হযরত মুসা (আঃ)এর জন্ম বংশ ও পরিচয়-৩য় পর্ব
হযরত মুসা(আঃ) এর জন্ম বংশ ও পরিচয়-২য় পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন
এ সময়ে হামান ফেরাউন কে বলল বন্ধু পরিবেশ সৃর্ষ্টি হয়ে গেছে। এখন তুমি তোমার অভিপ্রায় জনসমক্ষে প্রকাশ কর। তখন ফেরাউন ঘোষণা দিল হে দেশবাসী আমি তোমাদের খোদা। আমি বাঁচাতে পারি, মারতে পারি। মানুষের ভাগ্য নির্ধারণ করতে পারি। অতএব আমার এ দাবির বিরোধীতাকে চরম শাস্তি প্রদান করা হবে। আর সমর্থনকারীকে পুরস্কৃত করা হবে। ফেরাউনের এ দাবির প্ররিপ্রেক্ষিতে দেশে কোন রুপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি না হয়ে বরং স্বাগতম ও অভিনন্দন আসা অব্যাহিত থাকে।
অবস্থা দেখে ফেরাউন ও হামান আনন্দে ফেটে পড়ল। মিশরে তখন কিবতী জাতীয় মূর্তি পুজন ছিল সংখ্যা গরিষ্ট এবং হযরত ইসহাকের সন্তান বনি ইসরাইয়েলরা ছিল সংখ্যা লঘু। দেশের সমস্ত কিবতীয়রা ছিল ফেরাউনের একনিষ্ট সমর্থক। আর বনি ইস্রাইলরা ছিল ফেরাউনের বিরুদ্ধ দল। এরা ছিল মুসলমান। এতএব কোন মুসলমান এর পক্ষে ফেরাউন কে খোদা বলে স্বীকৃতি প্রদান করা আদৌ সম্ভব নয়। তাই কথা ও কাজে মুসলমান রা ফেরাউন কে সমর্থন করতে পারল না। এমত অবস্থায় ফেরাউন মুসলমান দের উপর ক্ষিপ্ত হয়ে অত্যাচারের মাত্রা বিদ্ধি করে দেয়। দেশের নিম্নস্তরের ও পরিশ্রমের কাজে মুসলমান দের নিয়োগ আরম্ভকরে।
মুসলমান নারীদের উপর পাশবিক অত্যাচার চালায়। তাদের অর্থ সম্পদ কেড়ে নেবার বিভিন্ন ফন্দি করে। পদস্ত সমস্ত মুসলমান দের কে বিভিন্ন অজুহাতে বরখাস্ত করে। এভাবে মুসলমান দের উপর অত্যাচারের ষ্টীম রোলার চালান হয়। তবুও মুসলমানরা তাদের ঈমান বজায় রাখে। আছিয়া নামে বনি ইসরায়েলের একজন মুসলমান মহিলা ছিলেন অতি রূপসী ও অতি সুন্দরী। মিশর রাজ্যে তখন অত সুন্দরী কোন নারী ছিল কি না সন্দেহ। এ মহিলার রুপে আকৃষ্ট হয়ে ফেরাউন তাকে বিবাহ করে। বিবাহের সময় আছিয়া ফেরাউন এ বলেন তুমি যদি আমাকে আল্লাহ তা’লার ইবাদাত বন্দেগী করতে কোনরূপ বাধা সৃষ্টি না কর এবং তোমাকে খোদাই দাবি মানতে বাধ্য না কর তাহলে আমি বিবাহ এ সম্মমত আছি। না হয় আমি তোমার সাথে বিবাহ এ আদৌ সম্মত নই। ফেরাউন আছিয়ার সমুদয় শর্ত মেনে নিয়ে তাকে বিবাহ করতে সম্মত হয়। অতপর তাদের বিবাহ সম্পন্ন হয়। আছিয়া বুদ্ধি, জ্ঞান, সততা ও আচার আচরণে এমন অনন্যা ছিলেন যাতে ফেরাউন তাকে ভক্তি শ্রদ্ধার চোখে দেখত। দেশের হাজার হাজার মানুষের সাথে অনেক দুর্ব্যবহার করেছে। কিন্তু আছিয়ার সাথে কোনদিন দুর্বব্যবহার করেনি। ফেরাউন দুর্দান্ত প্রতাপের সাথে রাজ্য পরিচালনা করত। সারা দেশময় তার জয়জয় কার রব ছিল।
রাজ্যর সকল মানুষ ছিল তার হুকুম বরদার। একদিন রাজদরবারে কয়েক জন জ্যোতিষী এসে ফেরাউনের কাছে এসে বলল হুজুর আপনার রাজ্যে এমন এক ব্যক্তি জন্মলাভ করতে যাচ্ছে যা আপনার খোদাই দাবি সম্পুর্ন নস্যাত করে দিবে। এবং আপনার রাজ্য কে বিধাস্ত করে দিবে। আমরা এ খবর অবগত হয়ে খুব ভিত সন্ত্রস্ত হয়ে পড়েছি। ফেরাউন এ কথা শুনে জিজ্ঞাসা করল এখন এর প্রতিকার কি করা যায়? জ্যোতিষীরা বলল এ সন্তান পিতার পিষ্ট থেকে যেন মাতার গর্ভে না যেতে পারে।
এ জন্য সারা দেশে একপক্ষ কাল যৌনামিলন নিষিদ্ধ করা যেতে পারে। ফেরাউন জ্যোতিষীদের পরামর্শ অনুসারে সারা দেশে জরুরি ঘোষণার মাধ্যমে জানিয়ে দিল কোন পুরুষ এক পক্ষ কালের মধ্যে কোন নারীর সাথে মিলন করবে না। আদেশ অমান্যকারীকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হবে। ফেরাউনের এই ফরমান একদিনের ভিতরে সারা দেশে জারি করে দেওয়া হল। সকল মানুষ ভীত হয়ে আইন যথাযথ পালনের সিদ্ধান্ত নিল। হযরত মুসা (আঃ) এর পিতা এমরান ছিলেন একজন বনি ইসরাইল বংশের লোক। তিনি অনেক দিন থেক ফেরাউনের রাজদরবারে এক দায়িত্বপূর্ণ পদে বহাল ছিলেন। যদিও তিনি মুসলমান ছিলেন তবুও তার কর্তব্য নিষ্ঠার জন্য তাকে অপসারণ করা সম্ভব হয়নি।
সূত্রঃ আল কোরআনের শ্রেষ্ঠ কাহিনী
হযরত মুসা(আঃ) এর জন্ম বংশ ও পরিচয়-৪র্থ পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন