হযরত খাজা নিজামউদ্দিন আউলিয়া (রঃ) – ৪র্থ পর্ব

হযরত খাজা নিজামউদ্দিন আউলিয়া (রঃ) – ৩য় পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন

মাহবুবে খোদা হযরত নিজামউদ্দিন (রঃ) বিপাক পড়ে গেলেন।  তিনি বিনীত ভাবে বললেন হুজুর লঙ্গর খানায় লবণ ছিল না।   এমনকি আমার কাছেও কোন পয়সা কড়ি ছিল না।  ঋণ গ্রহণ করে সামান্য লবণ কিনে তরকারি পাক করলে হযরত আপনি তরকারি খেতে পারবেন এই মনে করে লবণ কিনেছি, হুজুর বললেন ঋণ করা তরকারী কিছুতেই খাওয়া যাবে না।  বরং এর চেয়ে মৃত্যবরণ করাই শ্রেয়।  তিনি বললেন, এ তরকারি সবগুলো গরীব মিসকিনদের মধ্যে দান করে দাও

মাহবুবে খোদা হযরত নিজাউদ্দিন (রঃ) তৎক্ষণাৎ উক্ত উক্ত তরকারিগুলো ফকির মিসকিনদের মধ্যে বিতরণ করে দিলেন।  তিনি জীবনে এরুপ কাজ আর করবেন না বলে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হলেন।  এবং আল্লাহর দরবারে তওবা করে মুনাজাত করলেন।  এই তওবার কথা শুনে পীর কেবলা খুশী হয়ে স্বীয় আসনের কম্বল খানি মাহবুবে ইলাহী (রঃ) কে দান করলেন।   হিজরী ৬৫৫ সালের ১০ই রজব হতে পরবর্তী সালের ২রা রবিউল আউয়াল পর্যন্ত তিনি তালিম, তাঁরবিয়াত ও তাওয়াজ্জুত  গ্রহণ করে ছিলেন।  ১০ই রজব হতে পরবর্তী সালের ২রা রবিউল আউয়াল পর্যন্ত একটি বছর পর্যন্ত নিজামউদ্দিন আউলিয়া (রঃ) স্বীয় পীর ও মোর্শদে কামেল হযরত শায়িখ ফরিদউদ্দীন গঞ্জেশর্কর (রঃ) এর দরবারে অতিবাহিত করেছিলেন।  ঐ সময়ে তিনি রিয়াজত ও মোজাহাদার মাধ্যমে উত্তরোত্তর উন্নত স্তরে সমুন্নত  হয়েছিলেন।  ওয়াদা পালনে তিনি ছিলেন আদর্শের মূর্ত প্রতীকঃ মহান রাব্বুল আলা মীনের অলীগণ কৃত অঙ্গিকারের প্রতি সর্বদাই ছিলেন সতর্ক। 

কারণ এ জগতের উপেক্ষায় দৃষ্টিতে দেখেন এবং জগতকেই একমাত্র মুক্তির পথ বলে স্বীকার করেন না।  এ জগতে তারা সাধারণ জীবনে অর্থাৎ জীব আত্মার আবাস স্থান হিসেবে মনে করেন।  কিন্তু সাধক জীবন আরম্ভ হবে মৃত্যুর পরে এ বিশ্বাসে তারা বিশ্বাসী।  কাজেই  প্রথমতঃ ব্যক্তি কেন্দ্রিক দায়িত্ব ও কর্তব্য।  এখানে বলা হয়েছে জীবনকে দুই ভাগে ভাগ করার কথা।  প্রথম ভাগ বলতে ব্যক্তি কেন্দ্রিক দায়িত্ব কর্তব্য।  এবং দ্বিতীয়তঃ সমষ্টিগত বা সামগ্রিক দায়িত্ব।  ওয়াদা পালন ব্যক্তি দায়িত্ব ও সমষ্টি উভয় ক্ষেত্রেই সমভাবে প্রযোজ্য।  ওয়াদার বরখেলাপে জীবনে যেমন নানা রকম অসুবিধা দেখা দেয়।  তেমনি সমষ্টিগত  সমাজ ও জাতীয় জীবন এর ক্ষতির প্রভাব কোন অংশেই কম হয় না। 

সুতরাং এর পরিপ্রেক্ষিতে আল কুরআনে ও সহী হাদিসে ওয়াদা পালনের প্রতি জোর তাগিদ দেয়া হয়েছে।  এমন কি ওয়াদা ভঙ্গ করার কুফল সুষ্পষ্ট ভাবে তুলে ধরা হয়েছে।  তিনি সর্বাগ্রে ওয়াদা পালনের পথ বেছে নিতেন।  অন্যথায় প্রয়োজনবোধে অন্যান্য কাজ কর্মে মনোনিবেশ করতেন।  দিল্লীর সম্রাটদের অনেকেই মাহবুবে ইলাহী হযরত খাজা নিজামুদ্দিনের মুরীদ ছিলেন।  সম্রাটের পুত্র শাহাজাদা খেজেরখাঁও হযরত নিজামউদ্দিন (রঃ) এর নিকট বয়াত গ্রহণ করেন।  এ সকল আমীর শাহাজাদাদের সাথে মাহবুব (রঃ) যেমন ব্যবহার করতেন ঠিক তেমনি ব্যবহার একজন গরীব দুঃখীর সাথেও তিনি করতেন।  ধনী গরীব উঁচু নিচুর কোন প্রভেদ তাঁর দরবারে ছিল না।  

বিশ্ববিখ্যাত সম্রাট এ যুগের আউলিয়া, নিজামউদ্দিন আউলিয়ার খাকাহর জন্য পঞ্চাশ হাজার রৌপ্য মুদ্রা সুনিদিষ্ট করেন এবং আমীর কাশেফ হাজের এর মাধ্যমে এ মহান আউলিয়া নিকট প্রেরণ করলেন।  আমীর মাশেফ হাজের উক্ত মুদ্রা নিয়ে হযরত নিজামউদ্দিন আউলিয়া (রঃ) এর সন্দ্যধানে উপস্থিত হলেন।  কিন্তু হযরত নিজামুদ্দিন আউলিয়া (রঃ) পুর্বকৃত ওয়াদার কারনে আমীর কর্তৃক প্রদত্ত রৌপ্য মুদ্রার প্রতি মোটেই তাকালেন না।  বরং পূর্ব ওয়াদা পালনের যাবতীয় উপক্রম তিনি গ্রহণ করলেন।  

হযরত মাহবুবে ইলাহী (রঃ) বললেন, আমি পূর্বকৃত ওয়াদা সংক্রান্ত কাজে খুবই ব্যস্ত আছি এ সময় অন্য কিছুর প্রতি নজর  দেয়া আমার পক্ষে মোটেই সম্ভব নয়।  পঞ্চাশ হাজার রৌপ্য মুদ্রা অপেক্ষা ওয়াদা পালনের মূল্য আমার  নিকট বেশি মনে করি, ওয়াদা পালন করা আটটি বেহেশত হতেও উত্তম। 

সূত্রঃ তাযকিরাতুল আউলিয়া

হযরত খাজা নিজামউদ্দিন আউলিয়া (রঃ) – ৫ম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন

You may also like...

দুঃখিত, কপি করবেন না।