হযরত ইউসুফ (আঃ)-এর বন্দী জীবন-১ম পর্ব
আজিজ মেছেরের হুকুমে জেল কর্মকর্তাবৃন্দ জোলেখার মহলে এসে পৌছাল। তারা জোলেখার নিকট আজিজ মেছেরের নির্দেশের কথা বলল। জোলেখা তখন ইউসুফ (আঃ)-কে উত্তম পোশাক-পরিচ্ছেদ পড়িয়ে, স্বর্ণের তাজ মাথায় পড়িয়ে এবং নানা ধরনের প্রসাধনী লাগিয়ে তাঁকে জেল কর্মকর্তার হাতে সোপর্দ করলেন। জেল কর্মকর্তা বললেন, “এত সমস্ত পোশাক পড়িয়ে ও সাজ-সজ্জা করে তাঁকে জেলে নিবার বিধান নেই। জেলের জন্য নিদিষ্ট পোশাক রয়েছে, তা পড়িয়ে তাঁকে জেলে নিতে হবে।” জোলেখা তাঁদের কথার উত্তরে বললেন, “ এ ব্যাক্তি কয়েদী নয় বরং সে নজরবন্দী।
তাঁকে শুধু জনসাধারণের দৃষ্টি থেকে দূরে রাখতে হবে যেন বাইরের কোন মানুষের সঙ্গে তাঁর কোন যোগাযোগ না ঘটে। জেল কর্মকর্তাবৃন্দ এ কথার পরে আর কোন বাদানুবাদ না করে তাঁকে কারাগারে নিয়ে গেলেন। কারাগারের সকল বন্দীরা হযরত ইউসুফ (আঃ)-এর আগমনের খবর শুনে দলবেঁধে তাঁকে সকলে এক নজর দেখতে আসল। সকলে ইউসুফ (আঃ)-এর রূপ দেখে মোহিত হল এবং বলল, এতো মানুষ নয় ফেরেস্তা।
হযরত ইউসুফ (আঃ) কারাগারে পৌঁছে প্রথমে সকলকে ছালাম দিলেন তারপর তাঁদের কুশল জিজ্ঞেস করলেন। তাঁর জন্য ভিন্ন ব্যবস্থাপনায় সজ্জিত প্রকোষ্ঠে রাকে স্থান করে দেয়া হল। হযরত ইউসুফ (আঃ) কে তখন পর্যন্ত নবুয়তী প্রদান করা হয় নি। কিন্তু নবীর চরিত্র তাঁর মধ্যে বিরাজমান ছিল। তাই তিনি কারাগারে ঢুকে বন্দীদের সুবিধা অসুবিধার প্রতি দৃষ্টি নিবন্ধ করলেন। যে সমস্ত অসুবিধা, অন্যায় অত্যাচার সেখানে হত সেগুলো দূরীভূত করার লক্ষে চেষ্টা আরম্ভ করলেন। খাদ্যের মান উন্নত করলেন। রোগী, দুর্বল ও ব্যাধিগ্রস্ত বন্দীদেরকে তাঁদের মেয়াদ সংক্ষিপ্ত করার পদক্ষেপ নিলেন।
পুরুষ ও নারী বন্দীদের ভিন্ন থাকা ও খাবার ব্যবস্থা করলেন। অনেক কয়েদী মিথ্যা মামলার ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে জেলে এসেছে। তাঁদের বিষয় পুনবিচার করার আবেদন জানালেন। ইত্যাদি অনেক ব্যবস্থার তিনি আমূল পরিবর্তন করলেন। এগুলো করা তাঁর পক্ষে অত্যন্ত সহজসাধ্য হয়েছিল আজিজ মেছেরের বদান্যতার কারনে। আজিজ মেছের জানতেন হযরত ইউসুফ (আঃ) কোন দিন অন্যায় প্রস্তাব বা অসঙ্গত আবদার তাঁর নিকট করবেন না। তাই হযরত ইউসুফ (আঃ)-এর পক্ষে থেকে যে সব প্রস্তাব তাঁর নিকট পৌঁছাত, তা তিনি একবারেই মঞ্জুর করে দিতেন। তাই অল্প দিনের মধ্যে জেলখানায় প্রতিষ্ঠিত হল একটি সুন্দর পরিবেশ। জেলখানার কয়েদীরা হযরত ইউসুফ (আঃ)-এর মহৎ কর্মকাণ্ড ও নির্মল চরিত্র অবলোকন করে তাঁর একান্ত ভক্তের অন্তর্ভুক্ত হয়ে গেল। সকলে তাঁর নিকট দ্বীনের তালিম গ্রহণ করতে আরম্ভ করল। পূর্ণ এক বছর এক বছর যেতে না যেতে জেলখানার সকল কয়েদীরা এক এক জন উন্নতমানের দীনদারে পৌছিতে সক্ষম হল।
সূত্রঃ কুরআনের শ্রেষ্ঠ কাহিনী
হযরত ইউসুফ (আঃ)-এর বন্দী জীবন-২য় পর্ব দেখতে এখানে ক্লিক করুন