ফেসবুকে তো জ্যান্ত মানুষের সঙ্গে অনেক চ্যাট করলাম। ভাবলাম মৃত মানুষের আত্মার সঙ্গে একটু চ্যাট করলে কেমন লাগে! যার কেতাবি নাম ‘প্ল্যানচ্যাট’। মোশাহিদ ভাইয়া, তুহিন ভাই, আরিফ ভাই, জামিল ভাই আর জন্টু ভাই তো চ্যাট করতে এক পায়ে খাড়া! শ্মশানের পাশেই একটা দাওয়ায় বিছানা ফেলে গোল হয়ে বসে পড়লাম।রাত তিনটা।
সুনসান নিরবতা। মাঝে মাঝে দু’একটা ঝিঁ ঝিঁ পোকা ডাকছে। বিদ্যুত নেই। ঘুটঘুটে অন্ধকার। চাঁদের আবছা্ আলো অল্পস্বল্প দেখা গেলেও তা অস্পষ্ট।
চ্যাট শুরুর আগে ঠিক করা হলো কার আত্মাকে আমরা আনবো। আমি রবিঠাকুর, তো আরেকজন আইনস্টাইন! তালগোল পাকিয়ে গেল। ওরা তো ম্যালা দুর থাকে। আসতে রাত পেরিয়ে যাবে। তার চেয়ে বরং মন্দিরের স্বর্গীয় পুরোহিতকে ডাকা হোক। শর্ত ছিলো যাকে ডাকবো তার ছবিটা অন্তত মনে গেঁথে রাখা। পাশেই পুরোহিতের একটা ছবি টাঙানো ছিলো।
আবছা আলোয় খুব কাছে চোখ লাগিয়ে একবার দেখে নিলাম। জামিল ভাই কামরুপ কামাক্ষা ফেরত তান্ত্রিক। শুরু করলে তন্ত্রমন্ত্র! ওয়াছ..খা..কু..ছু..মু..তু..! তিন চারটা মন্ত্র পাঠের আগেই পুরোহিতের আত্মা হাজির হলো। ভর করলো আরিফ ভাইয়ের উপর। তার আচরন অতিশয় রহস্যজনক। ঢুলে ঢুলে বলতে থাকলো, ‘আমি পুরোহিত।
বল আমাকে এখানে কেন ডেকেছিস? সবার লোম তো দাড়ায়ে গেছে! আত্মা চলে আসছে! মন্ত্রের কি জোড়! কি বলবো ভেবে পাচ্ছিনা। মুখ ফসকে কিছু বলে ফেললেই বিপদ।
তারা জ্ঞানী-গুনী মানুষ।
ভেবে চিন্তে জ্ঞানগর্ভ কথা বলতে হবে। তুহিন ভাই জিজ্ঞাসা করলেন, ‘কতদিন আগে গত হয়েছেন?’ আরিফ ভাইয়ের মুখ দিয়ে পুরোহিত বললেন, ‘৪০০ বছর আগে!’ বলেই আরিফ ভাই এলোপাতাড়ি হাত নাড়াতে শুরু করলো।
কি করি! সাংঘাতিক কান্ড! আত্মা তো দেখি রেগে গেছে! কারে যেন দুটা কিল বসিয়ে দিলো। ভয়ে ভয়ে আমি জিজ্ঞাসা করলাম, ‘মৃত্যুর পর আপনাদের জীবনটা কেমন কাটছে?’ আরিফ ভাইয়ের মুখবন্ধ। কিছু কয়না। ভাবলাম মাইন্ড করছে। কিন্তু একটু পর হো হো অট্টহাসিতে ফেটে পড়লেন। এই বার আর রক্ষা নেই।
এবার মনে হয় খারাপ আত্মা ভর করছে! সবগুলারে তো মাইরা ফেলবে! তারও মিনিট খানেক পর আমরাও আত্মার সেঙ্গে অট্টহাসিতে ফেটে পড়লাম। গড়িয়ে গড়িয়ে সবটি মিলিয়ে হাসলাম।
ঘটনা কি? আমরাও পাগল হয়ে গেলাম? নাকি আমাদেরও বদ আত্মা ভর করছে? নাহ! আমাদের কোন আত্মা ভর করেনি। এমনকি আরিফ ভাইয়ের উপ্রেও না। বৈঠকে কোন আত্মা আসেনি। সবটাই আরিফ ভাইয়ের অলস মস্তিস্ক প্রসূত কান্ড কারখানা ..
"আলোর পথ"-এ প্রকাশিত গল্পসমূহ ও লেখনী মূলত পাঠক, শুভাকাংখী এবং সম্মানিত আবেদনকারীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। এই কনটেন্টগুলোর উপর আমরা কোনো মেধাসত্ত্ব (copyright) দাবি করি না। যদি কোনো গল্প, ছবি বা তথ্যের কপিরাইট সংক্রান্ত বিষয়ে আপনার প্রশ্ন, সংশয় বা আপত্তি থাকে, তাহলে অনুগ্রহ করে আমাদের যোগাযোগ পৃষ্ঠায় যোগাযোগ করুন। আমরা যথাযথ আইনানুগ পদ্ধতিতে বিষয়টি পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।