হযরত ইমাম আবু হানিফা (রঃ)-পর্ব ১
একবার কয়েকজন এলেন এক সুবিখ্যাত ইমামের কাছে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন নিয়ে। প্রশ্নটি হল, একজন পুরুষের এক সঙ্গে চার জন স্ত্রী রাখার অনুমোদন আছে। কিন্তু স্ত্রী এক সঙ্গে দু’জন স্বামী গ্রহণ করতে পারে না, এর কারণ কি?
গুরুতর প্রশ্ন। ইমাম সাহেব সেই মুহুর্তে এর উত্তর দিতে পারলেন না। তিনি অন্তঃপুরে এলেন। আর তাঁর বিদুষী বুদ্ধিমতী কন্যার কাছে প্রশ্নটি উত্থাপণ করলেন। কন্যা বলেলন, আপনি যদি আপনার নামের সঙ্গে আমার নামটি যুক্ত করেন, তাহলে আমি এর সন্তোষজনক উত্তর দিতে পারি। পিতা তাঁর প্রস্তাবে রাজি হয়ে গেলেন। বললেন, মহিলাদের তোমার কাছে পাঠিয়ে দিচ্ছি মা। তুমি তাঁদের বিষয়টি বুঝিয়ে দেবে।
তাই হল। মহিলারা তাঁর কাছে এলেন। তিনি তাঁদের সবাইকে একটি ঘরে পেয়ালায় কিছু দুধ আনতে বললেন, দুধ আনা হল। এবার অন্য একটি বড় পেয়ালায় প্রত্যেকের আনা দুধ ঢালতে বলা হল। মহিলারা তাও করলেন। সকলের আনা দুধ বড় পেয়ালার মিশে গেল। তিনি আবার বললেন, এবার আপনারা যে যতটুকু দুধ এনেছেন আলাদা করে দিন।
তাঁরা বললেন, তা কি সম্ভব?
তিনি বললেন, তা যদি সম্ভব না হয় তাহলে আপনারই বলুন, কোন এক মহিলার একাধিক স্বামী থাকলে আর সন্তান ভূমিষ্ট হলে তা কোন স্বামীর সন্তান তা চেনবার উয়াপ কী?
এ প্রশ্নের আর উত্তর দেবার দরকার হল না। মহিলারা বললেন, প্রশ্নের জবাব আমরা পেয়ে গেছি খুব খুশী হয়ে ইমাম দুহিতার বুদ্ধিমত্তার প্রশংসা করতে করতে তাঁরা চলে গেলেন। খুশী ইমাম সাহেবও। তাঁর কথামতো ঐ দিন থেকেই তিনি তাঁর প্রিয় কন্যার নাম নিজের নামের সঙ্গে জুড়ে দিলেন। তার নতুন নাম হল আবু হানিফা। অর্থাৎ হানিফার পিতা। কন্যার নাম ছিল হানিফা। মহাকালের পৃষ্ঠায় পিতা-পুত্রীর নাম চিরদিনের মতো মুদ্রিত হয়ে গেল।
বিশ্ব- নন্দিত ইমাম আবু হানিফা (রঃ)- এর আসল নাম নো’মান। পিতার নাম সাবিত। আর চিরভাস্কর উপাধি হল ইমাম আজম- ইমামগণের ইমাম, শ্রেষ্ঠ ইমাম। তাঁর সূর্যসম প্রতিভার আলোক- ধারায় শুধু শরীয়তের আর মারেফাতই উদ্ভাসিত হয়নি। পবিত্র কোরআন ও সুন্নাহর অন্তজ্যোতিও বিস্তীর্ণ হয়েছে। সূক্ষাতিসূক্ষ্ম মাসআলা- সমূহের সমাধানে ও জটিলতম বিষয়-সমূহের মর্মোদঘাটনে তিনি যে নৈপুণ্য ও পারদর্শিতা দেখিয়েছেন, জগতে তাঁর কোন তুলনা নেই। বিরল সৌভাগ্যের অধিকারী এই মহাপন্ডিত সাহাবায়ে কেরাম ও শ্রেষ্ঠ ওলী আল্লাহর প্রত্যক্ষ সাহাচর্য লাভ করেন। যাদের সাহায্য লাভ করেন তাঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন- আনাস ইবনে মালেক, জাবার ইবনে আবদুল্লাহ ইবনে রুমি, ওয়াসেক বিন ওয়াকারা (রঃ) প্রমুখ। জাফর সাদেক (রঃ) তাঁর পরম বন্ধু ছিলেন। হযরত ফোজায়েল (রঃ) ইব্রাহীম আদহাম (রঃ) বিশর হাফী (রঃ) প্রমুখ তাপদগণের তিনি ছিলেন মারফাত বিদ্যার শিক্ষক। আর শরীয়তী শিক্ষাধারায় তাঁর উজ্জ্বল শিষ্যগণ হলেন ইমাম শাফেয়ী (রঃ), ইমাম আবু ইউসুফ (রঃ) ও ইমাম মুহাম্মদ (রঃ) অন্যান্য জ্যোতিষ্ক। কথিত আছে, পাক রওজায় উপস্থিত হয়ে তিনি রাসূলুল্লাহ (সাঃ) কে সম্বোধন করে বলেন, আসসালামু আলাইকুম ইয়া সাইয়িদাল মুরসালিন- হে রাসূলগণের সর্দার, আপনার উপর শান্তি বর্ষিত হোক।
সূত্রঃ তাযকিরাতুল আউলিয়া