হযরত ইউসা (আঃ) এর জন্ম নবুয়াত প্রাপ্তি ও ধর্ম প্রচার-৫ম পর্ব

হযরত ইউসা (আঃ) এর জন্ম নবুয়াত প্রাপ্তি ও ধর্ম প্রচার-৪র্থ পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন  

যুদ্ধ অবসানে বন্দী দরবেশ বালাম বাউর মলিন বদনে হযরত ইউসা (আঃ) এর দরবারে হাজির হয়ে সসম্মানে তাঁকে সালাম জানলেন। হযরত ইউসা (আঃ) দরবেশের পরিচয় পেয়ে বললেন, হে বালাম বাউর! তুমি আল্লাহ্‌ পাকের পবিত্র এসমে আজমের অপব্যবহার করে দ্বীনের ক্ষতি করতেছিলে। সেজন্যই আল্লাহ্‌ পাক তোমার নিকট হতে এসমে আজম কেড়ে নিয়েছেন। অতএব, এখন আর তোমার কোন দোয়াই কবুল হবে না। বালাম বাউর পুনরায় এসমে আজম ফিরে পাবার জন্য হযরত ইউসা (আঃ) এর নিকট বহু অনুনয় বিনয় করলেন।

 কিন্তু তিনি তৎপ্রতি কোন ভ্রক্ষেপ করলেন না। তবে দরবেশ বালাম বাউরকে শুধু এ কথা বললেন যে, আল্লাহ্‌ পাক তোমার এবাদাতে খুশী হয়ে তোমাকে যে অমূল্য নেয়ামত দান করছিলেন, তা হতে শুধু এসমে আজম চলে গেলেও তোমার নিকট এখনও যা আছে তাও কম মূল্য নয়। এখন পর্যন্ত তোমার নিকট যে নেয়ামত আছে তাঁর বদৌলতে আল্লাহ্‌ পাক তোমার যে কোন ৩টি দোয়া কবুল করবেন। সুতরাং তোমার দুঃখিত হওয়ার কোন কারণ নেই। তুমি তা দ্বারাই নিজের কল্যাণে বহাল রাখতে পার। অবশ্য তোমার পর পর ৩টি দোয়া কবুল হওয়ার পর আল্লাহ্‌ পাক তোমার আর কোন দোয়া কবুল করবেন না।

অতঃপর দরবেশ বালাম বাউরকে হযরত ইউসা (আঃ) মুক্ত করে দিলেন। দরবেশ অত্যন্ত ভগ্ন হৃদয়ে বাড়িতে ফিরে তাঁর স্ত্রীকে অত্যন্ত তিরস্কার করে বললেন, হে রমণী! তোমার ছলনা এবং কুপরামর্শেই আজ আমার এ দুরাবস্থা হল। আমি তোমাকে বলেছিলাম যে, আল্লাহ্র নবীর বিরুদ্ধে বদ দোয়া কখনও শুভ হতে পারে না। কিন্তু আমি তোমাকে সে কথা কোনরূপেই বুঝাতে পারিনি।

সুদীর্ঘ তিনশত বছরের কঠোর সাধনা বিফল হয়ে গেল। আল্লাহ্‌ পাক আমার আর মাত্র তিনটি দোয়া কবুল করবেন। তারপর আর কোন দোয়াই কবুল করবেন না।

এ কথা শুনে বালাম বাউরের স্ত্রী বলল, যদি তাই হয়ে থাকে তবে তুমি আমার জন্য মাত্র একটি দোয়া কর, আর বাকী দু’টি তোমার ইচ্ছামত করিও। দরবেশ বালাম বাউর স্ত্রীর কথায় সম্মত হয়ে বলল, বেশ ভাল কথা! তবে বল, তোমার জন্য আমি আল্লাহ্‌ পাকের দরবারে কি দোয়া করব? স্ত্রী বলল, তুমি আমার জন্য এ দোয়া কর, আমি যেন সারা বিশ্বে সর্বশেষ্ঠ সুন্দরী যুবতীতে পরিণত হয়ে যাই।

দরবেশ বালাম বাউর কোনরূপ দ্বিধা না করে সঙ্গে সঙ্গে তাঁর স্ত্রীর জন্য তাঁর স্ত্রীর আশা অনুযায়ী দোয়া করলেন। আল্লাহ্‌ পাক দরবেশের দোয়ার সাথে সাথে তাঁর স্ত্রীকে বিশ্বের শ্রেষ্ঠ সুন্দরী রমনীতে পরিণত করলেন। তাঁর দেহের উজ্জল সৌন্দর্যে গৃহ আলোকিত হয়ে গেল। অবশ্য এ ঘটনার সাথে সাথে আল্লাহ্‌ পাকের কুদরতে বালাম বাউরের চেহারাটি কুৎসিত রূপ ধারণ করল, দেহের উজ্জলতা বিবর্ণ হয়ে ঘোর কৃষ্ণবর্ণ হয়ে গেল। ফলে তাঁর স্ত্রী তাঁকে ঘৃণা করে তাঁর সাহচর্য পরিত্যাগ করতঃ দেশের সুন্দর যুবকদের সাথে কু সস্পর্ক স্থাপন করে দৈহিক মিলন পর্যন্ত শুরু করে দিল।

এ ঘটনা বালাম বাউরের জন্য অসহ্যকর হয়ে পড়ল। তিনি তাঁর নিকট বাকী দু’টি কবুল হওয়ার দোয়ার একটি এখানেই প্রয়োগ করার মন স্থির করলেন এবং আল্লাহ্‌র দরবারে দোয়া করলেন, হে আল্লাহ্‌! আপনি আমার স্ত্রীকে কুকুরীতে পরিণত করুন।

দোয়া করা মাত্র আল্লাহ্‌ তা কবুল করলেন। তাঁর স্ত্রী একটি কুকুরীর রূপ ধারণ করল। এ ঘটনার ফলে দরবেশ বালাম বাউরের সন্তান-সন্ততি কান্নাকাটি করে অধীর হয়ে পড়ল। তাঁর প্রতিবেশীগণও বিশেষভাবে দুঃখ করতে লাগল। সন্তান-সন্ততি অনুরোধ করতে লাগল যে, আপনি অবিলম্বে আপনার স্ত্রীর স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে পাবার জন্য আল্লাহ্‌র দরবারে দোয়া করুন।

দরবেশ বালাম বাউরের জন্য তখন আর মাত্র একটি মকবুল দোয়া অবশিষ্ট ছিল। তাঁর অদৃষ্ট ভাল হলে তিনি নিজের ভবিষ্যত কল্যান সাধন করতে পারতেন। পাপাচরণের কারণে তিনি তাঁর অদৃষ্টকে কল্যাণ সাধন করতে পারলেন না। সন্তান-সন্ততির অনুরোধ রক্ষা করতে গিয়ে তাঁকে তাঁর জন্য রক্ষিত বাকী দোয়াটিও স্ত্রীর জন্য প্রয়োগ করতে হল। তিনি আল্লাহ্‌র দরবারে দোয়া করলেন, হে আল্লাহ্‌! আপনি আমার স্ত্রীকে তাঁর পূর্বাবস্থায় পরিবর্তিত করুন।

হযরত ইউসা (আঃ) এর জন্ম নবুয়াত প্রাপ্তি ও ধর্ম প্রচার-৬ষ্ঠ পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন

You may also like...

দুঃখিত, কপি করবেন না।