হযরত আইয়ুব (আঃ) এর কঠিন পরীক্ষা – পর্ব ২
হযরত আইয়ুব (আঃ) এর কঠিন পরীক্ষা – পর্ব ১ পড়তে এখানে ক্লিক করুন
এবাদত ঘরের সম্মুখ দিয়ে লোকজন যাতায়াতকালে বলেন, হে আইয়ুব! তুমি নবুয়তীর দাবি করে সমূলে ধ্বংস হয়ে গেলে। এর চাইতে নবুয়তি পরিত্যাগ করা তোমার জন্য মঙ্গলজনক ছিল। যেমন আমরা নবীও হই নি গজবেও পতিত হয়নি। এ ছাড়াও নানা ধারনের তাচ্ছিল্যমূলক কথা তারা বলে বেড়াত। হযরত আইয়ুব (আঃ) এ সমস্ত কথার প্রতি আদৌ ভ্রূক্ষেপ করতেন না। তিনি পূর্বে যতটুকু সময় মানুষের সাথে মেলামেশা করে কাটাতেন। তাও তিনি সম্পূর্ণ বন্ধ করে দিলেন।
শয়তান আর বসে থাকতে পারল না। সে এক দিন নবীর সাক্ষাত প্রার্থী হয়ে তাঁর নিকট পৌছাল এবং তাঁর শরীরে একটি গরম ফুঁক দিয়ে বিদায় হয়ে গেল। পরের দিন নবীর শরীরে ফোস্কার মত এক প্রকার ফোড়া উঠে ভোরে গেল। তিনি খুব অসুস্থ হয়ে পড়লেন। এবাদাত বন্দেগীতে কিছুটা বিঘ্ন সৃষ্টি হল। স্ত্রী রহিমা তাঁর সেবা-যত্ন আরম্ভ করে দিলেন। আস্তে আস্তে ফোড়াগুলো বড় হয়ে ক্ষতের সৃষ্টি করল। দীর্ঘ দিন এ অবস্থায় কাটানোর পরে শরীরের মাংসের মধ্যে এক প্রকার কীট দেখা গেল। আরো কয়েক দিন অতিবাহিত হবার পরে নতুন আরো দু’রকমের পোকার সৃষ্টি হল। এ পোকাগুলো নবীর শরীরের মাংস ও রক্ত খেতে আরম্ভ করল ।
অন্য দিকে নবীর স্ত্রীর জমা করা টাকা পয়সা সব কিছু শেষ হয়ে গেল। তাঁদের দারুন খাদ্য অভাব দেখা দিল। শুধু পানি পান করে স্বামী-স্ত্রী কয়েক দিন কাটালেন। তারপর আর ধৈর্য ধরতে পারলেন না। তখন বিবি রহিমা তাঁর স্বামী হযরত আইয়ুব (আঃ)-এর নিকট বললেন, এখন আমাদের আর কিছুই নেই। অতএব আমি গ্রামে গিয়ে মানুষের বাসায় কাজ করে যা উপার্জন করতে পারি তা দ্বারা অন্তত কিছু আহার্যের ব্যবস্থা করা সম্ভব হবে। অতএব আমাকে এ ধরনের কাজ করার অনুমতি দিন। হযরত আইয়ুব (আঃ) স্ত্রীর কথা শুনে অনেকক্ষণ কাঁদলেন তারপর তিনি স্ত্রীকে কাজের অনুমতি দিলেন।
এদিকে গ্রামবাসী হযরত আইয়ুব (আঃ)-এর শরীরের অবস্থা দেখে যেমন ভীত হল তেমনি ঘৃণার তাঁদের শরীর গিরগির করছিল। এছাড়া মাংস পচা গন্ধে মানুষ বেশি অতিষ্ট হয়ে উঠল। তাই তারা হযরত আইয়ুব (আঃ)-কে গ্রাম ছেড়ে অন্যত্র চলে যাবার জন্য চাপ দিল। হযরত আইয়ুব (আঃ)-এর সঙ্গে তখন তাঁর স্ত্রী সর্বক্ষণ থাকত এবং দুইজন মুসলমান শিষ্য আসা-যাওয়া করে তাঁর দেখাশুনা করত। গ্রামবাসীদের চাপের মুখে একদিন শিষ্যরা চেষ্টা করে হযরত আইয়ুব (আঃ)-কে বহন করে অন্য গ্রামে নিয়ে গেল। যেখানে গিয়ে তারা পৌছাল, একদিন পরে সেখানের লোকেরাও অন্যত্র যাবার জন্য বলল, শিষ্যেরা তখন হযরত আইয়ুব (আঃ)-কে নিয়ে আর এক গ্রামে পৌছাল। সেখানের মানুষ হযরত আইয়ুব (আঃ)-কে দেখা মাত্র অন্যত্র নিয়ে যেতে বলল। এভাবে শিষ্যরা সাত জায়গায় সাত গ্রামে হযরত আইয়ুব (আঃ)-কে নিয়ে ঘুরল। কিন্তু কোন মানুষ তাঁকে আশ্রয় দিল না।
তখন শিষ্যরা রাস্তার পাশে আবর্জনা ও ময়লা ফেলা এক স্থানে গাছের ছায়ায় হযরত আইয়ুব (আঃ)-কে রেখে শিষ্যরা বিদায় নিল। শিষ্যেরা আইয়ুব নবীকে প্রতাক্ষ করে নিজেরা বলাবলি করল, হযরত আইয়ুব (আঃ)- আল্লাহ্র নবী হওয়া সত্ত্বেও তাঁর এ ধারনের মুছিবত কেন আসল। অন্যজনে উত্তর দিল, হয় আল্লাহ্ তা’য়ালার মর্জির বিপরীত কিছু কাজ করেছেন না হয় নবীর এ পরিণাম হবার কথা নয়। প্রথম সঙ্গীর কথা শুনে বলল, নবী যখন আল্লাহ্র মনোনীত কার্যকলাপ থেকে বিচ্যূত হয়েছেন, তখন আর তাঁর পিছনে থেকে আমাদের লাভ নেই। চল আমরা এখান থেকে চলে যাই। দুই জনে এ ব্যাপারে একমত হন এবং হযরত আইয়ুব (আঃ)-কে গাছের নিচে রেখে তারা বিদায় গ্রহণ করল।
সূত্রঃ কুরআনের শ্রেষ্ঠ কাহিনী
হযরত আইয়ুব (আঃ) এর কঠিন পরীক্ষা – পর্ব ৩ পড়তে এখানে ক্লিক করুন