হযরত আহমদ হারব (রঃ) – পর্ব ২
হযরত আহমদ হারব (রঃ) – পর্ব ১ পড়তে এখানে ক্লিক করুন
তিনি হযরত হারব (রঃ)-কে সব খুলে বললেন, আর এ ঘটনা শুনে খুশী মনে তিনি বললেন, আজ থেকে আল্লাহ নিজের হাতে তার দায়িত্বভাব তুলে নিয়েছেন। তিনিই তাকে খাদ্য যুগিয়েছেন। অতএব আগামীকাল থেকে তোমাকে আর কিছু দিতে হাবে না। মাধ্যম ছাড়াই আল্লাহ সব কিছু করে দেবেন।
হযরত হারব (রঃ)-এর মতো এক আলোকিত পুরুষের কণ্ঠে পবিত্র কালাম শুনে এক জ্ঞান-তাপসের হৃদয় আলোকিত হয়ে যায়। আর সে আলোর রোশনাই চল্লিশ বছর ধরে তাঁর বুকের তলায় বিরাজ করে। তিনি বলেন, সে কালাম আমি কোন ক্রমেই বিস্তৃত হতে পারি না।
নিশাপুর থেকে কয়েকজন নেতৃস্থানীয় ব্যক্তি তাঁর সঙ্গে দেখা করতে এলেন। তাঁর আদর-আপ্যায়নের কোন ত্রুটি হল না। কিন্তু তাঁর এক পুত্র মদ পান করে মাতালবস্থায় বেহালা বাজাতে বাজাতে অতিথিদের চোখের ওপর দিয়ে চলে গেল। এতটুকু সম্মান দেখাল না।
বলাবাহুল্য, অতিথিগণ অত্যন্ত ক্ষুণ্ণ হলেন। তাঁদের মনের অবস্থা উপলব্ধি করে তিনি জানালেন, আমার ছেলেটি এমন এক রাতে মায়ের গর্ভে আসে, যে রাতে আমি কিছু খাদ্য গ্রহণ করেছিলাম, যা পরে জেনেছি, এসেছিল রাজ-অন্তঃপুর থেকে। রাজবাড়ী থেকে প্রেরিত অবৈধ খাদ্যই আমার এ কুপুত্রের জন্ম। আপনারা আমাকে ক্ষমা করুন।
হযরত আহমদ হারব (রঃ)-এর এক অগ্নি উপাসক প্রতিবেশী ব্যবসা উপলক্ষে দেশ-বিদেশ সফর করতেন। একবার বিদেশে তার বাণিজ্য-পুণ্য লুট হয়। এ খবর পেয়ে হযরত হারব (রঃ) সশিষ্য তাঁর বাড়ীতে গেলেন সমবেদনা জানাতে। দেশে তখন দুর্ভিক্ষ চলছিল। প্রতিবেশী বণিক ভাবলেন, উপবাসী তাপস বুঝি অনুগামীদের নিয়ে কিছু খাদ্য প্রার্থনা করতে এসেছেন। কাজেই তিনি খুব তাড়াতাড়ি তাঁদের খাবারের আয়োজন করতে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন। কিন্তু আহমদ হারব (রঃ) বললেন, ব্যস্ত হবার দরকার নেই। তাঁরা খাবার খেতে আসেননি। বরং এসেছেন তাঁর বিপদের কথা জানতে। তাঁর নাকি মাল-পুত্র লুট হয়েছে? প্রতিবেশী বললেন, হ্যাঁ। তবে মাল লুট হওয়া সত্ত্বেও তিনটি কারণে আমি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করি। প্রথমতঃ অন্য লোকে আমার জিনিসপত্র লুট করেছে, কিন্তু আমি কোনদিন কারও কিছু লুট করিনি। দ্বিতীয়তঃ আমার অর্ধেক মাল রক্ষা পেয়েছে। তৃতীয়তঃ আমার পার্থিব মালপত্র লুট হয়েছে বটে, কিন্তু পরকালের সব কিছুই রয়ে গেছে।
সূত্রঃ তাযকিরাতুল আউলিয়া