শেখ মুহীউদ্দীন (রহঃ) এর ঘটনা

শেখ মুহীউদ্দীন ইবনে আরাবী (রহঃ) একজন ওলী ছিলেন।  তদুপরি তিনি একজন বড় আলিম ছিলেন। একদিন শয়তান তাকে বলে আমিও তো কোন বস্তু বটে। যদিও আমি কিছু নই তবুও আল্লাহর রহমত আমার উপর প্রকাশিত হবে। কাজেই আমাকেও ক্ষমা করা হবে।

শেখ বলল, তুই তো জাহান্নমী। তোকে ক্ষমা করা হবে না। তিনি তার শিষ্যদেরকে বলে দিলেন শয়তানের সাথে কখনো   তর্ক করবে না। কেননা শয়তানের সাথে তর্ক বিতর্ক করলে যদি উপকার হতো তাহলে আল্লাহ তা’আলা শয়তান থেকে বাঁচার জন্য সূরা পড়ার নির্দেশ দিতেন না। বরং হুকুম দিতেন যে, শয়তান যখন প্ররোচনা দেয় তখন তাকে ঝাপটে ধরে ঘায়েল করে দাও।

অর্থাৎ তোমরাও দলীল প্রামণের সাহায্য তার সাথে তর্ক বিতর্ক করে শয়তানের প্ররোচনার জবাব দাও। অর্থাৎ আল্লাহ তা’আলা বলেছেন তোমার সূরা পড়ে আমার কাছে আশ্রয় কামনা কর যে, হে আল্লাহ অভিশপ্ত শয়তান থেকে আমাকে রক্ষা কর। এ বিষয়টি মোল্লা আলী কারী (রহঃ) মিশকাত শরীফে ব্যাখা গ্রন্থ মিরকাতে আরো সুন্দর ও সাবলিল ভাষায় বুঝিয়েছেন।

যেমন তিনি লিখেছেন-

শয়তানের দৃষ্টান্ত হল এমন কুকুরের ন্যায় যে বড়লোকের বৈঠকখানায় পাহারা দেয়। তিনি বলেন, শয়তান হচ্ছে আল্লাহর কুকুর। আল্লাহ তা’আলা দরবার থেকে বহিষ্কৃত হয়ে অভিশ্ত হয়ে গেছে। দুনিয়ার বড় লোকেরা যখন বড় বড় কুকুরগুলো পোষে তখন তাকে উস্কানী দিলে কিংবা চুপ করতে বললেও সে ঘেউ ঘেউ করবেই। যেমন অন্যান্য কুকুরগুলো করে থাকে। কেউ তাকে চুপ করতে শাসন করলে আল্লাহর শয়তান কুকুর কারো আয়ত্বে না। কিন্তু শয়তান   তাড়ানোর সূরা পড়লে সে চুপ হয়ে যায় এবং পালিয়ে বাঁচে।

সুতরাং আল্লাহর নিকট বললে আল্লাহ পাক শয়তানকে হুকুম করেন তার বরকতে শয়তান আয়ত্তে আসে না।

শেখ মুহীউদ্দিন ইবনে আরাবী (রহঃ) যুক্তিদ্বারা শয়তানের জবাব দেননি। বোধ হয় তিনি তখন তার শিষ্যদেরকে আদব শিক্ষা দিচ্ছিলেন আর তাঁদের ট্রেনিং এর জন্য তাই যুক্তি যুক্ত ছিল। এরই মধ্যে শেখ মহীউদ্দীন ইবনে আরাবী (রহঃ) এর জবাব হয়ে গেছে বলে আমার বুঝে এসেছে।

একথা বলেননি যে, এটি আমার পূর্ণতা। অদি কোন উপদেশমূলক কোন বক্রতা পাওয়া যেত, তাহলে বলত যে, দেখ ইবনে আরাবীর  পক্ষ থেকে শয়তানের কোন জবাব আসেনি। আমি আমার দিব্যজ্ঞানে জবাব পেয়ে গেছি। কিন্তু আমাদের বুজুর্গ পূর্ণতা হলো নিজেদেরকে বিলুপ্তকরণ। গ্রন্থকার বলেন, শেখ ইবনে আরাবীর বরকতে আল্লাহ পাক তার জবাব আমার অন্তকরণে উদিত করেছেন।

আর তা হচ্ছে, নিঃসন্দেহে আল্লাহ পাকের রহমতে শয়তানের উপর বিস্তৃত কিন্তু কিভাবে? একটি দৃষ্টান্তের মাধ্যমে বিষটি বোঝানো যেতে পারে। কোন ব্যক্তি যদি কাউকে ১০০ জুতা মারার সামর্থ রাখে কিন্তু ৯৮টি মারার পর ২টি বাকি রেখে বিরত হয়ে যায় তাহলে কি এটি তার দায় নয়। হযরত হাকীমূল উম্মত বলেন, আল্লাহ তা’আলা শয়তানকে আযাব দেবেন এর চেয়ে অধিক পরিমাণ আযাব দেয়া কি আল্লাহর পক্ষে সম্ভব নয় বা তিনি  কি এরচেয়ে আরো বেশী আযাব দিতে সক্ষম নন? তিনি অবশ্যই সক্ষম। কেননা, তার ক্ষমতা অসীম, অশেষ। সুতরাং শয়তানকে যে পরিমাণ আযাব দেওয়া হবে এর চেয়ে অনেক বেশী আযাব দিতে পারেন সে পরিমাণ আযাব না দেয়াও রহমত। এরূপ শয়তানের প্রতিও আল্লাহর রহমত উন্মুক্ত।

বর্তমানে আমার (লেখকের) পঠিত একটি হাদীসের মর্ম উল্লিখিত আয়াত সংশ্লিষ্ট। সম্মানিত পাঠকবৃন্দ খেদমতে পেশ করছি।

হাদীসের মর্ম হল। আমার রহমত সকল বস্তুর জন্যই উন্মুক্ত।

সুতরাং কেউ হাজার বছর বেঁচে থাকলে এবং সে যদি একটি মুহূর্ত হুনাহ এবং নাফরমানী থেকে বিরত না থাকে তারপরও এ ব্যক্তির গুনাহ কমই হবে আল্লাহ পাকের রহমত থেকে। আল্লাহ পাকের রহমত এত অধিক যে, সে যদি খাটি তওবাহ করে, তাহলে কবূল হবে। বরং বলা হয়েছে যে, হে আমার বান্দা তোমার গুনাহ যদি সমগ্র প্রথিবীর বৃক্ষ পত্রের চেয়ে বেশী হয়, তোমার গুনাহ যদি সমুদ্রের ফেনার চেয়েও বেশি হয়, তোমার গুনাহ যদি দুনিয়ার সব বালু রাশির চেয়েও বেশী হয়, তারপরও তোমার গুনাহই কম হবে আল্লাহর রহমতই অধিক থেকে অধিকতর হবে। অধিকস্ত তাও বলা হয়েছে যে,  তুমি যদি তওবাহ ভেঙ্গে ফেল, আবার তওবাহ কর আমার ভেঙ্গে ফেল শতবার তওবাহ করে তওবাহ ঠিকঠাক রাখতে না পার তাহলে আমার দরবার খোলা আছে চলে এসো, তওবাহ কর, আমি তোমার তওবাহ কবূল করব। (মাকতুবাতে ফকীর ১৪৮পৃ,)

অর্থাৎ তিনি এমনই অধিপতি, যিনি তার বান্দাদের তওবাহ কবূল করেন এবং যাবতীয় গুনাহ খাতা মাফ করে দেন।

আল্লাহ পাকের সত্তা সবচেয়ে বেশী রহীম ও কারীম। তিনি রাহমানির রহীম তার রহমত থেকে কখনো নিরাশ হতে নেই। সব সময় তওবাহর ধারাবাহিকতা বজায় রাখা আবশ্যক। গুনাহ হয়ে গেলে দ্রুত তওবাহ করা উচিত।

You may also like...

দুঃখিত, কপি করবেন না।