হযরত জাফর (রাঃ) ও অন্যান্য সাহাবা (রাঃ) দের প্রথম হাবশায় ও পরে মদীনায় হিজরত – পর্ব ৪

হযরত জাফর (রাঃ) ও অন্যান্য সাহাবা (রাঃ) দের প্রথম হাবশায় ও পরে মদীনায় হিজরত – পর্ব ৩ পড়তে এখানে ক্লিক করুন

হযরত উম্মে সালামা (রাঃ) বলেন, হযরত জাফর (রাঃ) ইসলামের বিষয়গুলি নাজাশীর নিকট উল্লেখ করিলেন। অতঃপর বলিলেন আমরা তাঁহাকে সত্য বলিয়া স্বীকার করিয়াছি, তাঁহার উপর ঈমান আনিয়াছি এবং তিনি যাহা কিছু লইয়া আসিয়াছেন, তাঁহার অনুসরণ করিয়াছি। আমরা এক আল্লাহর এবাদত করিয়াছি, তাহার সহিত কোন জিনিসকে অংশীদার করি নাই।

আল্লাহ তায়ালা যাহা কিছু আমাদের জন্য হারাম করিয়াছেন, তাহাকে হারাম মনে করিয়াছি এবং যাহা তিনি আমাদের জন্য হালাল করিয়াছেন, তাহাকে হালাল জানিয়াছি। এই কারণে আমাদের কওম আমাদের উপর অত্যাচার করিতে আরম্ভ করিল। তাহারা আমাদিগকে বিভিন্ন উপায়ে শাস্তি দিল এবং আমাদিগকে আমাদের দ্বীন হইতে ফিরাইয়া আল্লাহর এবাদতের পরিবর্তে মূর্তিপূজা করাইবার জন্য নানা প্রকারে উৎপীড়ন করিল।

তাহারা চাহিল যে, আমরা পুনরায় সেই সকল খারাপ কাজকে বৈধ মনে করি, যাহাকে আমরা পূর্বে বৈধ মনে করিতাম। তাহারা যখন আমাদের উপর এই ব্যাপারে অত্যাধিক চাপ সৃষ্টি করিল এবং জুলুম অত্যাচার করিল, আমাদের জীবন দুর্বিসহ করিয়া দিল এবং আমাদের দ্বীনের উপর চলার পথে বাঁধা হইয়া দাঁড়াইল, তখন হে বাদশাহ, আমরা আপনার দেশে বাহির হইয়া আসিয়াছি। অন্যের পরিবর্তে আপনাকে গ্রহণ

করিয়াছি এবং আপনার প্রতিবেশী হইয়া থাকাকে পছন্দ করিয়াছি। আমরা আশা করিয়াছি যে, আপনার এখানে আমাদের উপর জুলুম হইবে না।

হযরত উম্মে (রাঃ) বলেন, নাজাশী বলিল, তোমাদের নবী আল্লাহর নিকট হইতে যে কালাম লইয়া আসিতেছেন উহার কিছু কি তোমার স্মরণ আছে? হযরত জাফর (রাঃ) বলিলেন, হ্যাঁ, স্মরণ আছে। নাজাশী বলিল, তাহা পড়িয়া শুনাও। হযরত জাফর (রাঃ) কাফ-হা-ইয়া-আঈন-সাদ (অর্থাৎ সূরা মারইয়াম)এর প্রথম হইতে কয়েকটি আয়াত পড়িয়া শুনাইলেন।

নাজাশী তিলাওয়াত শুনিয়া কাঁদিতে লাগিল এবং কাঁদিতে কাঁদিতে তাহার দাড়ি ভিজিয়া গেল। তাহার পাদ্রীগণও কাঁদিল এবং কান্নায় তাহাদের কিতাবসমূহ ভিজিয়া গেল। অতঃপর নাজাশী বলিল, এই কালামও হযরত মূসা (আঃ) কর্তৃক আনীত কালাম, একই নূরের তাক হইতে বাহির হইয়াছে।

নাজাশী (কোরাইশের প্রতিনিধিদ্বয়কে উদ্দেশ্য করিয়া) বলিল, তোমরা এখান হইতে চলিয়া যাও। আল্লাহর কসম, আমি উহাদিগকে তোমাদের হাতে তুলিয়া দিতে পারি না, বরং তোমাদের হাতে তুলিয়া দিবার কথা চিন্তাও করিতে পারি না।

হযরত উম্মে সালামা (রাঃ) বলেন, নাজাশীর দরবারে হইতে বাহির হইয়া আসিবার পর আমর ইবনে আস তাহার সঙ্গীকে বলিল, আল্লাহর কসম, আগামীকাল নাজাশীর দরবারে আসিয়া আমি মুসলমানদের এমন দোষ বর্ণনা করিব যে, তাহাদের জামাতের মূলোৎপাটন করিয়া ছাড়িব। উভয়ের মধ্যে আবদুল্লাহ ইবনে আবি রাবীআহ আমাদের ব্যাপারে অপেক্ষাকৃত নরম ও সৎপ্রকৃতির ছিল।

আবদুল্লাহ আমারকে বলিল, এমন করিও না, ধর্ম পরিত্যাগ করিয়া আমাদের বিরুদ্ধাচরণ করিলেও তাহারা তো আমাদেরই আত্মীয়। আমর বলিল, আল্লাহর কসম, আমি নাজাশীকে অবশ্যই বলিব যে, তাহারা হযরত ঈসা ইবনে মারইয়াম (আঃ) কে আল্লাহর বান্দা বলিয়া বিশ্বাস করে। অতএব পরদিন আমর নাজাশীর দরবারে উপস্থিত হইয়া বলিল, হে বাদশাহ, এই মুসলমানগণ হযরত ঈসা ইবনে মারইয়াম (আঃ) সম্পর্কে অনেক বড় বেয়াদবীমূলক কথা বলিয়া থাকে। আপনি তাহাদিগকে ডাকাইয়া জিজ্ঞাসা করুন, হযরত ঈসা ইবনে মারইয়াম (আঃ) সম্পর্কে তাহারা কি বলে? সুতরাং নাজাশী হযরত ঈসা (আঃ) সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করিবার জন্য লোক মারফৎ মুসলমানদিগকে ডাকিয়া পাঠাইল।

হযরত উম্মে সালামা (রাঃ) বলেন, আমাদের উপর এরূপ কঠিন অবস্থা আর আসে নাই। মুসলমানগণ সকলেই সমবেত হইয়া পরস্পর একে অপরকে জিজ্ঞাসা করিতে লাগিলেন, নাজাশী যখন তোমাদিগকে হযরত ঈসা (আঃ) সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করিবে তখন তোমরা কি উত্তর দিবে? মুসলমানগণ এই সিদ্ধান্তে উপনীত হইলেন যে, আল্লাহর কসম, আল্লাহ তায়ালা তাঁহার সম্পর্কে যাহা বলিয়াছেন এবং আমাদের নবী কারীম (সাঃ) যাহা লইয়া আসিয়াছেন আমরা তাহাই বলিব।

আমরা সত্য কথা বলিব তারপর যাহা হইবার হইবে। অতএব মুসলমানগণ দরবারে উপস্থিত হইলে, নাজাশী জিজ্ঞাসা করিল, তোমরা হযরত ঈসা ইবনে মারইয়াম (আঃ) সম্পর্কে কি বল? হযরত জাফর (রাঃ) ইবনে আবি তালিব (রাঃ) নাজাশীর প্রশ্নের জবাবে বলিলেন, আমাদের নবী মুহাম্মাদ (সাঃ) যাহা কিছু লইয়া আসিয়াছেন, আমরা তাহার ব্যাপারে সেই কথাই বলিয়া থাকি। তিনি আল্লাহর বান্দা, তাহার রাসূল, ও তাঁহার সৃষ্ট রূহ।

সূত্রঃ হায়াতুস সাহাবা

হযরত জাফর (রাঃ) ও অন্যান্য সাহাবা (রাঃ) দের প্রথম হাবশায় ও পরে মদীনায় হিজরত – পর্ব ৫ পড়তে এখানে ক্লিক করুন

You may also like...

দুঃখিত, কপি করবেন না।