
আমাদের তানিয়া খালামনি ছিলেন খুবই একরোখা আর বদমেজাজি। তবে পরিচিতজনদের কাছে শুধু এতটুকুই নয়, তিনি ছিলেন অসম্ভব উচ্ছলও। কিন্তু হঠাৎ করেই যেন তার জীবনীশক্তি কমে যেতে লাগল। কলেজে যাওয়া বন্ধ করে দিলেন, কারও সাথেই তেমন একটা কথা বলতেন না।
কিছুদিন পর হঠাৎ তার হাত-পা ফুলে যেতে লাগল। তাই মামা তাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে গেলেন। ডাক্তার অনেক কিছু পরীক্ষা করলেন, কিন্তু কোনো সমস্যাই ধরতে পারলেন না। ধীরে ধীরে তার অবস্থা আরও খারাপ হতে লাগল। অনেক ডাক্তার দেখানো হলো, কিন্তু কেউই কোনো রোগ নির্ণয় করতে পারলেন না।
এদিকে তানিয়া খালামনি দিন দিন আরও বেশি নিস্তেজ হয়ে পড়লেন। সারাদিন শুধু কান্নাকাটি করতেন। কিছুদিন পর তার শরীরে আরও অদ্ভুত পরিবর্তন দেখা দিল—গায়ের চামড়া খসে খসে পড়তে লাগল! পুরো শরীর এক বীভৎস রূপ নিল। বাড়ির সকলে অনেক চেষ্টা করেও কিছুই বুঝতে পারলেন না।
অবশেষে, ১২ই ডিসেম্বর তানিয়া খালামনি না ফেরার দেশে চলে গেলেন।
তার মৃত্যুর কয়েক মাস পর, যখন সবাই মোটামুটি তার এই অস্বাভাবিক মৃত্যুর কথা ভুলতে বসেছে, তখন রহস্যের জট খুলতে শুরু করল।
তানিয়া খালামনির ডায়েরি লেখার অভ্যাস ছিল। তার মৃত্যুর কারণ জানা যায় সেই ডায়েরি থেকেই! সেখানে স্পষ্টভাবে লেখা ছিল সবকিছু—
“আজ আমি বিরক্ত হয়ে একটা বিড়ালের গায়ে গরম পানি ঢেলে দিলাম। কিন্তু আশ্চর্যের ব্যাপার হলো, দুপুরে ঘুমানোর সময় আমি বিড়ালটাকে স্বপ্নে দেখতে পেলাম। বিড়ালটা আমাকে চার টুকরো আপেল খেতে দিল, কিন্তু এক টুকরো খেয়েই আমার ঘুম ভেঙে গেল।”
“আজ আবার বিড়ালটা আমার স্বপ্নে এসেছিল। আমি যেন শুনতে পেলাম, সে স্পষ্ট ভাষায় বলছে—‘আমাকে যেমন কষ্ট দিলি, তোকেও তেমন কষ্ট পেতে হবে।’ এরপর বিড়ালটি তার আকার পরিবর্তন করে এক ভয়ঙ্কর রূপ নিল।”
ডায়েরির এতটুকুই লেখা ছিল। এরপরের একটি পাতায় শুধু একটি তারিখ লেখা—“১৬ই ডিসেম্বর”।
ডায়েরির ঘটনাগুলো পড়ার পর আর কারও বুঝতে বাকি রইল না যে, সেই বিড়ালটি কোনো সাধারণ বিড়াল ছিল না! বরং, তা ছিল কোনো অতিপ্রাকৃত অস্তিত্ব!
গরম পানি ঢেলে দেওয়ার কারণে বিড়ালটির গায়ের চামড়া যেমন খসে খসে পড়েছিল, তেমনি তানিয়া খালামনিরও গায়ের চামড়া খসে খসে পড়তে শুরু করেছিল!
অবশেষে, কী হয়েছিল?
এটা কি শুধুই এক ভয়ঙ্কর কাকতালীয় ঘটনা, নাকি এর পেছনে সত্যিই ছিল অতিপ্রাকৃত কোনো শক্তির প্রতিশোধ? কেউ জানে না… কিন্তু তানিয়া খালামনির রহস্যময় মৃত্যু আজও আমাদের মনে ভয়ের সঞ্চার করে!