রাসূল (সাঃ)-এর হিজরত-পর্ব ১
কাফেরগণ দারুন নদওয়ার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী রাসূল (সাঃ) চতুর্দিকে তরবারী নিয়ে ঘেরাও করল। আল্লাহর রাসূলের নিকট কাফেরদের বহু আমানত ছিল। তিনি বললেন, কে আছ আমার স্থলে এ আমানত নিয়ে আমার এ চাদর মুড়ে শুয়ে পড়। হযরত আলী (আঃ) বললেন, আমি প্রস্তুত আছি। এদিকে জিব্রাইল (আঃ) পূর্বেই তাঁকে কাফেরদের ষড়যন্ত্র সম্বদ্ধে ওয়াকেফহাল করেছিলেন। রাসূল পাক (সাঃ) হযরত আলীর নিকট মানুষের আমানত সমূহ গচ্ছিত রেখে এক মুষ্টি মাটি হাতে নিলেন এবং সূরায়ে ইয়াসিনের শুরু হতে লা ইউবছিরুন পর্যন্ত পড়ে মাটিতে ফুঁ দিলেন। অতঃপর সে মাটি শাহাতিল উজুহু শাহাতিল উজুহু বলে কাফেরদের প্রতি নিক্ষেপ করলেন।
আল্লাহ পাক সে বালিকণা প্রত্যেকের চক্ষে প্রবেশ করিয়ে দিলেন। ফলে তারা দৃষ্টি শক্তিহীন হয়ে চক্ষু মর্দন করতে লাগল। এ অবসরে রাসূল (সাঃ) তাদের সম্মুখ দিয়ে বের হয়ে যান। তারা কেউ তাঁকে দেখতে পেল না। তখন বেলা দ্বিপ্রহার। রাসূল (সাঃ) সরাসরি হযরত আবু বকর (রাঃ)-এর গৃহে চলে যান। অন্যান্য সময় রাসূল (সাঃ) আবু বকরের গৃহে সকালে অথবা সন্ধ্যায় আসতেন। আজ অসময়ে তাঁর আগমন দেখে আবু বকর জিজ্ঞেস করলেন, হিজরতের অনুমতি হয়েছে কি? রাসূল (সাঃ) বললেন, হ্যাঁ। তখন আবু বকরের গৃহে আয়েশা ও আসমা উপস্থিত ছিলেন। তাঁদের সকলকে নিয়ে আবদুল্লাহ বিন আরিকাতের গৃহে গমন করলেন। আবদুল্লাহ তখনও মুসলমান হয়নি বটে কিন্তু আবু বকর (রাঃ)-এর ঘনিষ্ট ও বিস্বস্ত বন্ধু ছিল। আর আবু বকর (রাঃ) পূর্ব হতে তাঁকে এ বিষয়ে সহায়তা করার ইঙ্গিত দিয়ে রেখেছিলেন। কারণ তিনি মদিনার পথ ভালভাবে চিনতেন।
হজরত রাসূলে পাক (সাঃ) কিছু পারিশ্রমিকের উপর তাঁকে পথ প্রদর্শক হিসাবে সঙ্গে নিলেন। তবে তাঁকে বললেন, তুমি তিন দিন পরে গারে ছাওরে আমাদের সঙ্গে উট দুটি নিয়ে মিলিত হবে। উট দুটি বহু দিন পূর্ব হতে হযরত আবু বকর (রাঃ) হিজরতের জন্য প্রস্তুত রেখেছিলেন। তাঁদের একটির নাম ছিল কোছওয়া। যা রাসূল (সাঃ)-এর ছওয়ারীর জন্য দিয়েছেন। এ উট দুটি গোপনে আবদুল্লাহর নিকট প্রেরণ করা হয়েছিল।
রাসূল (সাঃ) হযরত আবু বকর ছিদ্দিক (রাঃ)-এর গৃহ হতে বের হবার সময় হযরত আছমা তাঁকে দু’তিন দিনের খাদ্য একটি চামড়ার মশকে দিয়ে দিলেন এবং আছমা স্বীয় নেতাকে (কমরবন্ধ) দু’টুকরা করে একভাগ দ্বারা তাঁর মুখ বেঁধে দিলেন। এজন্য হযরত আছমাকে জাতুন্নেতাকাইন বলা হয়। রাসূল (সাঃ) ও হযরত আবু বকর (রাঃ) আবদুল্লাহর গৃহ হতে রাত্রি বেলায় বের হলেন। গারে ছাওরের নিকট পৌঁছালে রাত্র শেষ হয়ে যায়। তাই ঐ গর্তে আশ্রয় নেয়া সমীচীন মনে করে তাতে প্রবেশ করার ইচ্ছা প্রকাশ করেন। হযরত আবু বকর বললেন প্রথমে আমি গর্তে অবতরণ করব। আমি দেখব কোন প্রকার কষ্টদায়ক কিছু আছে কি না।