হযরত জুনায়েদ বাগদাদী (রঃ) – পর্ব ১১

হযরত জুনায়েদ বাগদাদী (রঃ) – পর্ব ১০ পড়তে এখানে ক্লিক করুন

১৫. তামাম দুনিয়ার মালিক হয়েও যার মনে লোভের সঞ্চার না হয়, তবে তা দূষণীয় নয়। কিন্তু সামান্য খেজুর বীচি পাওয়ার মতো যদি লোভে সৃষ্টি হয়, তবে তাই ক্ষতির কারণ।

১৬. দুঃখ-কষ্টের জন্য দোষ না দিয়ে ধৈর্যধারণ করা হল বন্দেগীর উত্তম নিদর্শন।

১৭. অতিথি আপ্যায়ন নফল এবাদাত অপেক্ষা উত্তম।

১৮. দাস যত বেশী আল্লাহ্‌র দিকে অগ্রসর হয় আল্লাহ্‌ও ততই তাঁর দাসের দিকে অগ্রসর হন।

১৯. যার আয়ু কেবল আত্মার ওপর নির্ভরশীল, আত্মার বিদায় গ্রহণে তাঁর মৃত্যু হয়। কিন্তু যার আয়ু আল্লাহ্‌র ওপর নির্ভরশীল তাঁর মৃত্যু নেই। বরং সে কৃত্রিম জীবন থেকে অকৃত্রিম জীবন লাভ করে।

২০. সৃষ্টি-বৈচিত্রোর কারিগরি দেখে যে উপদেশ লাভ করতে পারে না, তার চোখ অন্ধ হয়ে যাওয়া ভাল। যার মুখে আল্লাহ্‌র নাম উচ্চারিত হয় না তার বোবা হয়ে যাওয়া ভাল। যে কান আল্লাহ্‌র বাণী শোনে না তার বধির হওয়া উত্তম। আর যে দেহ আল্লাহ্‌র এবাদাত থেকে উদাসীন তার জীবিত থাকা অপেক্ষা মৃত্যুবরণ করা ভালো।

২১. শিষ্যদের প্রথমতঃ শরীয়তের বিধান ব্যতীত অন্য কিছু শোনা উচিত নয়। তাদের পার্থিব বিষয়াদির কথাবার্তার তিক্ততা আর মারেফাতের আলোচনা মাধূর্য উপলদ্ধি করা চাই।

২২. তারা যেমন আকাশের শোভা বাড়ায়, তেমনি সুফী সাধকগণও মর্ত্যের শোভা বৃদ্ধি করেন।

২৩. ভয় চার প্রকার। (ক) আল্লাহ্‌র তরফ থেকে ভয়- যা মানুষকে সতর্ক হতে ডাক দেয়। (খ) ফেরেশতাগণের পক্ষ থেকে ভয়-যা মানুষকে এবাদত-বন্দগীতে উদ্দীপ্ত করে। (গ) রিপুর পক্ষ থেকে ভয়- যা মানুষকে ভোগ-বিলাস ও আনন্দ উৎসবের দিকে আকৃষ্ট করে। (ঘ) যে ভয় মানুষের জন্য শয়তানের পক্ষ থেকে হয়ে থাকে- তা মানুষকে পারস্পরিক হিংসা-দ্বেষ, দলাদলী, শত্রুতা, ঝগড়া-ফাসাদ ও খুনোখুনি ইত্যাদিতে লিপ্ত করে।

২৪. পুর্ণকর্মে অটল ও অকুতোভয় লোকই হল চক্ষুষ্মান। আর তাঁরাই শীর্ষস্থানীয়।

২৫. এবাদতে যখন মগ্ন হবে তখন যাবতীয় পার্থিব-চিন্তা মন থেকে দূর করে দেবে। এরূপ অবস্থায় নিজের মনকে তুমি আল্লাহ্‌র দাস হিসেবে দেখতে পাবে। চার হাজার জ্ঞান-সাধক এ ব্যাপারে একমত পোষণ করেন।

২৬. তাসাওউফ শব্দটি এস্তেফা থেকে উদ্ভূত- যার অর্থ হল, বেছে নেওয়া বা পবিত্র হওয়া, অতএব, যিনি আল্লাহ্‌ ছাড়া অন্য যে কোন প্রকার স্মরণ বা উপাসনা থেকে পবিত্র, তিনি সুফী। মূলতঃ যার অন্তর হযরত ইব্রাহীম (আঃ)-এর আত্মোৎসর্গের মতো, যার চিন্তা-ভাবনা ও অস্থিরতা হযরত ইসমাইল (আঃ)-এর মতো পবিত্র এবং আল্লাহ্‌র আদেশ পালনে উন্মূখ, যার আত্মোৎসর্গ হযরত ইসমাইল (আঃ)-এর মতো, যার ধৈর্য হযরত আইউব (আঃ)-এর মতো, যার উদ্যম ও প্রেরণা হযরত মূসা (আঃ)-এর উদ্যম ও প্রেরণার মত, যার নির্মলতা হযরত মুহাম্মদ (সঃ)-এর মতো, তিনি হলেন প্রকৃত সুফী।

২৭. আল্লাহ্‌ ছাড়া অন্য সব কিছু বর্জন করে নিজেকে বিলীন করে দেওয়ার নাম হল তাসাওউফ। হযরত জুনায়েদ (রঃ) একজন শিষ্যকে বললেন, সুফী তাকেই বলা হয়, যিনি নিজস্ব গুণ-বৈশিষ্ট্য শেষ করে দিয়ে আল্লাহ্‌র পান।

২৮. তত্ত্বজ্ঞানী বা আরেফদের থেকে সকল ব্যবধান দূর করে দেওয়া হয়। আর আরেফ ব্যক্তি আল্লাহ্‌র গুপ্ত রহস্যের মর্ম জানেন।

২৯. মারেফাত দু’প্রকার। (ক) আল্লাহকে চেনা, (খ) আল্লাহকে চিনে নিয়ে আল্লাহতে মগ্ন হওয়া।

৩০. আল্লাহকে উত্তমরূপে জানার নাম হল তওহীদ। তওহীদের পরম রূপ হল এই যে, তওহীদ সম্পর্কিত যত জ্ঞানই অর্জিত হোক না কেন, তওহীদবাদী এরূপ ধারণা পোষণ করবে যে, তওহীদ সম্পর্কে তার মনোভাব অপেক্ষা তওহীদ আরও বড়।

৩১. আল্লাহ্‌র ধ্যান করতে করতে ভাবোন্নত্ত হয়ে, অন্য কোন দিকে মন না দিয়ে আল্লাহ্‌র ধ্যানে নিজেকে বিলিয়ে দেওয়ার নামই হল তারীকত।

৩২. তাসাওউফ ও তরীকত হল সেই অবদান, যার ওপরে দাসের স্থায়িত্ব নির্ভরশীল।

৩৩. ঐ অবদান আল্লাহ্‌র না দাসের? এই প্রশ্নের উত্তরে হযরত জুনায়েদ (রঃ) বলেন, তরীকতের গুপ্ত কথা আল্লাহ্‌র অবদান এবং আল্লাহ্‌র রহমত হল দাসের পক্ষে নেয়ামত।

সূত্রঃ তাযকিরাতুল আউলিয়া

হযরত জুনায়েদ বাগদাদী (রঃ) – পর্ব ১২ পড়তে এখানে ক্লিক করুন

You may also like...

দুঃখিত, কপি করবেন না।