হযরত ইব্রাহীম (আঃ) এর কাবাঘর নির্মাণ ও কতিপয় মো’যেযা –চতুর্থ পর্ব

হযরত ইব্রাহীম (আঃ) এর কাবাঘর নির্মাণ ও কতিপয় মো’যেযা – তৃতীয় পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন   

হযরত ইব্রাহীম (আঃ) মেহমানদেরকে খানা গ্রহণের অনুরোধ জানিয়ে নিজে খেতে বসলেন। কিছুক্ষন পরে সায়েরা বিবি হযরত ইব্রাহীম (আঃ) – কে বললেন, হুজুর! আপনি খানা গ্রহন করছেন কিন্তু মেহমানদের কেউই খানা গ্রহন করে নি। হযরত ইব্রাহীম (আঃ) চেয়ে দেখলেন ঘটনা সত্য। তখন তিনি মেহমানদের খানা গ্রহন না করার কারণ জিজ্ঞেস করলেন। মেহমানগণ উত্তর দিলেন, আমরা খানা খেতে অভ্যস্ত নই। আমরা মানুষ নই ফেরেস্তা। আপনার দীর্ঘ সাতদিনের রোজার এফতারি করানোর জন্য আমরা আল্লাহ তা’য়ালার নির্দেশ ক্রমে এখানে এসেছি।
আমাদের মধ্যে আমি জিব্রাইল, আমার সঙ্গে ইস্রাফিল (আঃ), মিকাঈল (আঃ) ও আজরাঈল (আঃ) রয়েছেন। এ ছাড়া বাকি যারা এখানে এসেছে তারা সকলেই আল্লাহর ফেরেস্তা। অতএব আপনি কোন ভাবনা না করে নিজের খাবার সমাধা করুন। আমরা এখান থেকে হযরত লুৎ (আঃ) – এর এলাকায় যাব। সেখানে হযরত লুৎ (আঃ) – এর জাতি নবীর সাথে বে-আদবী করেছে এবং পাপাচারে দেশ তলিয়ে দিয়েছে। এমতাবস্থায় তাদের প্রতি আজাব বর্ষণের জন্য আমরা সেখানে যাচ্ছি।
তবে আমাদের যাত্রার পূর্বে আপনাকে একটি সুসংবাদ দিয়ে যাই। অতি শীঘ্র সায়েরার গর্ভে আপনার একটি পুত্র সন্তান জন্মগ্রহন করবে। তাঁর নাম রাখবেন হযরত ইসহাক (আঃ)। তিনিও নবুয়াতী প্রাপ্তি হবেন। তাঁর সন্তানের নাম রাখা হবে হযরত ইয়াকুব (আঃ)। তিনিও আল্লাহর মকবুল নবী হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করবেন। এভাবে এ বংশে সত্তর হাজার নবী জন্মগ্রহন করবেন।
বিবি সায়েরা মেহমানদের কথা শুনে হেসে দিলেন এবং বললেন আমি বৃদ্ধা হয়েছি আমার স্বামীও একজন বৃদ্ধ, এমতাবস্থায় সন্তানের জননী হয়ে গৌরব লাভ করা কিরূপে সম্ভব? এটা কিভাবে বিশ্বাস করতে পারি। তখন মেহমানগণ বললেন, আল্লাহ তা’য়ালা সব কিছু করতে পারেন। তাতে অস্বাভাবিক, অসম্ভব বলে কোন বিষয় নেই। আপনার যদি আমাদের কথায় বিশ্বাস না আসে তবে সহজে পরীক্ষা করে দেখুন। আপনি যে গো-শাবকটিকে জবেহ করে রান্না করেছেন।
যার কতক অংশ খাওয়া হয়েছে। তাঁর হাড় গুলো এখন দস্তরখানে পড়ে আছে। সেগুলোর প্রতি দৃষ্টি করুন। এই বলে জিব্রাইল (আঃ) হাড়ের দিকে ইঙ্গিত করে বললেন, হে গো-শাবক! আল্লাহর হুকুমে জিন্দা হয়ে যাও। তখন হাড়গুলো একত্রিত হয়ে হাড়ির রান্না করা মাংসগুলোর সাথে জড়িয়ে একটি পূর্ণ জীবিত গো-শাবকে পরিণত হল। শুধু তাই নয় গো-শাবকটি দৌড়ে গিয়ে তাঁর মা-গাভীর স্তন চুষতে আরম্ভ করল। তখন বিবি সায়েরা বললেন, ছোবহান আল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ্‌।
এরপর মেহমানগণ ঘর থেকে বের হয়ে একটি শুকনা গাছের ডালের দিকে তাকিয়ে তাঁর উপর তাঁর লাগালেন, অমনি গাছের ডালটি জীবিত হল। পাতা, ফলে ও ফুলে আচ্ছাদিত হল। হযরত জিব্রাইল (আঃ) সে ডালের একটি ফল তুলে এনে বিবি সায়েরাকে দিলেন। বিবি সায়েরা সেটি তৃপ্তি সহকারে খেলেন।
পরবর্তী সময় বিবি সায়েরা গর্ভবতী হলেন। তাঁর গর্ভে হযরত ইসহাক (আঃ) জন্মগ্রহন করলেন। এ খান্দানে অসংখ্য নবী অলী জন্মগ্রহন করেন। এ খান্দানের পরবর্তী উল্লেখযোগ্য নাম হয়েছিল বনী ইসরাইল।
হযরত ইসমাইল (আঃ) – এর বংশধরের মধ্যেও অসংখ্য নবী অলী জন্মগ্রহন করেন। হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) ছিলেন হযরত ইসমাইল (আঃ) – এর বংশধর। তাঁর বংশধরেরা অধিকাংশই মক্কা-মদিনা এলাকায় বিস্তার লাভ করেন।
সূত্রঃ কুরআনের শ্রেষ্ঠ কাহিনী

হযরত ইব্রাহীম (আঃ) এর কাবাঘর নির্মাণ ও কতিপয় মো’যেযা – প্রথম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন

You may also like...

দুঃখিত, কপি করবেন না।