ওকাজ মেলা ও হারবুল ফেজার
প্রাক-ইসলাম যুগে হেজাযের বিশেষ বিশেষ স্থানে একেকটি মেলা অনুষ্ঠিত হত। এ সকল মেলার সময় ঘনিয়ে আসার সাথে সাথে আরবদের মাঝে সাজ সাজ রব পড়ে যেত।
এ সকল মেলায় বিভিন্ন দ্রব্য সামগ্রী ক্রয় বিক্রয় পুরোদমে চলত। এতদ্ব্যতীত কবিদের কবিতার লড়াই এবং গোত্র বিশারদ পন্ডিতদের মেধা প্রতিভার পরীক্ষা হত।
বিভিন্ন গোত্র সম্প্রদায়ের প্রধান প্রধান কবি সাহিত্যিক প্রতিযোগী হিসেবে আসরে অবতরণ করে নিজেদের অসাধারণ ধীশক্তি ও প্রতিভার স্বাক্ষর রাখত।
বীর যোদ্ধারা স্বীয় সৌর্যবীর্য, রণপান্ডিত্য ও অতীত বিজয় কাহিনী আবৃত্তি করে মেলার উত্তেজনার সৃষ্টি করত। জুয়া খেলা, মদ্যপান ও বাজি রেখে ঘৌড়দৌড় তো মেলার বড় আকর্ষণ ছিল এ ধরনের মেলাসমূহের মধ্যে ওকাজ মেলা ছিল সর্বপ্রধান।
ওকাজের মত এ ধরনের আরও যেসব মেলা অনুষ্ঠিত হত, সেগুলোতেও অনুরূপ বংশীয় কৌলীন্যের স্পর্ধা, মদ্যপান, জুয়া খেলা, ঘৌড়দৌড়, বীরত্বের বড়াই, ব্যভিচার জাঁকজমকের প্রধান উপকরণ ছিল। অনেক সময় এ ধরনের মেলা থেকে সর্বনাশা যুদ্ধবিগ্রহেরও জন্ম হত।
ওকাজ মেলা থেকেই ফেজার যুদ্ধের সূত্রপাত হয় এবং ক্রমশ তা হেজায প্রদেশের প্রায় সব কটি সম্প্রদায়ের মধ্যে এ যুদ্ধ দাবানলের ন্যায় হু হু করে ছড়িয়ে পড়ে।
রাসূলুল্লাহ (সাঃ) তখন সবে মাত্র কৈশোর থেকে যৌবনে পদার্পণ করেছেন- ফেজার যুদ্ধেরও সূত্রপাত হয়েছে। এ সময় তাঁর বয়স নিয়ে ঐতিহাসিকদের মাঝে যথেষ্ট মত পার্থক্য দেখা যায়। এক দলের মতে রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর দশ বছর বয়স কালে ফেজার যুদ্ধের সূত্রপাত হয় এবং পনরো বছর বয়সে তার সমাপ্তী ঘটে।
ঐতিহাসিক ইবনে হিশাম ও ইবনে ইসহাক বলেন, হারবুল ফেজার রাসূলুল্লাহ (সাঃ) – এর বয়স যখন চৌদ্দ তখন শুরু হয় এবং যখন বিশ বছর বয়স তখন শেষ হয়। অনেক প্রখ্যাত গ্রন্থকার এবং পরবর্তী যুগের ঐতিহাসিকদের কাছে এ মতটিই সঠিক বলে গৃহীত হয়েছে।
কারণ, এটা সর্বসম্মত সত্য যে, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এ সময় বয়ঃপ্রাপ্ত হয়েছিলেন বলেই চাচারা তাঁকে যুদ্ধক্ষেত্রে নিয়েছিলেন। তাঁর কাজ ছিল চাচাদেরকে তীর কুড়িয়ে দেওয়া।
হারবুল ফেজার প্রথম কুরাইশ এবং কায়স বংশের মধ্যে শুরু হলেও তৎকালীন আরবে প্রচলিত প্রথানুসারে এ দু’সম্প্রদায়ের আত্নীয় ও বন্ধু গোত্র সমূহ উভয় পক্ষে যোগ দেয়।
ফলে এ যুদ্ধ সমগ্র আরবেই ছড়িয়ে পড়ে। চার বারের জয় পরাজয় ও বহু বলিদানের পর পঞ্চম বছর সন্ধিসূত্রে এ যুদ্ধের অবসান ঘটে।