শ্রেষ্ট অলিদের মিলন মেলা
হযরত শেখ সালেহ মারী (রহঃ) বলেন, একবার আমি হযরত আবূ জেহিজ নাবিনার সাথে সাক্ষাতের উদ্দেশ্যে সফরে বের হলাম। তিনি তখন লোকালয় ত্যাগ করে এক বিরান ভূমিতে চলে গেছেন। সেখানে তাঁর জন্য একটি মসজিদ নির্মাণ করা হয়েছে।
এবং তিনি ঐ মসজিদে দিন রাত ইবাদতে মশগুল থাকতেন। আমি তাঁর সাথে সাক্ষাতের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হওয়ার পর পথে হযরত মোহাম্মদ বিন ওয়াসি (রহঃ) এর সাক্ষাত হল। তিনি আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, কোথায় যাচ্ছ? আমি বললাম, হযরত আবূ জেহিজের সাথে সাক্ষাত করতে। তিনি বললেন, আমিও এ উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়েছি।
অতঃপর আমরা উভয়ে এক সাথে পথ চললাম। কিছুক্ষণ পর হযরত হাবলি আজমলির সাথে দেখা হল। তিনি জিজ্ঞেস করলেন কোথায় যাচ্ছ? আমরা বললাম, হযরত আবূ জেহিজের সাথে সাক্ষাত করতে। তিনি বললেন, আমিও সেদিকেই যাচ্ছি।
অতঃপর আমরা তিনজন একসাথে রওয়ানা হলাম। কিছু দূর অগ্রসর হওয়ার পর হযরত মালেক বিন দিনারের সাথে সাক্ষাত হল। তিনি আমাদের জিজ্ঞেস করলেন, তোমার কোথায় যাচ্ছ। আমরা বললাম, হযরত আবূ জেহিজের সাথে সাক্ষাত করতে। তিনি জানালেন, তিনিও একই উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়েছেন। পরে আমরা সকলে এক সাথে রওয়ানা হয়ে কিছু দূর যাওয়ার পর পথে হযরত সাবেত বুনানীর সাথে সাক্ষাত হল। তাঁর সাথে আলাপের পর জানা গেল, তিনি ও হযরত আবূ জেহিজের সাথে সাক্ষাত করতে যাচ্ছেন। এবার আমরা সকলে বললাম, আল হামদুলিল্লাহ! আল্লাহ পাক আমাদের সকলকে এক সাথে একত্রিত করে দিয়েছেন।
বর্ণনাকারী বলেন, পরে আমরা যখন হযরত জেহিজের নিকট পৌছলাম। তখন তিনি ইবাদতে মশগুল ছিলেন, মসজিদের পাশেই ছিল একটি সবুজ বাগান। হযরত সাবেত বুনানী বললেন, চল আমরা সকলে ঐ বাগানে দু রাকাত নামায আদায় করি, যেন ঐ নামায কেয়ামতের দিন আমাদের জন্য সুপারিশ করে। নামায শেষে আমরা হযরত জেহিজের জন্য অপেক্ষা করতে লাগলাম। জোহরের সময় হলে তিনি ঘর থেকে বের হয়ে আজান দিলেন। পরে নিজেই একামত দিয়ে নামায শুরু করলেন। আমরা সবাই তাঁর পেছনে নামায আদায় করলাম।
নামায শেষে হজরত মোহাম্মদ বিন ওয়াসী অগ্রসর হয়ে তাঁর সাথে সাক্ষাত করলেন। হযরত জেহিজ আবার জিজ্ঞেস করলেন , তুমি কে? তিনি বললেন, আপনার ভাই মোহাম্মদ বিন ওয়াসী। হযরত জেহিজ আবার জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কি বসরা নগরীর সেই বিখ্যাত নামাযী। হযরত ওয়াসী এ প্রশ্নের কোন জবাব বা দিয়ে চুপ রইলেন। এবার হযরত সাবেত বুনানী সামনে এগিয়ে গিয়ে সাক্ষাত করলেন।
হযরত জেহিজ জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কে? তিনি বললেন, আপনার ভাই মোহাম্মদ বিন ওয়াসী। হযরত জেহিজ আবার জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কি বসরা নগরীর সেই বিখ্যাত নামাযী? হযরত ওয়াসী এ প্রশ্নের কোন জবাব না দিয়ে নিশ্চুপ রইলেন। এবার হযরত সাবেত বুনানী সামনে এগিয়ে সাক্ষাত করলেন। হযরত জেহিজ জিজ্ঞেস করলেন তুমি কে? তিনি পরিচয় দিলে হযরত জেহিজ পুনরায় জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কি বসরার সেই শ্রেষ্ঠ নামাযী সাবেত বুনানী? তিনি এই প্রশ্নের উত্তরে নিরব রইলেন।
এবার হযরত মালেক বিন দিনার সামনে এগুলেন। তাঁর পরিচয় জিজ্ঞেস করলে তিনি বললেন, আমি মালেক বিন দিনার। হযরত জেহিজ সাথে সাথে আনন্দিত হয়ে “মারহাবা মারাহাবা” বলে হযরত মালেক বিন দিনারকে স্বাগতম জানিয়ে বললেন, তোমার সম্পর্কে সুখ্যাতি এরূপ যে, তুমি বসরার শ্রেষ্ঠ সাধক। হযরত মালেকের পর হযরত হাবীব আজমী সাক্ষাত করলেন। নাম জিজ্ঞেস করলে তিনি বললেন, আমি হাবীব আজমী। তিনি বললেন, তুমি কি সেই ব্যক্তি, যার সম্পর্কে বলা হয় যে, তাঁর দোয়া কবূল হয়? হযরত হাবীব এ প্রশ্নের কোন উত্তর দিলেন না। বর্ণনাকারী বলেন, সর্বশেষে আমার পালা আসল। হযরত জেহিজ আমার পরিচয় জিজ্ঞেস করলেন। আমি বললাম আমি সালেহ মারী। তিনি জানতে চাইলেন, তুমি কি সেই ব্যক্তি যার সম্পর্কে জনশ্রুতি এরুপ যে, বসরাবাসীদের মধ্যে তাঁর গলার আওয়াজ সব চেয়ে শ্রুতিমধুর?
অতঃপর আমার জবাবের অপেক্ষা না করেই বললেন, আমি তোমার আওয়াজ শোনার অপেক্ষা করছিলাম। তুমি কালেমা পাক হতে পাঁচটি আয়াত তেলাওয়াত করে শোনাও। হযরতের আদেশে আমি পাঁচটি আয়াত তেলাওয়াত করার সাথে সাথে তিনি চিৎকার দিয়ে অজ্ঞান হয়ে পড়লেন। কিছুক্ষণ পর তাঁর জ্ঞান ফিরে এলে আমাকে বললেন, পুনরায় সে আয়াতগুলো তেলাওয়াত কর। আমি আবারো ঐ আয়াতগুলো তেলাওয়াত করলাম। আয়াত শেষ হওয়ার সাথে সাথে তিনি পূনরায় চিৎকার দিয়ে প্রাণ ত্যাগ করলেন
বর্ণনাকারী বলেন, কিছুক্ষণ পরই ঘর হতে জেহিজের স্ত্রী বের হয়ে এসে জিজ্ঞেস করলেন, তোমরা কে? আমি সবার পরিচয় দেওয়ার সাথে সাথে তিনি বললেন, ইন্নালিল্লাহি ওয়াইন্না ইলাহি রাজি”ঊন”। অতঃপর জানতে চাইলেন, আবূ জেহিজ কি ইন্তেকাল করেছেন? আমরা বলালাম হ্যাঁ! তিনি ইন্তেকাল করেছেন। আল্লাহ পাক তোমাকে উত্তম বিনিময় দান করুন।
কিন্তু তুমি তাঁর ইন্তেকালের সংবাদ পেলে কিভাবে? তিনি উত্তর দিলেন হযরত জেহিজকে আমি বহুবার এরূপ দোয়া করতে শুনেছি, হে পরওয়ারদিগার! আমার ইন্তেকালের সময় তোমার আউলিয়া কেরামকে আমার নিকট একত্রিত করে দিও। সুতরাং তোমাদের পাওয়ার পরই আমি অনুভব করতে পেরেছি যে, হযরত জেহিজের ইন্তেকালের উদ্দেশ্যেই এখানে তোমাদের আগমন ঘটেছে। যাই হোক, অতঃপর আমরা সকলে মিলে তাঁর নামাযে জানাজা ও দাফন সম্পন্ন করালাম।