নবী করীম (সাঃ) ও হজরত আবু বকর (রাঃ) এর পরিবারবর্গের হিজরত – পর্ব ৩
নবী করীম (সাঃ) ও হজরত আবু বকর (রাঃ) এর পরিবারবর্গের হিজরত – পর্ব ২ পড়তে এখানে ক্লিক করুন
লোকজন এই অবস্থা দেখিয়া পিছু হাটিয়া গেল। আবু সুফিয়ান কোরাইশের নেতৃস্থানীয় লোকদের লইয়া আসিলেন এবং বলিলেন, ওহে তোমার তীর নিক্ষেপ একটু থামাও, আমরা তোমার সহিত কথা বলিতে চাই। কেনানা থামিয়া গেলে আবু সুফিয়ান সম্মুখে অগ্রসর হইয়া তাহার নিকট আসিয়া দাড়াইলেন এবং বলিলেন, তুমি এই মহিলাকে লইয়া প্রকাশ্যে সকলের সম্মুখ দিয়া চলিয়া যাইতেছ।
তোমার এরুপ করা ঠিক হয় নাই। কারণ তুমি তো জান, তাহার পিতা হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) এর দরুন আমাদের কি পরিমান কষ্ট মুসীবত সহ্য করিতে হইয়াছে। তুমি যখন তাহার মেয়েকে আমাদের মধ্য হইতে প্রকাশ্যে সকলের সম্মুখে দিয়া লইয়া যাইবে তখন লোকেরা ধারণা করিবে যে, আমাদের অপদস্থতা ও দুর্বলতার দরুন এমন হইয়াছে। আমার জীবনের কসম, তাহাকে আপন পিতার নিকট যাইতে বাধা দেওয়ার আমাদের কোন প্রয়োজন নাই। আর না আমরা তাহার নিকট হইতে কোনরুপ প্রতিশোধ লইবার ইচ্ছা রাখি। অতএব তুমি এখন মহিলাকে ফেরৎ লইয়া চল। তারপর যখন শোরগোল থামিয়া যাইবে এবং লোকেরা বলিবে যে, আমরা মুহাম্মাদ (সাঃ) এর মেয়েকে ফেরৎ লইয়া আসিয়াছি তখন তুমি গোপনে তাহাকে লইয়া যাইও এবং তাহার পিতার নিকট পৌছিয়া দিও।
অবশেষে কেনানা তাহাই করিলেন।
হযরত ওরওয়া ইবনে যুবাইর (রাঃ) বলেন, এক ব্যক্তি মুহাম্মাদ (সাঃ) এর মেয়ে হযরত যায়নাব (রাঃ) কে লইয়া মক্কা হইতে রওয়ানা হইল। কোরাইশের দুই ব্যক্তি তাহাকে যাইয়া ধরিয়া ফেলিল এবং উভয়ে ব্যক্তি উপর আক্রমন করিয়া তাহাকে পরাজিত করিল। তাহারা উভয়ে হযরত যায়নাব (রাঃ) কে ধাক্কা দিলে, তিনি একটি পাথরের উপর পড়িয়া গেলেন এবং তাহার গর্ভপাত হইয়া রক্তক্ষরণ হইতে লাগিল।
লোকেরা তাহাকে আবু সূফিয়ানের নিকট লইয়া গেল বনু হাশিমের মেয়েরা হযরত যায়নাব (রাঃ) কে তাহাদের নিকট দিয়া গেলেন। কিছুদিন পর হযরত যায়নাব (রাঃ) হিজরত করিয়া মদীনায় পৌছিয়া গেলেন। সেখানে পৌছার পরও তিনি সর্বদা অসুস্থ রহিলেন এবং এই অসুস্থাবস্থায়ই তাঁহার ইন্তেকাল হইল। মুসলমানগণ সকলেই তাহাকে শহীদ মনে করিতেন।
মুহাম্মাদ (সাঃ) এর স্ত্রী হযরত আয়েশা (রাঃ) বলেন, মুহাম্মাদ (সাঃ) মক্কা হইতে মদীনায় চলিয়া আসার পর তাঁহার মেয়ে হযরত যায়নাব (রাঃ) কেনানা অথবা ইবনে কেনানার সহিত রওয়ানা হইলেন। মক্কার লোকেরা তাঁহার সন্ধানে বাহির হইল। অবশেষে হাব্বার ইবনে আসওয়াদ তাঁহার নিকট পৌছিয়া গেল এবং বর্শা দ্বারা তাঁহার উটকে এমনভাবে আঘাত করিতে লাগিল যে, তাহাকে উট হইতে নিচে ফেলিয়া দিল এবং ইহাতে তাঁহার গর্ভপাত হইয়া গেল।
তিনি ধৈর্য ধারণ করিলেন এবং তাহাকে উঠাইয়া আনা হইল হাশিম ও বনু উমাইয়ার মধ্যে তাহাকে লইয়া বিবাদ লাগিয়া গেল। বনু উমাইয়ার কথা হইল, আমরা তাঁহার সেবা শুশ্রুষার অধিক দাবি রাখি, কারণ তিনি আমাদের চাচাত ভাই আবুল আস (রাঃ) এর স্ত্রী। শেষ পর্যন্ত তিনি হিন্দ বিনতে ওতবার নিকট রহিলেন হিন্দ বিনতে ওতবা তাহাকে বলিতেন, এই সকল কষ্ট তোমার পিতার কারণে হইয়াছে।
মুহাম্মাদ (সাঃ) হযরত যায়েব ইবনে হারেস (রাঃ) কে বলিলেন, তুমি কি যাইয়া যায়নাবকে লইয়া আসিবে না? হযরত যায়েদ (রাঃ) বলিলেন, অবশ্যই ইয়া রাসূলুল্লাহ। মুহাম্মাদ (সাঃ) বলিলেন, তুমি আমার আংটি লইয়া যাও। পরিচয়স্বরূপ তাহাকে দিও। হযরত যায়েদ (রাঃ) মদীনা হইতে রওয়ানা হইলেন এবং হযরত যায়নাব (রাঃ) এর নিকট সংবাদ পৌছাবার কৌশলে তালাশ করতে লাগিল। অবশেষে এক রাখালের দেখা পাইলেন। তাহাকে জিজ্ঞাসা করিলেন, তুমি কার রাখাল? সে বলিল, আবুল আস এর। কিজ্ঞাসা করিলেন, এই বকরির পাল কাহার? সে বলিল, যায়বান বিনতে মুহাম্মাদ (সাঃ) এর। অতঃপর তিনি তাঁহার সহিত কিছু দূর হাটিলেন।
সূত্রঃ হায়াতুস সাহাবা
নবী করীম (সাঃ) ও হজরত আবু বকর (রাঃ) এর পরিবারবর্গের হিজরত –শেষ পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন