হযরত আবু হাফস হাদ্দাদ খোরাসানী (রঃ) – পর্ব ২

হযরত আবু হাফস হাদ্দাদ খোরাসানী (রঃ) – পর্ব ১ পড়তে এখানে ক্লিক করুন   

আয়াতটি শুনে কর্মকার জ্ঞানশূন্য হয়ে পড়ল। ডুবে গেলেন গভীর ভাবনান্ময়তায়। আর ঐ অবস্থায় একখণ্ড তপ্ত লোহা হাতে তুলে নিয়ে তাঁর সহকারীদের সেটি হাতুড়ি দিয়ে পেটাতে

বললেন। অবস্থা দেখে তারাও হতভম্ব। এ তিনি কী করছেন। গনগনে লাল লোহা তুলে নিয়েছেন হাতের তালুতে। হাতুড়ির ঘা পড়বে কোথায়? কিছুক্ষণ পরে তাঁর অবস্থা যখন স্বাভাবিক হল, তখন হাতের লোহা ছুঁড়ে ফেলে দিলেন। আর সেদিন থেকে দোকানের ঝাঁপই বন্ধ হয়ে গেল তাঁর মালপত্র যা ছিল। সবই বিলিয়ে দিলেন। বললেন, চেয়েছিলাম গোপন রহস্য গোপন থাকবে। কিছু থাকল না। আল্লাহ পাকের কী ইচ্ছা, তিনিই জানেন।

এই কর্মকার তথা গোপন সিদ্ধপুরুষের নাম হযরত আবু হাফস হাদ্দাম খোরাসানী (রঃ)। প্রখ্যাত দরবেশ হযরত আবু ওসমান জাররী (রঃ)-এর মুর্শিদ। তাপস প্রবর শাহা গুজা কেরমানীও তাঁর সংস্পর্শে আসেন। তাঁরা দুজনেই খোরাসান থেকে বাগদাদে গিয়ে বিশিষ্ট সাধক-দরবেশের কাছে আধ্যাত্মিক জীবনের পাঠ গ্রহণ করেন।

এক প্রতিবেশীর বাড়ীতে হাদিস পাঠ হচ্ছে। পাঠ করছেন এক মুহাদ্দিস। হযরত আবু হাফস (রঃ)-কে শোনার জন্য বলা হয়। কিন্তু তিনি রাজি হলেন না। বললেন, ত্রিশ বছর আগে তিনি একটি হাদিস শুনেছেন। কিন্তু এখনও তা পুরোপুরি চর্চা করতে পারেননি। আর হাদিস শুনে কী হবে?

তারা বললেন, ত্রিশ বছর আগে শোনা সে হাদিসটি কি? তিনি বললেন, এও এক সৌন্দর্য যে, কোন ব্যক্তি যে বিষয় তার কোন কাজে না আসে তা পরিত্যাগ করা।

একবার এক অরণ্যে শিষ্য তিনি ধ্যানমগ্ন। একটা হরিণ এসে তাঁর কোলে মাথা গুঁজে চুপ করে দাঁড়িয়ে রইল। আর এ ঘটনায় হযরত আবু হাফস (রঃ) কাঁদতে শুরু করলেন। কাঁদছেন তো কাঁদছেনই। সে কান্না চলল দীর্ঘক্ষণ। আর ঐ অবুঝ প্রাণীটি কী বুঝল কে জানে, তাঁর কান্না দেখে যেমন এসেছিলে, তেমনি চলে গেল। তাঁর শিষ্যরা এবার তাঁকে ধরে বসলেন, এর রহস্য কী হুজুর!

তিনি বললেন, আল্লাহর ধ্যান শুরু করার সময় তাঁর মনে একটা ইচ্ছা জাগে, যদি আল্লাহ একটি ছাগল জুটিয়ে দেন তো সেটিকে জবাই করে মাংস রান্না করে শিষ্যদের বেশ তৃপ্তি সহকারে খওয়ান যাবে। আর এই ইচ্ছার স্ফুরুণ ঘটার সঙ্গে সঙ্গে হরিণ এসে যা করল তা তো সবাই দেখলেন।

এটা তো বেশ আনন্দের কথা, শিষ্যরা বললেন। কিন্তু খুশী না হয়ে আপনি ওভাবে কাঁদতে লাগলেন কেন?

তিনি বললেন, হরিণের আগমনে তাঁর মনে হল, এই নিরীহ প্রাণীটি বুঝি তাঁকে আল্লাহর ধ্যান থেকে সরিয়ে নিতে এসেছে। কেননা, আল্লাহ যদি মিসর অধিপতি ফেরাউনের হিত কামনা করতেন তাহলে ফেরাউনের ইচ্ছা ও আদেশক্রমে নীল নদীর পানির প্রবাহ বন্ধ এবং প্রবাহিত হত না।

সূত্রঃ তাযকিরাতুল আউলিয়া

হযরত আবু হাফস হাদ্দাদ খোরাসানী (রঃ) – পর্ব ৩   পড়তে এখানে ক্লিক করুন   

You may also like...

দুঃখিত, কপি করবেন না।