হযরত জুনায়েদ বাগদাদী (রঃ) – পর্ব ৭
হযরত জুনায়েদ বাগদাদী (রঃ) – পর্ব ৬ পড়তে এখানে ক্লিক করুন
৩০. একবার একটি লোক তাঁকে বললেন যে, তাঁর বক্তৃতার বক্তব্য তিনি বুঝতে পারছেন না। হযরত জুনায়েদ (রঃ) বললেন, তুমি সত্তর উপাসনা পায়ের নিচে রেখে তথা কবরস্থ করে মাথা নিচু করে বসে যাও। তারপর দেখ বুঝতে পারছ কিনা। যদি তারপরও বুঝতে না পার, তাহলে জানব, আমার ত্রুটিই তার কারণ।
৩১. এক ব্যক্তি তাঁর ভাষণদানের সময় তাঁর খুব প্রশংসা করল তা শুনে তিনি বললেন, আসলে সে আল্লাহ্ পাকেরই তারীফ করছে।
৩২. মনে কখন শান্তি আসে? এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি বললেন, যখন আল্লাহ্ অন্তরে বিরাজ করেন।
৩৩. এক ব্যক্তি তাঁকে পাঁচশ দীনার উপহার দিল। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, তার কাছে আরও অর্থ আছে কিনা। তার ইতিবাচক উত্তরে তিনি বললেন, তুমি এ টাকা ফিরিয়ে নিয়ে যাও। কেননা এতে আমার চেয়ে তোমার প্রয়োজনই বেশী। আমার কাছে যেমন কিছুই নেই, তেমনি আমার প্রয়োজনও নেই। কিন্তু তোমার নিকট যথেষ্ট অর্থ থাকা সত্ত্বেও তুমি আরও অর্থের মুখাপেক্ষী।
৩৪. এক ভিখারী তাঁর কাছে ভিক্ষা প্রার্থনা করলে হযরত জুনায়েদ (রঃ)-এর মনে হল, লোকটি কাজ করে খেতে পারে, সুতরাং তাঁর ভিক্ষাবৃত্তি বৈধ নয়। অতএব তাকে কিছু না দিয়েই ফিরিয়ে দিলেন। ঐ রাতে তিনি স্বপ্নে দেখলেন, কে যেন তাঁর সামনে ঢাকা দেওয়া খাবারের থালা ধরিয়ে দিয়ে বললেন, খান। ঢাকনা তুলে দেখলেন, খাবার নয়, একটি লাশ। আর দিনের বেলা যে ভিখারীকে তিনি ফিরিয়ে দিয়েছেন, তারই লাশ। তিনি বললেন, আমি তো লাশ খাই না। উত্তর হল, তাহলে দিনে তাকে কী করে খেয়ে ফেললে? তখন হযরতের খেয়াল হল, আসলে ভিখারীর সঙ্গে যে ব্যবহার হয়েছিল, এ তারই শাস্তি।
৩৫. হযরত জুনায়েদ (রঃ) তখন মক্কা মোয়াজ্জমায়। এক নাপিত এক ধনী ব্যক্তির মাথা মুড়িয়ে দিচ্ছে। তিনি নাপিতকে বললেন, আল্লাহ্র ওয়াস্তে আমার চুলগুলি কেটে দেবে কি? নাপিত বলল, নিশ্চয়ই। বলতে বলতে তাঁর চোখ দুটি পানিতে ভরে উঠল। যে লোকটির চুল কাটছিল, তাকে সে বলল, তখন এর কাজটা আগে না করে পারছি না। তাই হল। হযরত জুনায়েদ (রঃ)-কে আসলে বসিয়ে নাপিত তাঁর মাথায় চুমু দিয়ে চুল কাটতে লাগল। তারপর কাগজের একটি মোড়ক তাঁর হাতে দিয়ে বলল, এগুলি আপনি আপনার প্রয়োজনে ব্যায় করবেন। দেখা গেল, মোড়কে রয়েছে কিছু স্বর্ণ মুদ্রা। তাঁর এই বদন্যতা দেখে হযরত জুনায়েদ (রঃ) মনে মনে সংকল্প করলেন, যখনই তাঁর হাতে টাকা আসবে তখনই তিনি নাপিতের বদান্যতার বিনিময় দেবেন।
এ ঘটনার কিছুদিন পর ব্যবসার কিছু লোক তাকে এক থলে মোহর পাঠিয়ে দিল। তিনি নাপিতের কাছে গিয়ে থলেটি তাকে নিতে বললেন। নাপিত বলল, সেদিন আল্লাহ্র নামোল্লেখ করেছিলেন বলে একজনের কাজ স্থগিত রেখে আপনার চুল কেটে দিয়েছিলাম। কিন্তু, কখনও কি এরূপ দেখেছেন যে আল্লাহ্র সন্তুষ্টির জন্য কাজ করে তার বদলে কিছু নেওয়া হয়? নাপিতের কথায় হযরত জুনায়েদ (রঃ) অবাক হয়ে যান। পরে তিনি বললেন ঐ পাপিতের কাছ থেকে তিনি বিশুদ্ধ আল্লাহ্ প্রেমের শিক্ষা গ্রহণ করেছেন।
৩৬. এক রাতে কিছুতেই এবাদতে মন বসল না হযরত জুনায়েদ বাগদাদী (রঃ)-এর। বাইরে বেরিয়ে এলেন। দেখলেন, দরজায় সামনে পুরু কম্বল পরে একটি লোক চুপচাপ বসে আছে। তিনি তাকে বললেন, তোমার এভাবে বসে থাকার জন্যই হয়তো আমার এবাদতে মন বসেনি। লোকটি বলল, নফসের চিকিৎসা কি? হযরত বললেন, নফসের বিরোধিতা করাই তার একমাত্র ওষুধ। শোনামাত্র লোকটি সেখান থেকে উঠে গেল। সে যে কে, তা বোঝা গেল না। কিন্তু হযরত জুনায়েদ (রঃ) আবার ঘরে গিয়ে এবাদতে রত হলেন। এবার কোন মানসিক বিঘ্ন দেখা গেল না। তিনি গভীর সাধনা তলিয়ে গেলেন।
সূত্রঃ তাযকিরাতুল আউলিয়া