নিজেকে শাস্তি প্রদান
এক ব্যক্তি এক মহিলার দিকে চোখ তুলে তাকানোর পরে সে এ অপরাধের কাফফারা হিসেবে এক বছর ঠান্ডা পানি পান করবে না বলে অঙ্গীকার করল। অতঃপর ক্রমাগত এক বছর সে গরম পানি পান করেছে। বর্ণিত আছে যে, একদা হযরত হাছান বিন ছিন্নান (রহঃ) একটি নতুন জানালা দেখে হঠাৎ বলে উঠলেন, এটা আবার কবে তৈরি হল? পরক্ষণেই তিনি স্বীয় নফসকে লক্ষ্য করে বললেন, অনর্থক কেন এ কথা বললে? তোমার এ অপরাধের শাস্তি হল, আগামী এক বছর রোজা রাখবে? পরে তিনি লাগাতার এক বছর রোজা রাখলেন। হযরত মালেক (রহঃ) বলেন, এক বুজুর্গ আছরের নামাযের পর আমাকে জিজ্ঞেস করল, তোমার পিতা কোথায়? আমি বললাম, তিনি ঘুমাচ্ছেন।
বুজুর্গ বললেন, এমন সময় ঘুমাচ্ছেন , এটা কি ঘুমের সময় হল। এ কথা বলেই তিনি চলে গেলেন। আমি তার পেছনে এক ব্যক্তি কে পাঠালাম যে, ঐ বুজুর্গকে বল যে, তিনি যদি বলেন, তবে আমি ওয়ালেদ ছাহেব কে ঘুম হতে জাগিয়ে তার আগমন সংবাদ বলব। লোকটি ফিরে এসে বলল, আমি ঐ বুজুর্গকে জিজ্ঞেস করেছি কিন্তু তিনি কোন উত্তর দেননি। মনে হল তিনি অন্য কোন ধ্যানে আছেন। আমার কথা শুনতে পাননি।
পরে আমি নিজে ঐ বুজুর্গের পেছনে গিয়ে দেখলাম, তিনি এক কবরস্থানে দাঁড়িয়ে স্বীয় নফসকে তিরষ্কার করে বলছেন যে, তুমি কেন এ কথা বললে যে, এটা কি ঘুমের সময়? তোমার জিম্মায় ঐ কথা বলা কি আবশ্যক ছিল? যার যখন ইচ্ছা সে তখন ঘুমাবে, এ বিষয়ে কৈফিয়ত তলব করার তুমি কে? এমন দায়িত্বহীন প্রশ্ন করার তোমার কোন অধিকার নেই। ভবিষ্যতে আর কোনদিন এ ধরনের অপ্রয়োজনীয় কথা বলবে না। হে নফস!
তোমার এ অপরাধের শাস্তি হল, যদি বিশেষ কোন রোগ-ব্যাধি না হয় তবে আগামী এক বছর বিছানা স্পর্শ করতে পারবে না। অতঃপর বললেন, আরে হতভাগা। তোমার কি লজ্জা বলতে কিছুই নেই? নিজের সংশোধন না করে আর কতকাল মানুষের দোষ অন্বেষণ করে ফিরবে? এ সকল কথা বলে বলে তিনি কেঁদে বুক ভাসাচ্ছিলেন। আমার উপস্থিতি টের পেলেন না তিনি। আমি তাকে এ অবস্থায় রেখেই ফিরে এলাম।
প্রাখ্যত বুজুর্গ হযরত তামিম দারী (রহঃ) একদিন ঘটনাক্রমে তাহাজ্জুদের সময় উঠতে পারলেন না। পরে তিনি এই অপরাধের জন্য নিজেকে এ শাস্তি দিলেন যে, আগামী এক বছর নিজের জন্য ঘুমকে হারাম করে দিলাম।
হযরত দাউদ (রহঃ) এর ইন্তেকালের পর হযরত লক্ষ্য করে বললেন, হে দাউদ! তোমার আত্মা আল্লাহর দরবারে প্রিয় হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত তাকে তুমি কায়েদ করে রেখেছিলে, তোমার আত্মাকে আজাব দেওয়ার পূর্বে তুমি নিজেই তাকে আজাব দিচ্ছিলে। যে উদ্দেশ্যে তুমি এত মেহনত করেছ এখন তার সুফল ভোগ করবে।
এক বুজুর্গ হতে বর্ণিত আছে যে, একবার তিনি উপরের দিকে তাকেতেই এক মহিলার প্রতি তার নজর পড়ল। এ অপরাধের কারণে সাথে সাথে তিনি অঙ্গীকার করলেন যে, জীবনে যতদিন বেঁচে থাকবেন আর কোন দিন উপরের দিকে তাকিয়ে দেখবেন না। জীবনের শেষ মূহুর্ত পর্যন্ত তিনি অঙ্গীকার রক্ষা করেছেন।
বিখ্যাত বুজুর্গ হযরত আহনাফ বিন কায়েস (রহঃ) সারা রাত কুপি জ্বালিয়ে রাখতেন এবং উহার প্রজ্বলিত আগুনে নিজের হাতের অঙ্গুলী স্থাপন করে বলতেন, হে নফস! তোমার কি হল যে, তুমি অমুক দিন এই এই অপরাধ করলে?
এমনিভাবে হযরত ওহাব ইবনুল ওয়ারাদ কোন অপরাধ হওয়ার সাথে সাথে নিজের বুকের কিছু পশম উপড়িয়ে ফেলতেন। এতে তিনি বেশ কষ্ট পেতেন। পরে তিনি নফসকে লক্ষ্য করে বলতেন, তোমার ভালোর জন্যই এরূপ করেছি।
একবার মোহাম্মদ ইবনে বিশর দেখতে পেলেন, হযরত দাউদ তাই (রহঃ) রোজা শেষে ইফতারের সময় লবণ ছাড়া শুকনো রুটি খাচ্ছেন। এ সময় উপস্থিত কেউ আরজ করল, হযরত! আপনি লবণসহ রুটি গ্রহণ করুন। তিনি উত্তর দিলেন, দীর্ঘদিন যাবৎ আমার নফস লবণ খেতে চাচ্ছে, কিন্তু দাউদ যতদিন জীবিত থাকবে সে লবণ খেতে পারবে না।
হযরত আবূ নোয়াইন (রহঃ) বলেন, একদিন হযরত দাউদ (রহঃ) একটি শুকনো রুটি ছোট ছোট টুকরা করে পানিতে ভিজিয়ে রাখলেন। পরে তা নরম হয়ে পানির সাথে মিশে গেলে তরল পদার্থের মত পান করে ফেললেন। এ বিষয়ে তাকে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বললেন, রুটি চিবিয়ে খেতে অন্তত পঞ্চাশটি আয়াত তেলাওয়াত পরিমাণ সময় ব্যয় হয়। এ কারনেই আমি তা ভিজিয়ে রাখি এবং নরম হলে পানির সাথে মিশিয়ে পান করি।
আমিরুল মুমিনীন হযরত ওমর (রাঃ) একিদন দূর্ঘটনাক্রমে আছরের নামাযে জামাতে শরীক হতে পারলেন না। পরে তার শাস্তি স্বরূপ তিনি একটি জমি ছদকাহ করে দিলেন। তৎকালে ঐ জমির মূল্য ছিল দু; লাখ দেরহাম। এদিকে হরত ওমর (রাঃ) এর ছেলের আদত ছিল যদি কোন দিন জামাত ছুটে যেত, তবে সেদিন সারা রাত গেজে থেকে এবাদত করতেন। একদিন তার মাগরিবের নামায শুরু করতে এ পরিমান বিলম্ব হয়ে গেল যে, আকাশের দুটি তারকা দেখা যেতে লাগল। এ বিলম্বের শাস্তি স্বরূপ তিনি দু’জন গোলাম আজাদ করে দিলেন।
অন্য একটি বিবরণে প্রকাশ একবার ইবনে আবি রবিয়াহ (রহঃ) এর ফজরের দু’রাকাত সুন্নাত কাজা হয়ে গিয়েছিল, ফলে তিনি একজন গোলাম আজাদ করে দিলেন।