জ্বলন্ত তেলে নিক্ষেপিত শহীদের কাহিনী
আল্লামা ইবনে জাওযী (রাঃ) “উয়ূনুল হেকায়েত” গ্রন্থে আবু আলী যরীর (রাঃ) হতে বর্ণনা করেন, শাম দেশে এক পরিবারে তিন ভাই ছিল। তাঁদের সময় তারা বড় বাহাদুর ও বীর বলে খ্যাত ছিল। সর্বদা কাফেরদের সাথে সংগ্রাম করতো। এক যুদ্ধে রোমের বাদশাহ তাঁদেরকে বন্দি করে বলল, তোমরা খৃষ্টধর্ম গ্রহণ করলে আমার রাজত্ব তোমাদের দান করব এবং আমার কন্যাদেরকে তোমাদের সাথে বিবাহ দিবো। কিন্তু তারা অস্বীকার করলো এবং চিৎকার করে বলে উঠলো- হে আল্লাহ্! আমদেরকে সাহায্য করুন। এটা শুনে বাদশা তিনটি প্রকাণ্ড ডেগ তৈলপূর্ণ করে আগুনের উপর চাপালেন। একাধারে তিন দিন পর্যন্ত অগ্নি প্রজ্জ্বলিত হতে লাগল।
এদিকে প্রত্যহ তাঁদেরকে ডেকের নিকট নিয়ে বলতে লাগলো, তোমরা নাসারাদের ধর্ম গ্রহণ কর, নচেৎ এই ডেকে নিক্ষেপ করবো। তাঁরাও সব সময় অস্বীকার করতে লাগলো। চতুর্থ দিন পালাক্রমে প্রথমে বড় ভাই ও পরে দ্বিতীয় ভাইকে ডেগে নিক্ষেপ করা হল। তারপর তৃতীয় ভাইকে বুঝিয়ে বলতে লাগলো এবং অনেক চেষ্টা করতে লাগলো, যেন নাছারার ধর্ম গ্রহণ করে। কিন্তু সে কিছুতেই গ্রহণ করলো না; অস্বীকার করলো।
ইত্যবসরে একজন অগ্নিপূজক এসে বলল, বাদশা নামদার! আমি তাঁকে ধর্মান্তরিত করতে পারবো। সে বলল, আরববাসীরা নারীজাতিকে অতিশয় ভালবাসে। আমার একটি পরমা সুন্দরী কন্যা আছে, তাঁকে এই কন্যা দান করলে সে ইসলাম ধর্ম ত্যাগ করবে। এ কথা বলে সে চল্লিশ দিন সময় নিল।
সে তাঁকে বাড়ি নিয়ে তাঁর মেয়ের হাওয়ালা করে দিয়ে মেয়েকে বলল, এই লোকটিকে তোমার বশে এনে ধর্মান্তরিত করে দিবে। মেয়ে বলল, নিশ্চয় আমি এ কাজ সম্পন্ন করবো। আপনি নিশ্চিন্ত থাকুন। যুবক সারা দিন রোজা রাখে এবং সারা রাত ইবাদাত করে কাটাতে লাগলো। এরূপে এক মাস অতিবাহিত হল। কিন্তু সে রমনীর প্রতি ভ্রূক্ষেপও করলো না।
একদিন তাঁর পিতা জিজ্ঞাসা করলো, তোমার কাজ কত দূর অগ্রসর হয়েছে? মেয়ে বলল, তাঁর দুই ভাই প্রাণ ত্যাগ করায় সে চিন্তিত। সে জন্য আমার দিকে আকৃষ্ট হয় না। আমাকে তাঁর সাথে অন্য শহরে পাঠিয়ে দিন এবং বাদশাহর নিকট হতে আরো সময় নিন। তদানুসারে তাঁদেরকে অন্য শহরে পাঠিয়ে দেওয়া হল। সেখানেও যুবক পুরা দিন রোজা রাখে এবং সমস্ত রাত্রি ইবাদাত করে কাটাতে লাগলো, রমনীর প্রতি দৃষ্টিপাতও করলো না। নির্ধারিত সময়ের শেষ রাত্রে ঐ রমণী তাঁকে বলল, হে যুবক! তুমি তোমার প্রভুর আদেশ পালনে ও তাঁবেদারিতে পূর্ণতাপ্রাপ্ত হয়েছো। তোমার প্রতিপালক আল্লাহই সত্য। আমিও তোমার ধর্ম গ্রহণ করলাম এবং পূর্ব পুরুষের বাতিল ধর্ম ছাড়লাম।
যুবক বলল, কি কৌশলে আমরা এই স্থান থেকে পলায়ন করতে পারি?
রমণী একটি বলিষ্ঠ অশ্ব নিল। উভয়ে অশ্বে আরোহণ করে পুরো রাত্রি পথ চলতো এবং পুরা দিন লুকিয়ে থাকতো। একরাত্রে পথ চলছে, এমন সময় কয়েকজন অশ্বারোহীর আওয়াজ শুনতে পেল। একটু পরেই সেই যুবক দেখতে পেল, অশ্বারোহীরা তাঁর ঐ দুই নিহত ভাই। তাঁদের সাথে ফেরেশতাও ছিল। যুবক সালাম দিয়ে জিজ্ঞাসা করলো, তোমরা তো নিহত হয়েছিল, এখন কি করে এখানে এলে? তারা বলল, আমাদের মৃত্যু এরূপ ছিল যে, আমরা ডেগে ডুব দিয়ে জান্নাতুল ফিরদাউসে উপনীত হলাম। এখন আল্লাহ্ তা’য়ালা আমাদেরকে তোমার সাথে এই রমনীর বিবাহ দেওয়ার জন্য প্রেরণ করেছেন। অনন্তর বিবাহ কার্য সম্পন্ন করে তারা যেখান হতে এসেছিল সেখানে চলে গেল। যুবক নববিবাহিতা স্ত্রীকে নিয়ে স্বদেশে পৌঁছালো। সাথে সাথে এই ঘটনা দেশময় ছড়িয়ে পড়ল।