হযরত ইউসুফ (আঃ)-এর স্বপ্ন-২য় পর্ব
এ সিদ্ধান্ত অনুসারে তাঁরা বাড়িতে গিয়ে প্রথমে হযরত ইউসুফ (আঃ)-কে বলল, ভাই! আমরা প্রায় দিন দৌড় প্রতিযোগিতা ও নানা রূপ খেলাধুলায় অংশগ্রহণ করি। কত আনন্দ সেখানে! বহু লোকের সমাগম হয় প্রতিযোগিতা দেখার জন্য। আমরা মনে করি তুমি আমাদের আদরের ছোট ভাই। তুমি এ আনন্দ উপভোগ থেকে বঞ্চিত থাকবে কেন? চলনা একদিন আমাদের সঙ্গে গিয়ে এ আনন্দ উপভোগ করে আসবে। হযরত ইউসুফ (আঃ) ভাইদের মুখে আনন্দের কথা শুনে খুব খুশি হলেন এবং বললেন, “ পিতার নিকট থেকে অনুমতি না পেয়ে কি করে যাব। অতএব তোমারা পিতার নিকট একটু বুঝিয়ে বল যেন তিনি তোমাদের সঙ্গে আমাকে যেতে দেন। ” ভাইয়েরা বলল এটা সহজ ব্যাপার, তবে তোমাকে খুব শক্ত করে আবেদন করতে হবে। না হয় পিতা শুধু আমাদের কথায় তোমাকে চোখের আড়াল করবেন না। হযরত ইউসুফ (আঃ) বললেন, “ আমি অবশ্যই অত্যন্ত জোরের সাথে আবেদন পেশ করব।”
এ সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে তাঁরা একত্রিত হয়ে পিতার নিকট গিয়ে পৌছাল। সর্ব প্রথম শমুন পিতার নিকট আরজ করে বলল, “ আব্বাজান! আমরা প্রতিদিন মাঠে নানারকম খেলাধুলা করি। দৌড় প্রতিযোগিতা করি। অসংখ্য দর্শক সেখানে সমবেত হয়। যথেষ্ট আনন্দ উৎসব হয় সেখানে। আমাদের আদরের ছোট ভাই ইউসুফ এ খবর শুনে আমাদের সঙ্গে সেখানে যাওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছে। কিন্তু আপনার ইজাজত ব্যতীত তাঁর যাওয়া সম্ভব নয় বলে আমরা সকলে আপনার খেদমতে হাজির হয়েছি।”
হযরত ইয়াকুব (আঃ) পুত্ত্রদের কথা শুনে এবং তাঁদের চেহারায় কিছু অশুভ লখন দেখতে পেয়ে বললেন, ইউসুফ তোমাদের সঙ্গে গেলে তাঁর জীবনের নিরাপত্তা থাকবে না। অতএব এ ব্যাপারে আমি তোমাদের কথায় সম্মত হতে পারছি না। হযরত ইউসুফ (আঃ)-এর ভাইয়েরা তখন অত্যন্ত বিনয়ের সঙ্গে কছম করে বলল, “ হে পিতা! আপনি আমাদের উপর সম্পূর্ণ নির্ভর করতে পারেন।
আমাদের একজনের জীবন থাকা অবস্থায় ইউসুফের সামান্য ক্ষতি আমরা সহ্য করব না। আমরা কছম করে বলছি- ইউসুফকে আমরা মাথায় তুলে সেখানে নিয়ে যাব এবং মাথায় তুলে আপনার নিকট পৌঁছে দেব। এ ব্যাপারে আপনি আমাদিগকে যেকোনো শপথ নিতে বলেন আমরা তা অবনত মস্তকে মেনে নেব।” হযরত ইউসুফ (আঃ)-ও এই সাথে পিতার নিকট আবেদন পেশ করলেন।
পিতা হযরত ইউসুফ (আঃ)-এর আবেদন প্রত্যাখ্যান করতে পারলেন না। তাই তিনি হযরত ইউসুফ (আঃ)-এর ভাইদেরকে বললেন।। “ আমি ভয় করছি, তোমাদের অমনোযোগিতার ফাঁকে তাঁকে বাঘে খেয়ে ফেলবে অথবা কোন অঘটন ঘটবে। তখন সৎ ভাইয়েরা উত্তর দিল।। আমরা শক্তি সমর্থের অধিকারী এতগুলো ভাই থাকতে ইউসুফকে বাঘে খেয়ে ফেলবে অথবা তাঁর কোন অভিশাপের বোঝা বহন করতে হবে, যা আমাদের জন্যই হবে অধিক পরিতাপের বিষয়। অতএব আব্বা! অযথা দুশ্চিন্তা না করে ওকে আমাদের সঙ্গে দিতে পারেন। অর জীবনে কিছুটা আনন্দ উপভোগের অধিকারতো অবশ্যই রয়েছে। আপনি সে অধিকার থেকেও ওকে বঞ্চিত করবেন ? এটা ইব্রাহিম (আঃ)-এর শরিয়াতের পরপন্থী আচারণ।
হযরত ইয়াকুব (আঃ) ছেলেদের যুক্তি-তর্ক ও আবেদন নিবেদনের কাছে দুর্বল হয়ে পড়লেন। দু চোখের পানি ছেড়ে হযরত ইউসুফ (আঃ)-কে জড়িয়ে ধরে বললেন, “ যাও বৎস, তোমাকে আল্লাহ তায়ালার উপর ন্যস্ত করে দিলাম। তোমার জীবনের আল্লাহ তায়ালা যা নির্ধারণ করে রেখেছেন। তা যেন খায়ের ও বরকতে পরিপূর্ণ থাকে। অতঃপর হযরত ইউসুফ (আঃ)-এর সৎ ভাইদের উদ্দেশ্য বললেন, “ তোমরা নিজ হেফাজতে ইউসুফকে নিয়ে যাও। যেভাবে তাঁকে নিয়ে যাচ্ছ। সেভাবে যেন তাঁকে ফিরিয়ে এনে দাও।
সূত্রঃ কুরআনের শ্রেষ্ঠ কাহিনী