট হয়ে উঠল অধিকাংশ নর নারী পাগলের ন্যায় হয়ে পড়ল। অন্য দিকে তাদের গুদামজাত খাদ্যশস্যও মারাত্নক অবস্থায় পৌচ্ছে গেল!। প্রতিটি শস্য কনাতে ঘুনে ধরেছে। শস্য কনার অবস্থা এমন হয়েছে যে দেখলে মনে হয় সম্পুর্ণ নিরাপদ রয়েছে। কিন্তু যখন পিষতে নেয়া হয় তখন দেখা যায় যে, যতগুলো শস্যকনা পিষলে পূর্বে দশসের আটা বের হত এখন ততগুলো শস্য কনা হতে মাত্র তিন সের আটা হয়। খাদ্যাভাবের রব পড়ে গিয়েছে। আগামী দিনগুলো চিন্তায় তারা অস্থির হয়ে পড়েছে। উকুন যে কেবল তাদের মাথায় চূলই খেয়েছে তাই নয় বরং তাদের চোখের ভ্রু পর্যন্ত খেয়ে ফেলেছে।
সারা সম্প্রদায় হাহাকার ও হায়! হায়! রব পড়ে গেল। পুনরায় তারা হযরত মূসা (আ)-এর কাছে গমন করে অনুনয় বিনয় সহকারে পুনরায় বলল আপনি আমাদের জন্য আবার দোয়া করুন। এবার আমরা অবশ্যই প্রতিশ্রুতি রক্ষা করব। এর পূর্বে আমরা যে কয়েকবার ওয়াদা ভঙ্গ করেছি-আমাদের তা মনে আছে। সুতরাং এবার সামান্য ও ব্যাতিক্রম করব না। হযরত মূসা (আ) তাদের কথা দয়াপরবশ হয়ে আল্লাহ্ পাকের কাছে দোয়া করলেন। তার দোয়ার বরকতে আরোপিত আযাব দূর হয়ে গেল। কিন্তু পুনরায় তারা আযাব তোকে মুক্তি পাওয়ার পর মূসা (আ)-এর সাথে কৃত সকল ওয়াদা অস্বীকার করে পুরাতন আভ্যাস মত হটধর্মিতায় লিপ্ত হয়ে পড়ল।
এতদ্বসত্বেও আল্লাহ্ একমাস পর্যন্ত তাদেরকে নিরাপদে থাকার সুযোগ দিলেন। এতদীর্ঘ সময়েও যখন তারা নিজেদের পূর্ব প্রতিশ্রুতি পূরনের মনোভাব প্রকাশ করল না তখন আল্লাহ্ পাক তাদেরকে আযাব দেয়ার জন্য ব্যাঙ পাঠিয়ে দিলেন। অতি অল্প সময়ের মধ্যে তাদের সম্প্রদায়ে ব্যাঙের সংখ্যা এত বেড়ে গেল যে ব্যাঙের জন্য ঘরের ভিতর পা রাখারও স্থান পাচ্ছিল না। তারা কোথাও বসলে ব্যাঙ লাফিয়ে লাফিয়ে তাদের গায়ে উঠে পড়ত। সারা দেহ ব্যাঙ্গে-ঢেকে যেত। কোথাও শয়ন করলে সারা দেহ ব্যাঙে ঢেকে যেত এমন কি পাশ ফিরে শোয়াও সম্ভব হত না। পাক করে যে খাদ্য ঘরে রাখা হত ব্যাঙ লাফিয়ে এতে পতিত হত। গ্লাস তুলে পানি পান করতে গেলে এতে ব্যাঙ পরত। গ্লাস ব্যাঙে পরিপূর্ণ হয়ে যেত।
তারা এ আযাব হতে মুক্তি পাওয়ার জন্য বিভিন্ন ভাবে চেষ্টা করল কিন্তু তাদের কোন পরিকল্পনাই কাজে আসল না। যতই প্রতিরোধ করতে চাইল ততই এদের আক্রমণ বেড়ে চলছিল যতই ব্যাঙের সংখ্যা হ্রাস করবার চেষ্টা করছিল ততই যেন এদের সংখ্যা হাজারোগুণে বেড়ে চলছিল। তারা ব্যাঙের কারণে অতিষ্ঠ হয়ে পড়ল। অবশেষে অপারগ ও অক্ষম হয়ে কাঁদতে কাঁদতে হযরত মূসা (আ)-এর কাছে হাযির হল। তার কাছে পূর্বাপেক্ষা সুদৃঢ় প্রতিশ্রুতি দিল যে এবার আযাব দূরীভূত হলে তারা অবশ্যই ঈমান আনবে এবং বনী ইসরাইলদেরকে মুক্ত করে দিবে।
হযরত মূসা (আ) বার বার তাদের অনুরোধ বিগলিত হয়ে গেলেন। তদুপরি মূসা (আ) ও তাদের হেদায়েতের প্রত্যাশী ছিলেন। কাজেই যদি বা এবার হিদায়েত গ্রহন করে এ আশায় তাদের আবেদন ক্রমে আল্লাহ্ তায়ালার কাছে পুনরায় দোয়া করলেন। আল্লাহ্ তায়ালায় নবীর দোয়া কবূল করলেন এবং তাদের উপর হতে আবার আযাব তুলে নিলেন। ফেরাউন সম্প্রদায়ের লোকেরা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল। আযাব চলে যাওয়ার পর তারা আরও অধিক ঔদ্ধত্য প্রকাশ করে বলল যে, আমাদের এখন পূর্ণ একীন হয়েছে যে মূসা (আ) একজন পাকাপোক্ত যাদুকর। তার যাদুর প্রভাবে এসব হচ্ছে। তিনি নবী বা রাসূল এমন কিছুই নয়।
আল্লাহ্ পাক এবারও তাদেরকে তৎক্ষণাৎ না ধরে তাদেরকে পুনরায় এক মাসের সুযোগ দিলেন যাতে তারা নিজেদের ভুল বুঝতে পেরে হিদায়েতের পথে আসে। কিন্তু তাদের মধ্যে কোন পরিবর্তন আসল না। বরং তারা দিন দিন আরও গোমরাহীর পথে অগ্রসর হতে থাকে। তাই আল্লাহ্ তায়ালা পুনরায় তাদের প্রতি আযাব পাঠালেন। এ বারের আযাব হল রক্তের আযাব। তাদের পানাহারের সামগ্রীসমূহ রক্তে পরিণত হয়ে যেত। কূপ বা অন্য কোথাও হতে পানি আনার পর তা রক্তে পরিণত হয়ে যেত। এ সকল আযাবে হযরত মূসা (আ)-এর মোজেযার প্রকাশ বারবার দেখা যাচ্ছিল পূর্বের প্রত্যেক আযাবের বেলায় বনী ইসরাইলীরা সম্পূর্ণভাবে আযাব হতে নিরাপদ ছিল। আযাব কেবলমাত্র ফেরাউনের লোকদের প্রতি অবতীর্ণ হত।
রক্তের আযাব অবতীর্ণ হওয়ার পর ফেরাউন সম্প্রদায়ের লোকেরা যখন জানতে পারল যে, বনী ইসরাইলীর উপর এ আযাব অবতীর্ণ হয়নি। তাদের সামগ্রী সম্পূর্ণ পূর্বের ন্যায় রয়েছে। তারা ভাবল বনী ইসরাইলীদের নিকট থেকে খাদ্য চেয়ে আনলে তা খাওয়া সম্ভব হবে। কেননা, বনী ইসরাইলীদের পানাহার সামগ্রী রক্তে রুপান্তরিত হয় না। তাই তারা বনী ইসরাইলিদের কাছে পানাহার সামগ্রী চাইল। বনী ইসরাইলীরা এতে বাধা না দিয়ে বরং পানাহারের বস্তু তাদেরকে দান করল। কিন্তু এসব বস্তু তাদের হাতে যাওয়ার সাথে সাথে রক্তে পরিণত হয়ে যেত। আবার যখন বনী ইসরাইলীদের হাতে পৌছত তখন আবার পূর্বাবস্থা হয়ে যেত।