আল্লাহর রহমত হতে নিরাশ হবে না
শায়েখ ইসমাইল বিন খাজাই (রহঃ) বলেন, তুর্কী শাসনামলে মোহলীনামকে এক ব্যক্তি বসরা যাত্রা করল। তার সাথে এক গোলাম এবং এক দাসীও ছিল। তারা যখন দজলা নদীতে নৌকায় আরোহণ করল তখন কিনারা হতে এক যুবক মাঝিকে ডেকে বলল, আমি বসরা যাব, আমাকেও সাথে নিয়ে যাও।
নৌকার আরোহী মোহলী যুবকের দিকে তাকিয়ে দেখল, তার একটা পশমী জামা, হাতে লাঠী, মাথার চুল এলোমেলো, সব মিলিয়ে যুবকের প্রতি তার একটা মায়া ভাব জেগে গেল অবশেষে তার অনুরোধ মাঝি তাকে সাথে নিয়ে গেল। আহারের সময় হলে মোহলী মাঝিকে বলল, যুবককেও আমাদের সাথে আহার করতে বল। মাঝি যুবককে খানা খেতে বললে প্রথমে সে অস্বীকার করল।
পরে সকলের অনুরোধে সেও তাদের সাথে খানা খেল। খানা শেষে সকলের জন্য শরাব পরিবেশন করা হল। কিন্তু যুবক কিছুতেই শরাব পান করতে সম্মত হল না। পরে সকলের শরাব পান শেষ হলে দাসী বাদ্যযন্ত্র নিয়ে মধুর সুরে গান গাইতে লাগল। দাসীর গান শেষ হওয়ার পর যুবক মোহলীকে বলল, আমি আরো ভাল গান গাইতে পারি। অতঃপর সে বিসমিল্লাহ সহ নিম্নের আয়াত তিলাওয়াত করল-
قُلْ مَتَاعُ الدُّنْيَا قَلِيلٌ وَالْآخِرَةُ خَيْرٌ لِّمَنِ اتَّقَىٰ وَلَا تُظْلَمُونَ فَتِيلًا
أَيْنَمَا تَكُونُوا يُدْرِككُّمُ الْمَوْتُ وَلَوْ كُنتُمْ فِي بُرُوجٍ مُّشَيَّدَةٍ
অনুবাদঃ আপনি বলে দিন, পার্থিব ভোগবিলাস কেবল কয়দিনের জন্য, আর যে ব্যক্তি মুত্তাকী তার জন্য পরকালই উত্তম এবং তোমাদের প্রতি সামান্য পরিমাণও জুলুম করা হবে না। তোমরা সেখানেই থাক সেখানেই তোমাদের মৃত্যু আসবে, তোমরা যত সুদৃঢ় দূর্গের মধ্যেই থাক না কেন? (সূরা নিসাঃ ৭৭-৭৮)
কালামে পাকের তিলাওয়াত মোহলীর অন্তরে ক্রিয়া করল। সে যুবককে জিজ্ঞেস করল, আমাদের জন্য সান্তনার কোন বাণী আছে কি? জবাবে সে নিম্নের আয়াত তিলাওয়াত করল-
قُلْ يَا عِبَادِيَ الَّذِينَ أَسْرَفُوا عَلَىٰ أَنفُسِهِمْ لَا تَقْنَطُوا مِن رَّحْمَةِ اللَّهِ ۚ إِنَّ اللَّهَ يَغْفِرُ الذُّنُوبَ جَمِيعًا ۚ إِنَّهُ هُوَ الْغَفُورُ الرَّحِيمُ
অনুবাদঃ হে নবী! আপনি বলে দিন যে, হে আমার বান্দারা! তোমরা যারা নিজেদের প্রতি জুলুম করেছ, তোমরা আল্লাহ তায়ালার রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না, নিঃসন্দেহে আল্লাহ অতীতের সমস্ত গুনাহ মাফ করে দিবেন। নিশ্চয় তিনি বড় ক্ষমাশীল, দয়ালু। (সূরা যুমারঃ ৫৩)
মোহলী উপরোক্ত আয়াত শুনে বিকট স্বরে চিৎকার দিয়ে সাথে সাথে প্রাণ হারাল।
মোহলী তার সম্প্রদায়ের বিখ্যাত লোক ছিল। তার লাশ দেশে নিয়ে যাওয়ার পর সমগ্র এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এল তার নামাযে জানাজায় এল লোক সমাগম হল যে, ইতিপূর্বে ঐ এলাকায় অন্য কারো নামাযে জানাজায় এত লোক সমাগম হয়নি।
বর্ণনাকারী বলেন, মোহলীর ইন্তেকালের পর তার দাসী একটি পশমী জামা গায়ে দিয়ে বের হয়ে পড়ল। সে দিনের রোজা রাখত আর রাতভর ইবাদত করে কাটিয়ে দিত। এভাবে তার দীর্ঘ চল্লিশ বছর কেটে গেল। এক রাতে তিলাওয়াত করতে করতে এই আয়াত পর্যন্ত এসে পৌছল-
وَقُلِ الْحَقُّ مِن رَّبِّكُمْ ۖ فَمَن شَاءَ فَلْيُؤْمِن وَمَن شَاءَ فَلْيَكْفُرْ ۚ إِنَّا أَعْتَدْنَا لِلظَّالِمِينَ نَارًا أَحَاطَ بِهِمْ سُرَادِقُهَا ۚ وَإِن يَسْتَغِيثُوا يُغَاثُوا بِمَاءٍ كَالْمُهْلِ يَشْوِي الْوُجُوهَ ۚ بِئْسَ الشَّرَابُ وَسَاءَتْ مُرْتَفَقًا
অনুবাদঃ আর আপনি বলে দিন, সত্য তোমাদের রবের পক্ষ হতে এসেছে। সুতরাং যার ইচ্ছা ঈমান আনুক, আর যার ইচ্ছা সত্য প্রত্যাখ্যান করুক, নিশ্চয় আমি জালিমদের জন্য অগ্নি প্রস্তুত করে রেখেছি। যার আবরণী তাদেরকে পরিবেষ্টন করে থাকবে। আর তারা পানীয় চাইলে এমন পানীয় তাদের দেয়া হবে, যা তৈলের গাদের ন্যায় হবে এবং মুখমণ্ডলকে দগ্ধ করে ফেলবে। তা কতই না নিকৃষ্ট পানীয় এবং সে জাহান্নামও কতই না নিকৃষ্ট আশ্রয়। (সূরা কাহফঃ ২৯)
উপরোক্ত আয়াত তিলাওয়াত করার সাথে সাথে সে প্রাণ ত্যাগ করল। সকালে আশেপাশের লোকেরা এসে তার লাশ উদ্ধার করল।