মন্ত্রী বীরবলের সত্য কথন

দেশের উন্নতির চিন্তায় কিছু লোক মেতে উঠেছে এবং সকলকে তাদের সাথে আন্দোলনে যোগ দিতে বলছে। তাদের যত চিন্তা তা হলো দেশের জন্যে আর জাতির জন্য। কিন্তু তাদের নিজের জন্যে কি কোন চিন্তা করতে হবে না? আল্লাহ ওয়ালাদের অন্তরে যে চিন্তাটি সবসময় বিরাজ করে ওদের অন্তরে যদি সে চিন্তার সামান্য পরিমাণ ছোঁয়াও লাগতো তা’হলে সব আন্দোলন ভুলে যেতো, সব সমস্যার সমাধান হতো। আর এসব চিন্তার স্পর্শে নিজের চেষ্টা অন্তরে প্রবেশ করাতে হয়। এমনিতেই অন্তরে পেবেশ করে না।

কিসের চিন্তায় হযরত ইব্রাহীম আদহাম (রহঃ) সিংহাসন পরিত্যাগ করেছিলেন? তার প্রধান মন্ত্রী দিশাহীন হয়ে তাকে খোঁজ করতে লাগলেন এবং সন্ধান পেয়ে বললেন, বাদশাহ নামদার, রাজপ্রাসাদে ফিরে আসুন। আপনার সিংহাসন ও মুকুট সামলান। আমরা আর পারছিনা। মন্ত্রীপরিষদ অস্থির আর দেশের মানুষ ব্যাকুল হয়ে পড়েছে।

হযরত ইব্রাহীম আদহাম (রহঃ) বললেন, আমার নিজের চিন্তায় আমি অস্থির আছি। এ চিন্তা যার অন্তরে আছে সে মানুষের সম্পর্কের এ হক আদায় করতে পারবে না।

হযরত ইব্রাহীম আদহাম (রহঃ) বললেন, আল্লাহ যে কথাটি বলেছেন সে কথা শোনার পর থেকে আমি নিজের চিন্তায় বিভোর হয়ে পড়েছি। আল্লাহ বলেছেনঃ একটি দল থাকবে বেহেশতে আর একটি দল থাকেব দোযখে।- সূরা শূরা।

“আমি এখন কোন দলে থাকবো? এ চিন্তাটা আমাকে অস্থির করে তুলেছে। আপনি আমার এ দুঃখ দূর করুন।

মন্ত্রী বললেন, হুজুর আমি আপনার এ দুঃখ দূর করাবো?

আপনার কথা শুনে আমিও ঐ চিন্তায় পড়ে গেলাম,। আমাকে কে রক্ষা করবে?

দিল্লির বাদশাহ আকবারকেও একবার এ চিন্তায় পেয়ে বসেছিল। তিনি শাহী মহলের আরামদায়ক শয্যায় শুয়ে আরাম করছিল। চারিদিকে ঘন কালো অন্ধকার। একটি মাত্র বাতি বাদশাহর কক্ষেকে আলোকিত করছিল। হঠাৎ দমকা হাওয়া এসে বাতিটি নিভিয়ে দিল। বাদশাহ দুচোখে অন্ধাকার দেখে ভয় পেয়ে গেলেন। কবরের নির্জন অন্ধকারের কথা তার মনে পড়ে গেল।

এখানে ধনসম্পদ আছে, ঐশ্বর্য্য আছে, আভিজাত্য আর সৈন্য সামন্ত সব আছে কিন্তু আলো নিভে যাওয়ার এ বিভীষিকাময় অবস্থা থেকে কেউ রক্ষা করতে পারলো না। তাহলে কবরে যেখানে এসব কিছুই থাকবে না, শুধু দুই গজ গর্তে থাকবে নির্জনতা আর সীমাহীন অন্ধকার সেখানে আমার কেমন অবস্থা হবে?

চিন্তায় সারারাত ঘুম হলো না বাদশাহর। চিন্তাক্লিষ্ট চেহারা নিয়ে পরদিন সকালে দরবারে হাজির হলেন। চিন্তার এক অদৃশ্য জগতে তিনি বিচরণ করছেন। চিন্তায় দেহ ও মন ভারাক্রান্তে। শাহী দরবার যেন সে ভার বহন করতে অক্ষম হয়ে পড়েছে।

বীরবল বললেন, “রাত্রে এরূপ একটা ঘটনা ঘটেছে যার কারণে চিন্তায় উদ্বেলিত হয়ে পড়েছি। মনকে কোন মতে ভিড়াতে পারছি না।

বীরবল বললো, বাদশাহ নামদার এটা কোন চিন্তার বিষয় নয়। আমি একটি কথা আপনাকে জিজ্ঞেস করতে চাই যে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) দুনিয়াতে কত বছর জীবিত ছিলেন?

আকবর বললেন, তেষ্টটি বছর। বীরবল বললো, তিনি ইন্তেকাল করেছেন আজ কত বছর হলো”

আকবর বললেন, এক হাজার বছরের বেশী।

বীরবল বললো, তাহলে যিনি মাত্র তেষ্টটি বছর দুনিয়াতে জীবিত থেকে সারা দুনিয়াকে উজ্জল আলোকে উদ্ভাসিত করে দিয়েছেন তিনি কি আজ এক হাজার বছর ধরে মাটির নীচে অবস্থান করে মাটির গহ্বরকে উজ্জল আলোতে ভরে দেননি? কবর তো মাটির নীচেই থাকে। সুতরাং সব মুসলমানই ইনশাল্লাহ তার কবরকে উজ্জল আলোকে জ্বলজ্বল করতে দেখবে।

বীরবল ছিল হিন্দু, কিন্তু কত বড় সত্য কথাটি সে বলেছে! অদ্ভুদ তার সত্য প্রকাশের ভঙ্গি!

কিন্তু মুসলমান হওয়ার জন্য দরবার সে চিন্তা যে-চিন্তা আকবরের মত স্বাধীনচেতা বাদশাহকেও জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ছার-খার করে দিয়েছিল। আল্লাহর ভয়ের করাত আল্লাহ_ওয়ালাদের অন্তরকে সব সময় চিরে ফালি ফালি করে দিচ্ছে। দুনিয়ার হাঙ্গামা দিকে ফিরে তাকাবার তাদের সময় নেই। সুতরাং, তলোয়ারের আঘাতে যারা জর্জরিত তাদের কষ্টের পরিমাণ তোমরা কি দিয়ে করবে? কখনো যে একটি কাঁটা তোমাদের পায়ে ফুটে নি!

You may also like...

দুঃখিত, কপি করবেন না।