হযরত আইয়ুব (আঃ) এর কঠিন পরীক্ষা – পর্ব ১
মানুষ দ্বারা বিরোধিতা করে যখন শয়তান হযরত আইয়ুব (আঃ) এর কোন ক্ষতি সাধন করতে সক্ষম হল না তখন নিজে আল্লাহ্র দরবারে আরজ করে বলল, হে খোদা! আমি তোমার কছম খেয়ে বলতে পারি আইয়ুব নবী একমাত্র তোমার প্রদত্ত ধন-সম্পদের লোভে ও আরাম-আয়েশের তৃপ্তিতে তোমার এবাদাত বন্দেগী করে থাকে। যদি তাঁর এ ধন-সম্পদ ও সুখ শান্তি বিলিন হয়ে যায় তাহলে একদিনও সে এবাদাতে লিপ্ত হবে না। হে খোদা! তুমি নবীর উপর হস্তক্ষেপ করার মত ক্ষমতা আমাকে দাও। আমি একটু দেখি আইয়ুব তোমার কতটা বিশ্বস্ত নবী।
আল্লাহ্ তা’য়ালা শয়তানকে জানিয়ে দিলেন, যাও তোমাকে নবীর উপর হস্তক্ষেপ করার ক্ষমতা প্রদান করা হল। তোমার যে ভাবে ইচ্ছা সেভাবে নবীকে পরীক্ষা করতে পার। শয়তান আল্লাহ্র প্রদত্ত ক্ষমতা পেয়ে প্রথম একজন পথিক সেজে হযরত আইয়ুব (আঃ)-এর নিকট গমন করে। নিজ দরিদ্রতা প্রকাশ করে কয়েক দিন তাঁর দরবারে থাকার আবেদন জানায়। হযরত আইয়ুব (আঃ) লোকটি সম্বন্ধে সন্দেহ করেন। কারণ তাঁর শরীর থেকে এক প্রকার তীব্র গন্ধ তিনি অনুভব করেন।
অতএব হযরত আইয়ুব (আঃ) তাঁকে সেখানে থাকার আবেদন নাকচ করে দিলেন এবং বললেন, তোমাকে আমি কিছু টাকা পয়সা দিচ্ছি, তুমি অন্যত্র গিয়ে থাকার ব্যবস্থা কর। শয়তান হযরত আইয়ুব (আঃ) এ ব্যবহারে খুব ক্ষিপ্ত হল। তাই মলিন মুখে ফেরত গেল। তারপর সে একদিন নবীর ফল বাগানে আগুন ধরিয়ে দিল। অনেকগুলো ফল বাগান সে আগুনে ভষ্মীভূত হল। নবীর কাছে খবর পৌঁছান হল। নবী উত্তরে বললেন, আলহামদুলিল্লাহ্। পরের দিন শয়তান পশুর আস্তাবলে আবার আগুন ধরিয়ে দিল। যাতে মেষ, ছাগল, গরু, ঘোড়া ও উট দুম্বা সমৃলে বিনাস হয়ে গেল। সেখানে আগুন এক ঝড়ের আকারে সমস্ত মাঠে পরিব্যাপ্ত হয়ে পড়ে যাতে সমস্ত পশু মারা যায় এবং কিছু সংখ্যক রাখালও মৃত্যুর হাত থেকে রেহাই পায়নি। খরবটি দ্রুত হযরত আইয়ুব (আঃ)-এর নিকট পৌঁছান হল। তিনি খবর শুনে নামাযের নিয়তে দাড়িয়ে গেলেন। পরের দিন প্রবল এক ভূমিকম্পে তাঁর বাসস্থানের ইমারত বিদ্ধস্ত হয়। সে ইমারতে বসবাস করত হযরত আইয়ুব (আঃ) এর স্ত্রীগণ ও সন্তান-সন্ততি। তারা বিধ্বস্ত ইমারতের নিচে পড়ে মৃত্যুবরণ করলেন। হযরত আইয়ুব (আঃ) মোট চারটি বিবাহ করেছিলেন। তাঁর সন্তানের সংখ্যা ছিল বার। বিধ্বস্ত ইমারতের নিচে পড়ে তাঁর বারটি সন্তান এক সাথে মৃত্যুমুখে পতিত হলেন। হযরত আইয়ুব (আঃ) এর নিকট খবর পৌছাল। তিনি বললেন, ছোবাহান আল্লাহ্, আলহামদুলিল্লাহ্, লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ।
হযরত আইয়ুব (আঃ) –এর দুশমনেরা হযরত আইয়ুব (আঃ) এর এ অগ্নি পরীক্ষার দৃশ্য দেখে খুব খুশী হল। নবীর কর্মচারী ও লোকজনেরা অবস্থা দেখে বিভিন্ন দিকে চলে গেল। নবীর বাড়ি-ঘর, বাগান আস্তাবল শূন্য হয়ে গেল। এ সুযোগে শত্রুরা এসে আরম্ভ করল লুটতরাজ। বিধ্বস্ত বাড়ির সকল মালামাল তারা নিয়ে গেল। বাগানের বাকি ফসল নিয়ে তাঁদের মধ্যে কাড়াকাড়ি আরম্ভ হল। এক কথায় হযরত আইয়ুব (আঃ) এর আরাম-আয়েশ, সন্তান-সন্ততি ও ধন-সম্পদ সমুদয় সপ্তাহ কালের মধ্যে শেষ হয়ে গেল। চার জন স্ত্রীর মধ্যে দুইজন জীবিত ছিলেন। একজন নবীর সাথে তর্ক বিতর্ক করে বিদায় হয়ে গেলেন। বাকি থাকল একমাত্র রহিমা।
দেশের মানুষ নবীর নবুয়তী দাবির প্রতি তুচ্ছ তাচ্ছিল্য ও উপহাস আরম্ভ করে দিল। কেউ কেউ বলল, আইয়ুব যদি আল্লাহ্র নবী হত তাহলে তাঁর উপর এত
রকম গজব কেন নাজিল হল। সে আসলে নবী নয়। মিথ্যা নবুয়তী দাবির কারণে তাঁর উপর আল্লাহ্র গজব নাজিল হয়েছে। নবীর ভক্তদের মধ্যেও ভাঙ্গন শুরু হল। অবস্থা দেখে শয়তান তেমন খুশী হতে পারল না। কারণ সব কিছু শেষ হওয়ার পরেও আইয়ুব নবীর কোন পরিবর্তন হল না। তিনি এবাদত ঘরের মধ্যে থেকে পূর্বের ন্যায় এক রকমই এবাদাত করে যেতে লাগলেন। তিনি যেন তাঁর এ বিশাল ধ্বংসযজ্ঞের কোন খবরই রাখেন না। কোন রকম হা-হুতাশ বা আফসোসের চিহ্ন তাঁর মধ্যে পরিলক্ষিত হল না।
সূত্রঃ কুরআনের শ্রেষ্ঠ কাহিনী
হযরত আইয়ুব (আঃ) এর কঠিন পরীক্ষা – পর্ব ২ পড়তে এখানে ক্লিক করুন