হযরত নূহ (আঃ)- এর জাহাজ তৈরি -২য় অংশ
হযরত নূহ আঃ এর জাহাজ তৈরী ১ম অংশ পড়তে এখানে ক্লিক করুন
উজবিন ওনক হযরত আদম (আঃ)-এর এক অপ্রতিদ্বন্দ্বী পৌত্র। তার সম্পর্কে অনেক গল্প আছে। সে ছিল অত্যাধিক লম্বা ও ভীষণ শক্তিশালী ৷ সে নাকি লম্বায় ছিল তিন হাজার গজ এবং তার দেহ ছিল আনুপাতিক স্বাভাবিক । স্বাস্থ্য ছিল ভাল । চেহারা ছিল উজ্জ্বল । তার খাদ্য ছিল একত্রে পাচ মণ থেকে দশ মণ । খাদ্যের অভাব ছিল তার জীবনের প্রধান সংকট । ব্যবহার ছিল অত্যন্ত ভদ্র ও নম্র। মানুষের সাথে চাল-চলনের ক্ষেত্রে ছিল অমায়িক । মানুষ তাকে অত্যন্ত ভালবাসত, আদর করত এবং সামর্থ পরিমাণ খাদ্যদ্রব্য তাকে প্রদান করত। উজের প্রধান খাদ্য ছিল গম ও মাছ। গম মানুষ তাকে দিত, বিশেষ করে রাষ্ট্রীয় বাজেট থেকে তার খাদ্যের জন্য কিছু বরাদ্ধ থাকত। দ্বিতীয়ত, নদী ও সমুদ্রে নেমে সে মাছ ধরে খেত। কথিত আছে, সে মাছ ধরে সূর্যের তাপে সেকে নিয়ে খেয়ে ফেলত। বুদ্ধি জ্ঞানে ছিল খুব সাদা-সিধে। ধূর্ততা সে আদৌ বুঝত না। অন্যায় কাজ বা অন্যায় আচরণ করার সভ্যাস তার ছিল না। শুধু একটি বদ অভ্যাস ছিল। সেটা হল ক্ষুধার তাড়নায় মাঝে মাঝে সে চুরি করে অনেকের ঘর থেকে খাবার খেয়ে ফেলত। আবার তাকে জিজ্ঞেস করলে সে চুরির কথা স্বীকার করত। এ সরলতার জন্য তাকে কেউ খারাপ জানত না। মানুষের উপকারের ক্ষেত্রে যথাসম্ভব চেষ্টা করত। মানুষের নদী পারাপার বা দুর-দুরান্তের যাতায়াতের ক্ষেত্রে হাতে করে মানুষদেরকে তুলে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে পৌঁছে দিত। কোন কোন সময় সমুদ্র থেকে বড় বড় মাছ ধরে এনে মানুষের মাঝে বিলিয়ে দিত। ধর্ম-কর্মের ব্যাপারে সে ছিল সম্পূর্ণ উদাসীন। আল্লাহ তা’য়ালার উপর তার মোটামুটি বিশ্বাস ছিল। তবে তা কোন ধর্ম অনুসরণের মাধ্যমে নয়।
এখনে তার বাকি জীবনের সংক্ষিপ্ত ইতিহাসটুকু তুলে ধরা প্রয়োজন মনে করি। উজবিন ওনক একাধারে ছয় মাস ঘুমাত এবং ছয় মাস ঘুরে-ফিরে খাদ্য সংগ্রহে ব্যস্ত থাকত। সে কয়েকজন নবীর যুগ পর্যন্ত বেঁচেছিল। শেষ দিকে হযরত মুছা (আঃ) তার কয়েকজন উন্মতকে উজের নিকট প্রেরণ করেছিলেন তাকে দ্বীনের দাওয়াত দিতে । যদি সে কবুল না করে তবে তারা তার সাথে যুদ্ধ করবে । উম্মতেরা উজের নিকট গিয়ে বলল, আমাদের হযরত মুছা (আঃ) আপনাকে দ্বীনের দাওয়াত দিবার জন্য প্রেরণ করেছেন। যদি আপনি এ দাওয়াত কবুল না করেন তবে আমরা আপনার সাথে যুদ্ধে প্রবৃত্ত হব। উজ বলল, ওটা তোমাদের নবীকে করতে বল। ওটা করার সময় আমার নেই । আমি আমার আহার জুটিয়ে সময় পাচ্ছি না। তার উপর আবার ধর্মের কাজ করি কখন। এই বলে সে পথ চলতে আরম্ভ করল। তখন নবীর উম্মতেরা তার উপর আক্রমণ চালাল। তখন উজ সকল উম্মতকে ধরে পকেটে ভরে ফেলল এবং সোজা নিজ স্ত্রীর কাছে গিয়ে বলল, দেখ মুছার উম্মতেরা আমার সাথে যুদ্ধ করতে এসেছিল। আমি তাদেরকে ধরে পকেটে করে এখানে নিয়ে এসেছি। এখন তোমার সম্মুখে ওদেরকেপিশে মেরে ফেলব। এই বলে উম্মতদেরকে পকেট থেকে বের করল। উম্মতেরা উজের পকেটে প্রস্রাব পায়খানা করে একেবারে দুর্গন্ধময় করে ফেলেছিল। অনেকে অজ্ঞান হয়ে মৃত্যুর সাথে লড়ছিল। উজের স্ত্রী নবীর উম্মতদের দেখে দয়াদ্র হয়ে বলল, তুমি ওদের মের না। ওরা তোমার সাথে যুদ্ধ করার কি ক্ষমতা রাখে? মুখে বলেছে তাতে তুমি রাগন্বিত হয়েছ? আসলে ওরা যুদ্ধ করতে আসে নি। এসেছে শুধু মুছার হুকুম তামীল করতে। অতএব তোমর মত একজন মহৎ ব্যক্তির পক্ষে ওদেরকে ছেড়ে দেওয়াই সমীচিন ও সঙ্গত হবে। তখন উজ ওদেরকে বলল, যাও তোমরা নিরাপদে দেশে চলে যাও। আমার সাথে যুদ্ধ করতে হলে খোদ মুছাকে আসতে বল। উজের স্ত্রী তখন তার জামার পকেট ধুয়ে দিয়ে তাকে শান্ত করল। উজের জামা ছিল গন্ডার ও মহিষের চামড়া দ্বারা তৈরি। এক জামা দিয়ে সে নিচের পাজামার কাজও সমাধান করত। কারণ এগুলো ভিন্ন ভিন্ন ভাবে প্রস্তুত করার সহজ সাধ্য ছিল না।
উজের স্ত্রী ছিল সে যুগের সর্বোচ্চ মহিলা। তবুও উজের তুলনায় সে ছিল হাঁটু বরাবর। স্ত্রীকে সে খুব ভালোবাসতো। শুধু খাবার নিয়ে তার সাথে মাঝে মাঝে ঝগড়াঝাটি হতো। কারণ তার স্ত্রী যা কিছু খাবার তৈরি করত দুই তিন দিন পরে এসে তা সব একবার এসে খেয়ে যেত।
শেষ জীবনে হযরত মূসা (আঃ) তাকে দ্বীনের দাওয়াত দিবার জন্য তার নিকট যান এবং বলেন তুমি আল্লাহর উপর ঈমান আন এবং আমাকে তাঁর রসুল বলে স্বীকার কর। উত্তরে উজ বলল, আল্লাহ আমাকে নিয়মিত খাবার দিতে পারে না। (নাউজুবিল্লাহ)। তাঁর উপর ঈমান আনলে কি হবে। আপনারা গিয়ে ওসব করুন। আমাকে সর্বদা খাবার যোগাড়ে ব্যাস্ত থাকতে হয়। তখন হযরত মূসা (আঃ) লাঠিতে ভর করে ষাট গজ উপরে উঠে তাকে সজোরে লাঠি দিয়ে আঘাত করলেন। এ আঘাতটি একশত বিশ গজ উপরে লাগে। তাতে উজের হাঁটুর উপর এ আঘাত পতিত হয়।
হযরত মূসা (আঃ) এর লাঠির আঘাতে সম্ভবত সে খুব বেদনা অনুভব করে। তখন সে ক্ষিপ্ত হয়ে দূরবর্তী সুউচ্চ পর্বতমালার দিকে দৌড় দেয়। সেখানে গিয়ে একটি বড় ধরনের পর্বত শৃঙ্গ উঠিয়ে মাথায় তুলে নেয়। ওটা দ্বারা সে মূসার কওমকে চাপা দিবে, এটাই ছিল তার উদ্দেশ্য। পথিমধ্যে আকাশ থেকে উড়ে আসা দুটি পাখি উক্ত পর্বত শৃঙ্গের উপর দিয়ে ঠোকরাতে আরম্ভ করে। অল্প সময়ের মধ্যে সেখানে একটি গর্তের সৃষ্টি হয়। পাখি দুটি মরিয়া হয়ে গর্তের মধ্যে ঘন ঘন ঠোকরাতে থাকে। উক্ত গর্ত উজের মাথা পর্যন্ত এলে হঠাত পর্বত শৃঙ্গটি তার মাথার মধ্যে গেড়ে গিয়ে ঘাড়ে এসে বাধে। তখন তার চোখ মুখ সবাই অন্ধকারে ঘিরে যায়। কোন দিক দেখা তার পক্ষে আর সম্ভব হয় না। এমতাবস্থায় সে পর্বত শৃঙ্গটি মাথা থেকে বের করে ফেলার চেষ্টা করে। কিন্তু ওটা এমনভাবে আটকে পড়ে যে, ওটাকে উঠানো-নামানো কোনটাই আর সম্ভব হলো না। তখন ঐ ভাবেই সে পথ অতিক্রম করতে লাগল। কিছু দূর অগ্রস্র হওয়ার পরে অদেখা অবস্থায় সে একটি নদীর ভাঙ্গন পাড়ে পা দিতেই উপুর হয়ে নদীর মাঝে পড়ে গেল। তখন তার মাথা
পর্বতের ভারে পানিত মধ্যে নিমর্জিত হল এবং পা দুটি উপরে উঠে গেল। এ অবস্থায় সে মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা পাবার উদ্দেশ্যে যথেষ্ট চেষ্টা করল। কিন্তু কিছুতেই কিছু হল না। ঐ অবস্থায় সেখানে তাকে মৃত্যুবরণ করতে হল।
হযরত নূহ (আঃ) এর জাহাজ তৈরীর ঘটনা-তৃতীয় অংশ পড়তে এখানে ক্লিক করুন