মে’রাজের বিবরণ-১ম পর্ব
মে’রাজের পূর্ব রাত্রে হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) আরও কয়েকজন লোকের সাথে উম্মে হানীর গৃহে শায়িত ছিলেন। হযরত জিব্রাইল, হযরত মিকাইল ও অপর একজন ফেরেশতা সে ঘরে উপস্থিত হলেন। একে অন্যকে বললেন, এ নিদ্রিত ব্যক্তিগণের মধ্যে রাসূল (সাঃ) কোন ব্যক্তি? অপরজন বললেন, সর্বশ্রেষ্ঠ ব্যক্তি। তৃতীয় ফেরেশতা বললেন, তাকেই নিয়ে যাই।
এ বলে তাঁরা অদৃশ্য হয়ে যান। পরদিন রাত্রে রাসূল (সাঃ) (বোখারী বর্ণনা অনুসারে) হাতীমে কাবার মধ্যে এবং (ওয়াকেদীর বর্ণনা অনুসারে) শোয়াবে আবি তালেবের মধ্যে এবং (তিবরানির বর্ণনা অনুসারে) উম্মে হানীর ঘরে হযরত হামজা ও হযরত জাফরের মাঝখানে শায়িত ছিলেন। তাঁরা সকলেই নিদ্রিত হয়ে পড়লেন। গভীর রাত্রে হঠাৎ গৃহের ছাদ উন্মুক্ত হয়ে গেল। হযরত জিব্রাইল (আঃ) ঐ ঘরের ছাদ ফাড়িয়া ভিতরে প্রবেশ করলেন এবং রাসূল (সাঃ) ছাদের উপর দিয়ে হাতীমে কাবাতে নিয়ে শয়ন করলেন।
অতঃপর তাঁর সামনে শ্বেত বর্ণের একটি প্রানী উপস্থিত করা হল। যা গাধা হতে উঁচু এবং খচ্ছর হতে নীচু। ঐ প্রাণীটি বিদ্যুৎ গতিতে চলে বিধায় তাকে বোরাক বলা হয়। বোরাক এক লাফে তার দৃষ্টিশক্তি পর্যন্ত অতিক্রম করতে পারে। অতএব প্রথম আকাশ যা দৃষ্টির আওতায়, সে এক লাফে সেখানে পৌঁছাতে পারে এবং সাত লাফে সাত আসমান অতিক্রম করার শক্তি রাখে।
আল্লাহর রাসূলকে আদেশ করা হল এ বোরাকে আরোহণ করার জন্য। তিনি যখন বোরাকে আরোহণ করতে উদ্যত হলেন তখন বোরাক দুর্বিনীতভাবে দূরে সরে দাঁড়াল। হযরত জিব্রাইল (আঃ) বললেন, হে বোরাক! তুমি জান কার সঙ্গে তুমি বেয়াদবী করছ? তিনি কুল মাখলুকাতের সর্দার আল্লাহর হাবীব হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ)। তাঁর চেয়ে অধিকতর সম্মানী ব্যক্তি ও আল্লাহর প্রিয় বান্দা আজ পর্যন্ত তোমার পৃষ্টে সওয়ার হয় নি। হযরত জিব্রাইলের কথা শ্রবণে বোরাক লজ্জিত হল এবং শান্তভাব ধারণ করল।
হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) বোরাকে ছাওয়ার হলেন। হযরত জিব্রাইল (আঃ) রেকাব ধরলেন এবং মিকাইল তার লেগাম ধরে সামনে অগ্রসর হতে আরম্ভ করেন। সর্বপ্রথম খেজুর গাছে ভরা একটি প্রান্তরে পৌঁছালেন। জিব্রাইল বললেন, এখানে অবতরণ করুন এবং অযু করে দু’রাকাত নামাজ আদায় করুন। এটা আপনার হিজরতের স্থান। এ স্থানের নাম ইয়াছবের। অতঃপর বোরাকে ছওয়ার হয়ে সম্মুখে চললেন এবং সাদা রঙের এক জমীনে পৌঁছালেন। জিব্রাইল (আঃ) বললেন, এখানে অবতরণ করুন এবং দু’রাকাত নামাজ পড়ুন। হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) তাই করলেন। জিব্রাইল (আঃ) বললেন, আপনি এখন মাদইয়ানে নামাজ পড়েছেন। এখানেই তুরে ছীনা এবং মুবারক বৃক্ষ। যার মধ্যে হযরত মুসা (আঃ) আল্লাহর তাজাল্লী দেখেছিলেন এবং এখানেই আল্লাহর সাথে মুসার কথা হয়েছিল। তারপর সম্মুখে অগ্রসর হলেন। পুনরায় আর এক স্থানে যাওয়ার পর হযরত জিব্রাইল (আঃ) বললেন, অবতরণ করু এবং দু’রাকাত নামাজ পড়ুন। তিনি তাই করলেন।
অতঃপর জিব্রাইল (আঃ) বললেন, আপনি এখন বায়তুল-লাহামে (বেথেলহামে) নামাজ পড়েছেন। যা হযরত ঈসার (আঃ)-এর জন্মস্থান।