আবূ তালিবের কাছে কুরাইশদের প্রস্তাব
নবী করীম (সাঃ) আল্লাহর উপর ভরসা রেখে দ্বীন প্রচারে পূর্বাপেক্ষা বেশি পরিমাণে লিপ্ত হন। কাফেররা আবার আবূ তালিবের গৃহে উপস্থিত হয়ে প্রস্তাব করল, হে আবূ তালিব! তোমরা ভ্রাতুষ্পুত্র ক্ষমতার লোভে এরূপ করলে সকলে আমরা তাকে রাজমুকুট পরিয়ে দিব।
সুন্দরী রমণীর লোভে এরূপ করে থাকলে বল, আমরা তাকে আরবের সম্ভ্রান্ত পরিবারের সবচেয়ে সুন্দরী যুবতীর সাথে বিয়ে দিব। তবুও সে যেন আমাদের পূর্ব পুরুষদের নিকট থেকে প্রচলিত ধর্মের বিরুদ্ধে কোন প্রচার না করে। তুমি কি বাপ দাদার ধর্মে কলঙ্ক সৃষ্টি করতে চাও? আমরা বছরে তিনশত ষাট দিনের জন্য ৩৬০ জন মাবুদের ইবাদত করেও শান্তি পাচ্ছি না। তার কথায় একজন মাবুদ মানলে আমাদের উপায় কি হবে? ৩৬০ জনে যা সুষ্ঠভাবে আঞ্জাম দিতে পারে না একজন কি করে এটা আঞ্জাম দিবে।
অর্থঃ তারা বলল আমরা কি অনেক মাবুদের স্থলে এক মাবুদের স্থলে এক মাবুদ স্থির করতে পারি?’
হে আবূ তালিব! হয় তুমি থামিয়ে দাও। নতুবা তুমি তার মধ্য হতে সরে দাঁড়াও, নচেৎ আমরা খোলা মাঠে এর ফয়সালা করব। এতদিন আমরা তোমার খাতিরে প্রকাশ্য যুদ্ধ হতে বিরত রয়েছি। আমরা আর সহ্য করব না। এটাই আমাদের চূড়ান্ত ফায়সালা এবং চরম ঘোষণা।
আবূ তালিব তাদের চরম বাণী শুনে অত্যন্ত মর্মাহত হল। আবূ তালিব প্রাণ প্রিয় ভ্রাতুষ্পুত্রকে ডেকে বলেন, আমার উপর এমন বোঝা চাপিয়ে দিও না, যে বোঝা আমি বহন করতে অক্ষম। আমি আর কুরাইশদেরকে দমন করে রাখতে পারছি না। তারা চরমপত্র দিয়েছে। তারা আর সহ্য করবে না।
এখন প্রকাশ্য যুদ্ধে অবতীর্ণ হওয়ার হুমকি প্রদান করছে। তুমি যে কোন সুযোগ সুবিধা তাদের কাছ থেকে আদায় করতে পারবে। কেবলমাত্র নতুন ধর্ম প্রচার হতে তুমি নিবৃত্ত থাক। অন্যথায় আর আমার পক্ষে তোমার সঙ্গে থাকা সম্ভব হচ্ছে না।
নবী করীম (সাঃ) চাচার মুখের দিকে পলকহীন দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলেন। তাঁর দুনয়ন অশ্রুপূর্ণ হয়ে পড়ল। তিনি অশ্রুশিক্ত নিয়নে, চাচার প্রতি লক্ষ্য করে বলেন, হে চাচাজান।
মাতৃগর্ভে থাকাকালীন আমি পিতৃহারা হয়েছি। পিতার স্নেহ মমতা কেমন, কিছুই বুঝতে পারি নি। অতি শৈশবে মাতার স্নেহ হতেও বঞ্চিত হলাম। দাদার স্নেহে দু’বছর কালাতিপাত করার পর আট বছর বয়স হতে আপনার পিতৃতুল্য স্নেহ মমতায় অতীতের সব দুঃখই ভুলে গেছি। আজ আপনিও আমাকে ছেড়ে যেতে চাইলে যেতে পারেন। তবে আপনি দৃঢ় বিশ্বাস রাখেন, দুনিয়ার সব লোক যদি আমার কাছ হতে চলে যায়, তবুও আমি কর্তব্য – ভ্রষ্ট হব না।
তারা আমার এক হাতে সূর্য এবং অপর হাতে চন্দ্র এনে দিলেও আমি কালেমার দাওয়াত ছাড়ব না। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) তাঁর নীতির প্রতি দৃঢ়তা প্রকাশ করলে চাচা আবূ তালিব অভিভূত হয়ে পড়লেন। এতীম ভ্রাতুষ্পূত্রের ক্রন্দনে চাচার চোখের পানি বন্ধ রাখতে পারলেন না। তিনি বলেন, তুমি নিশ্চিত থাক, আমি জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত তোমার সঙ্গে থাকব। তুমি তোমার কাজ চালিয়ে যাও। প্রয়োজনে আমিও তোমার জন্য উৎসর্গ হয়ে যাব।
আমার এক হাতে সূর্য এবং অপর হাতে চন্দ্র এনে দিলেও আমি কলেমার দাওয়াত ছাড়ব না। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) তাঁর নীতির প্রতি দৃঢ়তা প্রকাশ করলে চাচা আবূ তালিব অভিভূত হয়ে পড়লেন। এতীম ভ্রাতুষ্পূত্রের ক্রন্দনে চাচার চোখের পানি বন্ধ রাখতে পারলেন না। তিনি বলেন, তুমি নিশ্চিত থাক, আমি জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত তোমার সঙ্গে থাকব। তুমি তোমার কাজ চালিয়ে যাও। প্রয়োজনে আমিও তোমার জন্য উৎসর্গ হয়ে যাব।
রাসূলুল্লাহ (সাঃ)- কে ইসলাম প্রচারে বিরত করতে না পেরে কুরাইশরা তাঁকে প্রকাশ্য নির্যাতন করার উদ্যোগ গ্রহণ করল। এমনকি তাঁর প্রাণ নাশের প্রচেষ্টা চালাতে শুরু করল। তাঁর চলার পথে কাঁটা ফেলে রাখত। নামাযে দাঁড়ালে পশুর নাড়িভূঁড়ি নিক্ষেপ করত। একবার তিনি হেরেম শরীফে নামায পড়ছিলেন, যখন সিজদায় যান ওকবা একটি উটের নাড়িভূঁড়ি তাঁর ঘাড়ের উপর চাপিয়ে দিল।
রাসূলুল্লাহ (সাঃ) সিজদা থেকে মস্তক উত্তোলন করতে পারছেন না। হযরত ফাতেমা তখন ছয় বছরের শিশু। সংবাদ পেয়ে দ্রুত ছুটে আসলেন এবং প্রাণের আব্বাজানের ঘাড় মোবারক হতে উক্ত নাড়িভূঁড়ি সরিয়ে দেন। আর একদিন ওকবা তাঁর গলায় চাদর পেঁচিয়ে এত জোরে টান দিল যে, তিনি উপুড় হয়ে পড়ে গেলেন। এভাবে তাদের জঘণ্য প্রতিহিংসায় তাঁকে অশেষ যন্ত্রণা সহ্য করতে হত।