আছিয়ার কঠোর পরীক্ষা শুরু-শেষ পর্ব
আছিয়ার কঠোর পরীক্ষা শুরু-পর্ব ৬ পড়তে এখানে ক্লিক করুন
এ সময় অস্পষ্ট স্বরে ওষ্ঠ নাড়িয়ে তিনি আল্লাহর দরবারে কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছিলেন। এ মুহূর্তে হামান তাঁকে একবার লক্ষ্য করে বলল, মাননীয়া বেগম সাহেবা! আমি বাদশাহর পক্ষ হতে আর একবার আপনাকে অনুরোধ জানাচ্ছি, আপনি একবার অন্ততঃ বাদশাহকে খোদা বলে স্বীকার করুন, অনর্থক জেদ করা কিছুতেই ভালো না।
দেখুন এ যে অপ্রীতিকর ঘটনাগুলো ঘটাতে বাধ্য হলাম এর কারণ তো কেবল আপনিই। তবে যা ঘটার তা ঘটে গেছে। আরও কিছু না ঘটাতে হয় সেজন্যই আপনাকে এ শেষ অনুরোধ-আপনি আপনার স্বামীর আশা আকাঙ্ক্ষা পূর্ণ করুন। আমরা সকলেই আপনার একান্ত হিতাকাংখী বলে পুনঃ পুনঃ আপনাকে এ একই অনুরোধ করছি।
আছিয়া এর জবাবে বললেন, হামান! তোমাকে এজন্য ধন্যবাদ জানাই কিন্তু তুমি যতই বল না কেন আমার সে একই কথা আমি সত্যকে বিসর্জন দিয়ে মিথ্যাকে কোন প্রাকারেই স্বীকার করতে পারবো না। এ অনুরোধ তুমি আর একবারও আমাকে করিও না; বরং আমি তোমাকে আমার শেষ অনুরোধ করছি, তুমি বাদশাহর প্রধান উজির হিসাবে তাকে সুপরামর্শ দাও যেন তিনি আর বিলম্ব না করে পাপ বর্জন করেন এবং পুর্বকৃত পাপরাশির জন্য দয়াময় আল্লাহর সমীপে মার্জনা ভিক্ষা করেন।
আছিয়ার এ শেষ বাক্যটি ফেরাউনের কানে পৌঁছেবা মাত্র সে গর্জিয়া উঠল। সে হামানকে বলল, হামান! তুমি রেখে দাও তোমার অনুরোধ উপরোধ। যে নিজের ধ্বংস ডেকে আনতে চায় তার কল্যাণ করা যায় না। এখনও তাঁর স্পর্ধা এবং ধৃষ্ঠতার মাত্রা দেখছি কি? আমি আর সহ্য করব না এ মুহূর্তে এর কঠোড় প্রতিফল তাঁকে ভোগ করাব।
তাঁকে তাঁর সন্তানদের মত উত্তপ্ত তেলে নিক্ষেপ করবো না। তাতে মুহূর্তে জীবন প্রদীপ নির্বাপিত হয়ে সে প্রাপ্য শাস্তি উত্তমরূপে ভোগ করবে না। তাঁকে আমি তিলে তিলে নিষ্পেষিত করে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে দিব যেন এরূপ জেদের প্রতিফল কি ভয়াবহ তা উত্তমরূপে উপলব্ধি করতে পারে।
অতঃপর বাদশহর হুকুমে একটি ভীষণ পেষণ যন্ত্র উপস্থিত করা হল। তারপর নির্দয় জল্লাদের প্রতি নির্দেশ হল, আছিয়াকে এ যন্ত্রের ভিতর নিক্ষেপ কর। আদেশ মাত্র মুহূর্তে তা প্রতিপালিত হবার সাথে সাথেই পেষণ-যন্ত্র প্রচন্ডভাবে আছিয়ার সর্বদেহ খিঁচিয়ে ধরল এবং ধীরে ধীরে তার বেগ বৃদ্ধি পেতে লাগলো।
ফলে আছিয়ার সারা অঙ্গ প্রতঙ্গ কুঁকরিয়ে সঙ্কুচিতে হয়ে গেল। তীব্র যন্ত্রনায় মুখের দৃশ্য বিবর্ণ হয়ে গেল। ক্রমে ক্রমে তাঁর শ্বাস যন্ত্রের ক্রিয়া স্তিমিত হয়ে আসলো। তখন তাঁর আর শ্বাস প্রশ্বাস করার মত শক্তি রইলো না। শ্বাস রুদ্ধ হবার উপক্রম হলো। এ সময়ও দেখে গেল অতি অষ্পষ্ট আওয়াজে ওষ্ঠ নাড়িয়ে তিনি কি যেন বলছেন।
এটা দেখে ফেরাউন তার নিকটে এসে অবনত হয়ে শুনলো, আছিয়া তাঁর প্রাণ পাখিটি শূন্যে উড়ে যাবার ঠিক পূর্ব মুহূর্তেও বলছেন, হে করুণাময়! তুমি আমার প্রিয়তম অবুঝ স্বামীকে সুমতি প্রদান করো। তার এ ভ্রান্ত মোহকে ভেঙ্গে দিয়ে তাকে মুক্তির পথ প্রদর্শন করো। বলতে বলতে তাঁর ওষ্ঠদ্বয়ের স্পন্দনটুকু স্তব্ধ হয়ে গেল।