হযরত মূসা (আঃ) ও মিশরের দক্ষ যাদুকর – পর্ব ৩

হযরত মূসা (আঃ) ও মিশরের দক্ষ যাদুকর – পর্ব ২ পড়তে এখানে ক্লিক করুন

জাদুকরদের নেতারা এসব বিশৃঙ্খল পরিস্থিতিতে নিজেদের আয়ত্বে এনে সকল জাদুকরদের মনে সাহস যোগানোর উদ্দেশ্যে তাদেরকে কোরআনের ভাষায় বলল- فَأَجْمِعُوا كَيْدَكُمْ ثُمَّ ائْتُوا صَفًّا

অর্থঃ তোমরা নিজেদের শক্তি ও তদবীর নিয়োজিত কর এবং সারিবদ্ধভাবে সামনে অগ্রসর হও। (ত্ব-হা)

কেননা, তারা জানে যে, সারিবদ্ধভাবে মোকাবিলা করার মধ্যে বিরোধীপক্ষকে আতঙ্কগ্রস্ত করার ক্ষেত্রে বিরাট প্রভাব রাখে। তাই সকলেই সারিবদ্ধভাবে দণ্ডায়মান হল।

এক বর্ণনায় পাওয়া যায়। হযরত মূসা (আঃ) জাদুকর সরদারকে বলেনঃ আমি তোমাদের উপর বিজয়ী হতে পারলে তোমরা কি আমার প্রতি ঈমান আনবে? সরদার বলল, আমরা এমন সব

সুদৃঢ় ও সুক্ষ্ম জাদু যে, আমাদের উপর বিজয়ী হতে পারে এমন কেউ নেই। সুতরাং আমাদের পরাজয়ের প্রশ্নই উঠে না। তবে হ্যাঁ যদি কোন কারণে তুমি আমাদের উপর বিজয় লাভ কর, তা হল আমরা প্রকাশ্যভাবে ফেরাউনের সম্মুখে তোমার রব ও তোমার প্রতি ঈমান আনব। এতে দ্বিধাবোধ করব না।

এতক্ষণ আলাপ আলোচনার পর এবার কিভাবে প্রতিযোগিতা শুরু করা যেতে পারে তৎসংক্রান্ত বিষয় নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। আর জাদুকরদের পক্ষ থেকেই এ আলোচনার সূচনা হয়। তারা পূর্ব হতে বিভিন্ন কুট কৌশল করে আসছে এ ক্ষেত্রেও চতুরতার আশ্রয় নিতে ভুল করে নি। তারা মূসা (আঃ)-কে বলল হে মূসা! আপনিই কি প্রথমে আপনার লাঠি নিক্ষেপ করবেন না আমরা নিক্ষেপ করব। এ বক্তব্যের পিছনে তাদের তিনটি লক্ষ্য ছিল। প্রথমতঃ জাদুকরেরা হযরত মূসা (আঃ)-কে আগে লাঠি নিক্ষেপের কথা বলে মূলত কৃত্রিম ভদ্রতা দেখায়। দ্বিতীয়তঃ তাঁকে বুঝিয়ে দেয়া যে, এ মোকাবেলায় তাদের বিজয়ী হওয়া সময়ের ব্যাপার মাত্র।

অল্পক্ষণের মধ্যেই বিজয় মাল্য তাদের গলদেশে শোভা বর্ধন করবে। তৃতীয়তঃ তারা কৃত্রিম ভদ্রতা উদারতা দেখিয়ে যদিও মূসা (আঃ)-কে প্রথমে লাঠি নিক্ষেপের আহবান জানিয়েছেন কিন্তু তাদের মনের ইচ্ছা ছিল এর বিপরীত। অর্থাৎ তারাই প্রথমে নিজেদের জাদু দেখিয়ে উপস্থিত দর্শকদের তাক লাগিয়ে দিতে মনে মনে আগ্রহী ছিল। আর ভেবেছে এ পন্থা মূসা (আঃ)-কে ভয় পাইয়ে দিতে সহায়ক হবে। জাদুকরদের এ কূটচাল মূসা (আঃ) আল্লাহ প্রদত্ত জ্ঞানের মাধ্যমে বুঝে ফেলেন। তাই তাদেরকেই প্রথম তাদের জাদু দেখানোর অনুমতি দেন। তদুপরি উভয় পক্ষের এতদসংক্রান্ত আলাপচারিতা বিশেষভাবে বর্ণিত হয়েছে। আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেন-

قَالُوا يَا مُوسَىٰ إِمَّا أَن تُلْقِيَ وَإِمَّا أَن نَّكُونَ أَوَّلَ مَنْ أَلْقَىٰ

قَالَ بَلْ أَلْقُوا ۖ فَإِذَا حِبَالُهُمْ وَعِصِيُّهُمْ يُخَيَّلُ إِلَيْهِ مِن سِحْرِهِمْ أَنَّهَا تَسْعَىٰ

فَأَوْجَسَ فِي نَفْسِهِ خِيفَةً مُّوسَىٰ

قُلْنَا لَا تَخَفْ إِنَّكَ أَنتَ الْأَعْلَىٰ

وَأَلْقِ مَا فِي يَمِينِكَ تَلْقَفْ مَا صَنَعُوا ۖ إِنَّمَا صَنَعُوا كَيْدُ سَاحِرٍ ۖ وَلَا يُفْلِحُ السَّاحِرُ حَيْثُ أَتَىٰ

অর্থঃ তারা বলল, হে মূসা! আপনিই প্রথমে নিক্ষেপ করবেন না আমরাই প্রথম নিক্ষেপকারী হব? তিনি বলেন- না, তোমরাই প্রথমে নিক্ষেপ কর, অনন্তর তাদের রশি ও লাঠিগুলো তাদের জাদুর

ফলে মূসার খেয়ালে এমন মনে হচ্ছিল যেন সেগুলো সাপের ন্যায় দৌড়াচ্ছে। সুতরাং মূসার মনে কিছুটা ভয়ের উদ্রেক হল। আমি বললাম, ভয় করবেন না। আপনিই বিজয়ী হবেন। আর আপনার ডান হাতে যা রয়েছে তা নিক্ষেপ করুন, তারা যা কিছু সাজিয়েছে, এটা সেসব কিছুই গ্রাস করবে? তারা যা কিছু সাজিয়েছে তা জাদুকরের ভেল্কিবাজি মাত্র, আর জাদুকর যেখানেই থাক তারা সফল হয় না।

হযরত মূসা (আঃ) ও মিশরের দক্ষ যাদুকর – পর্ব ৪ পড়তে এখানে ক্লিক করুন

You may also like...

দুঃখিত, কপি করবেন না।