পুনরায় ফেরআউন প্রাসাদে মূসা (আঃ) – পর্ব ২
পুনরায় ফেরআউন প্রাসাদে মূসা (আঃ) প্রথম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন
তদুপরি বার বার সামনে নিয়ে গেলে লোকলজ্জায় হলেও অন্তত কোলে তুলে নিবে। আর এটা শিশুটির প্রতি তার স্নেহ মমতা জন্মের কারণ হবে। এর প্রতি তার মানসিক বৈরীতার অবসান হবে। এসব ভেবে আছিয়া শিশু মূসাকে নিয়ে ফেরআউনের কোলে তুলে দেন। এসময় তার সভাসদদের সকলেই উপস্থিত।
ফেরআউন দীর্ঘ শ্মাশ্রু বিশিষ্ট ছিল। শিশু মূসা কোলে উঠেই তার দীর্ঘ দাড়ি ধরে জোরে টান মেরে মাথা নুইয়ে ফেলে। তখনই ফেরআউনের সন্দেহের উদ্ভব হয়। এ শিশুই জ্যোতিষের কথিত সে শিশু, যে তার রাজত্ব রাজক্ষমতা ধ্বংস করবে। সে তাকে অসম্মান করার জন্যই এমন আচরণ করেছে।
এমনতর সন্দেহ মনে জাগ্রত হবার পরও লোক লজ্জাবশত সে কোন কথা বলেনি। কিন্তু ব্যাপারটা তার সভাসদদের দৃষ্টি এড়ায়নি। তারা বিষয়টা ধামাচাপা না দিয়ে বরং রাগতস্বরে ফেরআউনের উদ্দেশ্যে বলল, সম্রাট নিশ্চয়ই স্মরণ আছে যে, ইব্রাহীমের আল্লাহ তাকে ওয়াদা দিয়েছিলেন তার বংশধারায় একজন রাসূল প্রেরণ করবেন বলে।
সে আপনার রাজত্ব, রাজক্ষমতা ও সম্মাদাদির উত্তরাধিকারী হবে, আপনাকে পরাজিত করবে। আপনি লক্ষ্য করুন, ইবরাহীমের আল্লাহর প্রতিশ্রুতি কিভাবে পূরণ হয়েছে।
ফেরআউন যদিও এতক্ষণ ব্যাপারটা এড়িয়ে গিয়ে লোকলজ্জা থেকে পরিত্রাণ লাভের চেষ্টা করছিল, কিন্তু সভাসদরা তা প্রকাশ করে দিয়েছে। সুতরাং এ অবস্থায় শিশুটিকে যথার্থ শ্বাস্তি না দিলে তা বিশেষ লজ্জার কারণ হয়ে পড়বে। তাই সে শিশু মূসাকে হত্যা করতে সিপাহীদেরকে নির্দেশ দেয়। আছিয়া দেখলেন, পরিবেশ সম্পূর্ণ প্রতিকূলে চলেছে। তাই সে শিশু মূসাকে হত্যা করতে সিপাহীদেরকে নির্দেশ দেয়। আছিয়া দেখলেন, পরিবেশ সম্পূর্ণ প্রতিকুলে চলেছে।
যে শুভ চিন্তায় তিনি শিশুকে ফেরআউনের কোলে তুলে দিয়েছিলেন, তা পন্ড হয়ে হিতে বিপরীত হতে চলেছে। এ বিব্রতকর অবস্থায় আছিয়া নিজেকে সামলিয়ে নিয়ে ফেরাউনকে লক্ষ্য করে বললেন, হে রাজন! আপনি একে তো আমায় দান করেছেন!
আমাকে কিছু জিজ্ঞেস না করেই এমন চরম সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছেন! জবাবে ফেরআউন বলল, আছিয়া! তুমি কি লক্ষ্য করছ না – শিশুর এ আচরণই প্রমান করছে কালে সে আমাকে রাজ্য, রাজত্ব, ক্ষমতা, বিত্ত বিভব সব হারা করে স্বীয় আধিপত্য কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করবে। আছিয়া বলেন, এটা কিভাবে হতে পারে।
শিশুটির যে কাজকে আপনি এ সিদ্ধান্তের অনুকূলে প্রমাণরুপে উপস্থাপন করেছেন, এমন আচরণ সর্বকালের শিশুদের মধ্যেই প্রকাশ পেয়ে থাকে। এটা তাদের প্রকৃতিগত। তারা হাতের কাছে যা কিছু পায় তাই ধরে টানবে, ফেলে দেবে-এমন আচরণ করে না এরুপ শিশু অতীতে কদাছ পরিদৃষ্ট হয় নি আর ভবিষ্যতেও হবে না।
আছিয়ার অকাট্য যুক্তির নিকট ফেরআউন বেশ নমনীয় হয়, কিন্তু সভাসদরা এটা মানতে রাজি নয়। কথায় বলে না রাজা যা বলেন, পরিষদরা বলেন তার শত গুণ। এক্ষেত্রেও উক্ত প্রবাদ সত্য হয়ে দেখা দেয়। তারা আছিয়ার অকাট্য যুক্তি এবং ফেরআউনের নমনীয়তার জবাবে বলল, মহারাজ এ কোন সাধারণ শিশু নয়।
সাধারণ কোন শিশুর পক্ষে আমাদের প্রভুর দীর্ঘায়িত দাড়ি ধরে এমন হেঁচকা টান মেরে মাথা নুয়ে ফেলা সম্ভব নয়। ভবিষ্যতে আমাদের অনুমানই ঠিক বলে প্রমাণিত হবে। কালে দেখবেন এ শিশু মিসর রাজ ও মিসর রাজ্যের জন্য ভয়াবহ বিপদের কারণ হয়ে দাঁড়াবে।
ফেরআউন পরিষদের যুক্তির বাস্তবতা অনুধাবন করছিল। কারণ, শিশু এমন জোরে তার দাড়ি ধরে হেঁচকা টান মেরেছে যে, তা একজন শক্তিশালী সক্ষম মানুষের কাজ বলেই তার অনুভূত হয়েছে। সুতরাং এ শিশু সাধারণ শিশু নয়। ওদিকে বিবি আছিয়া পরিষদ কর্তৃক উত্থাপিত যুক্তি মেনে নিতে সম্মত নন। আর ফেরআউন প্রিয় পত্নীর প্রভাবে সভাসদদের প্রতিও আনুকূল্য দেখাতে পারছে না।
সভাসদের অনড় অবস্থান, প্রিয়তমা স্ত্রীর প্রভাব-সব মিলে ফেরআউন দোদুল্যমান অবস্থার নিপতিত হয়ে করণীয় স্থির করতে পারছিল না। সে আছিয়াকে বারংবার বুঝাতে চেষ্টা করল, শিশুটির আচরণ নিঃসন্দেহে সুপরিকল্পিত। এ কোন সাধারণ শিশু নয়।
পুনরায় ফেরআউন প্রাসাদে মূসা (আঃ) – শেষ পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন