কাবুসের সৌভাগ্য- শেষ পর্ব
চলৎশক্তি সম্পূর্ণরূপে রহিত হয়ে এসেছিল। ঠিক এ মুহূর্তে পাথের পাশে একটি তরমুজ ক্ষেত দেখতে পেয়ে তাদের মনে কিছু আসার সঞ্চার হল। ক্ষেতটি সুপক্ক তরমুজে পরিপূর্ণ ছিল। ক্ষেতের মালিক লোকজন নিয়ে ক্ষেত্রে পানি সেচ কাজে ব্যস্ত ছিল। তার নিকটি উপস্থিত হয়ে নিজেদের দুরবস্থার কথা ব্যক্ত করে ক্ষুধা নিবারণের জন্য দুটি তরমুজ ভিক্ষা চাইল। ক্ষেতের মালিক দয়া করে তাদেরকে তরমুজ খেতে দিল। তারা পেট ভরে তরমুজ খেয়ে ক্ষুধার জ্বালা নিবারণ করল।
অতঃপর তারা উক্ত কৃষকের কাছে কোন একটি কাজের জন্য অনুরোধ জানালে সে বলল যে, আমার ক্ষেত হতে তরমুজ নিয়ে প্রতিদিন বাজারে বিক্রয় করে দিলে এর মজুরী বাবদ আমি কিছু দিব। তা দ্বারা তোমাদের বেশ চলে যাবে। যদি ইচ্ছা হয় তবে এ কাজ শুরু করতে পার।
তারা আর দ্বিরুক্তি না করে সে তরমুজ বিক্রয়ের কাজই শুরু করল। এ কার্যের মজুরী দ্বারা দু’বন্ধুর কোন রকম দিন চলতে লাগল।
কাবুসের ভাগ্য প্রসন্ন ছিল এবং তার বুকেও সাহস ছিল। একদা সে দেখল, মিশরের বাদশাহ স্বয়ং অশ্বপৃষ্ঠে সওয়ার হয়ে রাজপথ দিয়ে যাচ্ছেন। তখন কাবুসের মাথায় তরমুজের বোঝা ছিল। সে তা নামিয়ে রেখে দ্রুতবেগে গিয়ে বাদশাহর অশ্বের সম্মুখে দন্ডায়মান হল। বাদশাহ বললেন, তুমি কি চাও যুবক?
কাবুস বলল, জাঁহাপানা! আমি আপনার একটি হত ভাগ্যহীন প্রজা, সহায় সম্ববল আমার কিছুই নেই। দু’বেলার অন্ন সংস্থান করব এমন ব্যবস্থা নেই। আমার উপরে কৃপার দৃষ্টি প্রদান করুন।
বাদশাহ কাবুসের কথা শ্রবণ করে একবার তার আপাদমস্তক লক্ষ্য করতঃ বললেন, আচ্ছা তোমাকে চাকুরী দিলাম। অদ্য হতে তুমি সরকারী গোরস্থানের প্রধান প্রহরী নিযুক্ত হলে। যাও যথাযথ ভাবে দায়িত্ব পালন করো।
প্রধান মন্ত্রী তার প্রতি খুশী হয়ে তাঁকে প্রধান নগর রক্ষক পদ দান করলেন। কাবুস তখন গোরস্থানের প্রহরি পদটি হামানের কাছে ন্যস্ত করল। এবার হামান তার কু-কার্যগুলো বর্জন করে চাকুরীতে মনোনিবেশ করল এবং তার অসৎ বুদ্ধি দ্বারা বেশ পয়সা উপার্জন করল।
কাবুসের এবারের চাকুরীটি ছিল উচ্চস্তরের এবং এতে উপার্জন ছিল অনেক বেশী। সুতরাং সে কয়েক দিনেই বহু সম্পদের মালিক হল। অর্থ-সম্পদের সাথে সাথে তার খ্যাতি-সুনামের লালসা জেগেছিল। অতএব সে এ পদ লাভ করেই বহু জনকল্যাণ মূলক কাজ আরম্ভ করল। তার কর্মকুলতা এবং যোগ্যতার অভাবে ছিল না।
কাজেই তার উপরে অর্পিত দায়িত্ব এবং কর্তব্যসমূহ সে অত্যন্ত দক্ষতার সাথে পালন করত। এতে কিছুদিনের ভিতরেই সে মিশর রাজার দৃষ্টি আকর্ষণ করল এবং তাঁর প্রিয়পাত্র হয়ে পড়ল। ক্রমে অবস্থা এমন দাঁড়াল যে, কাবুসের কর্মদক্ষতাগুণে বাদশা তাকে বিশেষ যোগ্য এবং বিচক্ষণ ব্যক্তি বলে মনে করলেন ও দেশের গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার সমূহের পরামর্শ সভায়ও তাকে আহ্বান করতে লাগলেন।