হযরত ইব্রাহীম (আঃ) –এর জন্ম-শেষ পর্ব

হযরত ইব্রাহীম (আঃ) সাত বছর বয়সে একদিন রাত্রিবেলায় গুহার বাইরে এসে আকাশে অসংখ্য তারকা ও চন্দ্র দেখতে পান। তখন তিনি মনে করেন এই বুঝি আল্লাহ তা’য়ালার রূপ ও সৌন্দর্য। ভোর বেলা যখন তারকা ও চন্দ্র ডুবে গেল এবং সূর্য উদয় হল তখন তিনি সূর্য দেখে ভাবলেন এটা বুঝি আমার প্রভু। পরে যখন সূর্য অস্ত গেল, তখন তিনি বললেন আমার প্রভু এভাবে ক্ষণে ক্ষণে পরিবর্তন হতে পারে না। নিশ্চয়ই তিনি এসমস্তের পরিচালক ও স্রষ্টা। অতঃপর তিনি দৃঢ় কন্ঠে বললেন, হে মানব সন্তান! তোমরা চন্দ্র, সূর্য ও নক্ষত্রের পূজা অর্চনা করছ এবং প্রকৃত আল্লাহর সাথে শরীক করছ। আমি তোমাদের সাথে নেই। আমি এ সমস্ত থেকে মুখ ফিরিয়ে মহান রব্বুল আ’লামীনের দিকে মনোনিবেশ করছি, যিনি জমিন ও আসমান সৃষ্টি করেছেন। যিনি পবিত্র ও মহান। আমি কখনো মুশরিকদের দলভুক্ত নই।

আরো কিছুদিন অতিবাহিত হবার পরে হযরত ইব্রাহীম (আঃ) পর্বত গুহা ত্যাগ করে লোকালয়ে চলে আসলেন। সেখানে এসে দেখলেন মানুষ চন্দ্র, সূর্য ও দেব-দেবীর পূয়া অর্চনা করছে। নমরুদকে খোদা হিসেবে বিশ্ব স্বীকৃতি দিচ্ছে। এছাড়া আরো হাজার রকমের অনাসৃষ্টি কার্যকালাপ মানুষের মাঝে বিরাজমান। তখন তিনি মহা দুর্ভাবনায় পতিত হলেন। কি করে মানুষকে দ্বীনের পথে আনা সম্ভব, কি করে জাতির কল্যাণ সাধন করা যায় এবং কি করে মানুষকে অন্ধকারচ্ছন্নতার পঙ্কিলতা থেকে মুক্তি প্রদান করা যায়।

প্রথম দিকে মানুষকে তৌহিদের দাওয়াত দেন এবং দেব-দেবীর পূজার অসারতা সম্বন্ধে জ্ঞান দানের চেষ্টা করেন। এতে মানুষের পক্ষ থেকে তেমন একটা  সাড়া পেলেন না। কেউ তাঁর দাওয়াত কবুল করতে সম্মত হল না। অতঃপর তিনি ব্যক্তিগতভাবে মানুষকে বোঝানোর চেষ্টা করলেন। কিন্তু সেখানেও তিনি ব্যর্থ হলেন। তবুও তিনি হতাশ হলেন না, তাঁর প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখলেন।

ইতোমধ্যে হযরত ইব্রাহীম (আঃ) –এর পিতা তারেক এন্তেকাল করেন। তখন তাঁর চাচা আজর হযরত ইব্রাহীম (আঃ) –এর অবিভাবক হিসেবে তার দেখাশুনা করতেন। তখনকার দিনে আরবদেশে পিতার অবর্তমানে চাচাকে পিতা সম্বন্ধ করার রেওয়াজ ছিল। তাই তিনি একদিন আজরকে সম্বন্ধ করে বললেন, হে প্রিয় পিতা! তোমাদের হাতে তৈরি দেব-দেবী কখনো মানুষের প্রভু হতে পারে না। তারা মানুষের ভাল-মন্দ কিছুই করতে পারে না। ঐগুলোর পূজা-অর্চনা বাদ দিয়ে মহান রব্বুল আ’লামীনের প্রতি ঈমান আন। যিনি জমিন, আসমান, চন্দ্র, সূর্য ও গ্রহ নক্ষত্রের সৃষ্টিকর্তা ও প্রতিপালক।

আজর হযরত ইব্রাহীম (আঃ) –এর কথা শুনে বলল, বাছা! আমার প্রভু নমরুদ এবং দেব-দেবীগন আমাদের পরম পূজনীয়। দেব-দেবীকে অসন্তুষ্ট করে কেউ কোন দিন কল্যাণ লাভ করতে পারে না। দেব-দেবীদের শুভাশীষ মানুষের জীবনের পাথেয়। এটা উপেক্ষা করা নিজ অদৃষ্টকে দুর্বিপাকে ফেলার শামিল। হযরত ইব্রাহীম (আঃ) আজরের কথা শুনে ক্রোধান্বিত হলেন এবং বললেন, হে পিতা! আমি আল্লাহর নামে শপথ করে বলছি, আমি অচিরেই তোমাদের মন্দিরে রক্ষিত মূর্তিগুলোকে শায়েস্তা করব।

You may also like...

দুঃখিত, কপি করবেন না।