হযরত ঈস বিন ইসহাক (আঃ)
হযরত ঈস বিন ইসহাক (আঃ) এর জ্যোষ্ঠ পুত্র। ঈসের পিতা হযরত ইসহাক (আঃ) কেনানবাসী জৈনক সুবিখ্যাত সরদারের কন্যাকে বিয়ে করেছিলেন এবং তাঁর গর্ভেই দুজন পুত্র সন্তান ভূমিষ্ট হন। জ্যেষ্ঠ পুত্রের নাম ছিল আইস বা ঈস এবং কনিষ্ঠ পুত্রের নাম ইয়াকুব। ইয়াকুবকে আল্লাহ তায়ালা নবুয়্যত প্রদান করেছিলেন। ইয়াকুবের অন্য একটি নাম ছিল ইসরাইল। এজন্য হযরত ইয়াকুবের বংশধারা দুনিয়ায় বনী ইসরাইল নামে পরিচিত।
হযরত ইসহাক (আঃ) তাঁর জ্যেষ্ঠপুত্র ঈসকে বেশী ভালবাসতেন, কিন্তু তাঁর স্ত্রী বেশী স্নেহ করতেন কনিষ্ঠপুত্র ইয়াকুবকে।
হযরত ইসহাক (আঃ)-এর ইচ্ছা ছিল যে, তিনি তাঁর জ্যেষ্ঠপুত্র আইসকে নবী মনোনীত করার জন্য আল্লাহর দরবারে দোয়া করবেন। কিন্তু ঘটনাক্রমে তিনি নিজের অজান্তেই ঈসের বদলে ইয়াকুবকে নবী করার জন্য আল্লাহর দরবারে প্রার্থনা করেছিলেন। আর আল্লাহ তাঁর সেই প্রার্থনা কবুল করে ইয়াকুবকে নব্যুয়ত দান করেন।
হযরত ইসহাক (আঃ) কোন কারণে পূর্বেই অন্ধ হয়ে গিয়েছিলেন, তদুপরি অতিরিক্ত বার্দ্ধক্যের কারণে তিনি শয্যাশায়ী হয়ে পড়েছিলেন। শয্যাশায়ী অবস্থায় একদিন তিনি তাঁর জ্যেষ্ঠপুত্র ঈসকে বলেন যে, তুমি জঙ্গল হতে একটি বকরী বা হরিণ শিকার করে এনে এর গোশত ভুনা করে আমাকে খাওয়াও। আমি তোমাকে নবী করার জন্য আল্লাহর দরবারে দোয়া করব। ঈস পিতার ইচ্ছা পূরণ করতে শিকার করার উদ্দেশ্যে জঙ্গলে চলে গেলেন।
এদিকে তাঁর স্ত্রী ছোট ছেলে ইয়াকুবকে বললেন, তুমি ঈস শিকার থেকে প্রত্যাবর্তনের পূর্বেই একটি বকরী জবাই করে তাঁর গোশত ভূনা করে তোমার পিতাকে আহার করাও যাতে তিনি তোমাকেই বনী হওয়ার জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করেন।
মায়ের উপদেশ অনুযায়ী ইয়াকুব একটি বকরী যবাই করে তাঁর গোশত ভূনা করে তার গোশত ভূনা করে পিতাকে খাওয়ালেন। পিতা ইসহাক (আঃ) অন্ধ ছিলেন সুতরাং তিনি ইয়াকুবকেই আইস মনে করে আল্লাহর দরবারে দোয়া করলেন, হে মাবুদ! যে আমাকে গোশত ভক্ষণ করাল, তাকে তুমি নব্যুয়ত দান কর। আল্লাহ তার দোয়া কবুল করে ইয়াকুবকে নব্যুয়তী প্রদান করলেন।
এর পরে ঈস জঙ্গল হতে হরিণ শিকার করে তার গোশত ভুনা করে যখন পিতার সামনে পেশ করলেন, তখন সমস্ত ঘটনা প্রকাশ হয়ে গেল। হযরত ইসহাক (আঃ) পুত্র ঈসকে বলেন, হে ঈস! তোমার দোয়া কৌশলে ইয়াকুব নিয়ে গেছে। এ কথা শুনে ঈস ক্রোধে অধীর হয়ে ইয়াকুবকে হত্যা করে ফেলতে চাইল। হযরত ইসহাক (আঃ) তাকে নিষেধ করে বলেন, না ঈস তুমি এমনটি করো না। আমি তোমার জন্যও দোয়া করব। তোমার বংশকে যেন আল্লাহ অত্যাধিক প্রসাব করে দেন। হযরত ইসহাক (আঃ)-এর এ দোয়াও আল্লাহর দরবারে কবুল হল।
এ দোয়ার বরকতে ঈসের বংশ বহুগণ বর্ধিত হয়েছিল। তাঁর বংশের লোকগুলো দ্বারা সারা দেশ পরিপূর্ণ হয়ে গিয়েছিল। পশ্চিমাঞ্চলের দেশসমূহে বিশেষতঃ আলেকজাদ্রিয়া ও সমুদ্রের উপকূলবর্তী অঞ্চলসমূহে তাঁর বংশধর দ্বারাই পরিপূর্ণ হয়। ঈসের এক ছেলের নাম ছিল রোম। সে যেস্থানে গিয়ে বসবাস শুরু করেছিল, তাঁর নামানুসারে সেই স্থানটির নামও হয়েছিল রোম। এর রাজধানী ছিল ইস্তাম্বুল। এ রোমের বংশধরের দ্বারাই সমগ্র রোমদেশ পরিপূর্ণ হয়েছিল।
ঈস বিন ইসহাক (আঃ)-এর গায়ের রং লাল ছিল। তাঁর দেহও অধিক পরিমাণে লোম ছিল। কেউ কেউ অবশ্যই স্পেনের অধিবাসীদেরকেও তাঁর বংশধর বলে উল্লেখ করেছেন। হযরত ঈস একশ চল্লিশ বছর বয়সে ইহধম ত্যাগ করেন। হযরত ইয়াকুব (আঃ) ও একই সময়ে ইন্তেকাল করেন।