৫০০ বছর পর -আবুল কালাম আজাদ

কয়টা বাজে জানার জন্য আব্দুল্লাহ ঞরসব বলে শব্দ করে। সঙ্গে সঙ্গে বাতাসের মধ্যে রেড সিগন্যালে ঞরসব ভেসে ওঠে। সাতটা দশ মিনিট বাজে। এখন সময় দেখার জন্য ঘড়ি বা কোন যন্ত্রের দরকার হয় না। ঞরসব বললেই বাতাসের মধ্যে সঠিক সময় ভেসে ওঠে। বাতাসে সময় প্রদর্শনের এ সুযোগ করে দিয়েছে আন্তর্জাতিক সময় নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা ঞরসব গধপযরহব. সময় দেখে আব্দুল্লহ দ্রুত গোসল করতে বাথরুমে ঢোকে। তিন মিনিটের মধ্যে গোসল শেষ করে। গোসল খানায় দাঁড়িয়ে ইশারা করলে পানি চলে আসে।
কি পরিমাণ পানি ব্যবহার করবে তা দেওয়ালে ডিজিটাল অক্ষরে লেখা থাকে। প্রয়োজনীয় পরিমাণে টিপ দিলে সেই পরিমান পানি আসবে। আবার পানি কি ঠান্ড না গরম নাকি স্বাভাবিক এর জন্যও রয়েছে নির্দেশিকা। যখন যে ধরনের পানি দরকার তখন সে ধরনের পানি এসে শরীরে পড়বে। শুধু ব্যবহার করার আগে নির্দেশ দিতে হবে। গোসল সেরে আব্দুল্লাহ স্কুলের জন্য প্রস্তুতি নেয়। ল্যাপটপটি ব্যাগের মধ্যে রেখে বিল্ডিং এর পাশে খধহফরহম ঝঢ়ধপব এ দাড়ায়। পূর্ব নির্ধারিত সময় অনুযায়ী সকাল আটটা ত্রিশ মিনিটে স্কুল বিমান তাকে সেখান থেকে উঠিয়ে যথাসময়ে স্কুলে যায়। আব্দুল্লাহর বাবা ইতোমধ্যে বাজার থেকে বাসায় ফিরে আসেন। ফজর নামাজ শেষে ইতালিতে সকালের বাজার করতে গিয়েছিলেন। ইতালির রোমে সতেজ সবজি ও ভালো মাছ পাওয়া যায়। বাজার করেছেন  এক লাখ বিশ হাজার টাকার । ব্যাগে করে বিভিন্ন খাবারের ট্যাবলেট নিয়ে এসেছেন। বাজারে এখন বিভিন্ন ধরণের খাবারের ট্যাবলেট কিনতে পাওয়া যায়। এগুলোর দাম খুব বেশি। সাধারণত বিত্তবান ও ব্যবসায়ী শ্রেণির লোকজন ট্যাবলেটের খাবার খান। ট্যাবলেটের পাশাপাশি স্বাভাবিক খাদ্যদ্রব্য, মাছ, মাংস, শাক-সবজি ও ফলমূল পাওয়া যায়। তিন ধরণের খাবার পাওয়া যায় বাজারে। এগুলো হলÑ ১। খাবারের ট্যাবলেট। ২। রান্না করা প্যাকেটজাত খাবার এবং ৩। রান্না ছাড়া প্যাকেটজাত খাবার। কোনো খাবারই খোলা বিক্রি হয়না। খাবারের মান নিয়ন্ত্রন করার জন্য রয়েছে শক্তিশালী মনিটরিং ব্যবস্থা। তবে খাবারের মধ্যে তেমন কোন স্বাদ নেই। খাবারের প্রতি মানুষের খুব একটা আকর্ষণও নেই। খাবার না খেয়ে কোন রকমে জীবন পরিচালনা করা গেলে বর্তমান বিশ্বের অধিকাংশ মানুষই হয়তো খাবারই খেতো না! তীব্র: আমাদের সময়ের চিকিৎসা ব্যবস্থাও তো অনেক উন্নত, তাই না দুর্দান্ত? দুর্দান্ত: অবশ্যই। শরীরে কোন রোগ দেখা দিলে চিকিৎসা করাও আগের তুলনায় অনেক সহজ। হাসপাতালে গিয়ে দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করার দরকার হয় না। সিরিয়াল মেইনটেইনের ঝামেলাও নেই তেমন একটা। রাস্তার মোড়ে মোড়ে বিভিন্ন কোম্পানীর হেলথ্ সেন্টার আছে। এসব সেন্টারে রয়েছে কম্পিউটারাইজড হেলথ চেকিং সিস্টেম। হেলথ সেন্টারের চেকআপ রিপোর্ট তৎক্ষনাৎ বের হয়ে আসে। শরীরের কোথায় সমস্যা এবং কি কি ওষুধ লাগবে তাও এক সাথে রিপোর্ট হয়ে আসে। রোগীকে কোন কিছু ব্যাখ্যা করে বলতে হয় না। হেলথ সেন্টারের এক কর্নারে রয়েছে যাবতীয় ওষুধ। রিপোর্ট দেখিয়ে সেখান  থেকে ওষুধ কেনার ব্যবস্থা আছে। শরীরের বিভিন্ন জটিল অপারেশনের ক্ষেত্রে ডাক্তারের সাহায্যের প্রয়োজন হয়। বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে ডাক্তারদের চেম্বার আছে। বর্তমানে ডাক্তারদের প্রধান কাজ হচ্ছে রোগীদের মনোবল চাঙ্গা করা।
রোগী যাতে মানসিকভাবে ভেঙ্গে না পড়ে সে জন্য প্রয়োজনীয় টিপস দিয়ে থাকেন ডাক্তাররা। ডাক্তারদের বর্তমান নতুন একটি উপাধী হচ্ছে গবহঃধষ ঝঁঢ়ঢ়ড়ৎঃবৎ. আধুনিক বিশ্বে নতুন কিছু রোগের আবির্ভাব হয়েছে। তবে জ্বর, সর্দি, ডায়ারিয়া, ক্যান্সারসহ অধিকাংশ রোগের টিকা আবিষ্কৃত হওয়ায় এসব রোগ থেকে এখনকার মানুষ প্রায় আশংকামুক্ত। এইডস রোগের প্রতিষেধক বের হয়েছে। নতুন রোগের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ রোগ হচ্ছে ঞ.উ বা ঞড়ঁপয ধহফ উরব. কোনো রকম পূর্ব লক্ষণ ছাড়াই এ রোগে এখন মানুষ মারা যাচ্ছে। এ রোগের ব্যাপারে ডাক্তাররাও ঠিকমত কিছু বলতে পারছে না। পরীক্ষা করে দেখা গেছে, অনিয়ন্ত্রিত জীবন-যাপনে অভ্যস্ত ব্যক্তিরাই এ রোগে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। বায়ুমন্ডলে ভাসমান ক্ষতিকর জীবানু যাতে মানুষের শরীরে প্রবেশ করতে না পারে সেজন্য বের হয়েছে জীবানুনাশক ¯েপ্র। জীবানুনাশক এ ¯েপ্র সাধারণত বাসার মধ্যে ব্যবহার করা হয়। তীব্র: দুর্দান্ত! দুর্দান্ত: বল। তীব্র: দেখ, আব্দুল্লাহর বাবা অল্প সময়ের মধ্যে ইতালি থেকে বাজার করে এসেছেন। দুর্দান্ত: লক্ষ্য কর তিনি কি করেন। আকরাম উদ্দীন বাজার থেকে আনা খাবারের ট্যাবলেটগুলো রান্নাঘরের নির্দিষ্ট স্থানে রেখে তার বড় ভাই ইয়াসিনের সাথে ফোনে কথা বলার ইচ্ছা পোষন করেন। হাতে কোনো মোবাইল সেট নেই। সেটের দরকারও এখন হয় না। এগুলো আগেকার মানুষদের দরকার হতো। এখন শুধু মোবাইল কোম্পানির অফিসে নিজের নাম্বারটা বুকিং দিলেই হয়। সাত বছরের উপরের কোন মানুষ এখন আর নাম্বার ছাড়া নেই। মোবাইল কোম্পানির মূল সেন্টার থেকে সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করা হয়। কথা বলার সময় ছবিও ভাসতে থাকে বায়ু মন্ডলের মধ্যে। এক সময় মানুষ হাতে সেট নিয়ে চলত। বারবার চার্জ দিতে হতো। সেট নষ্ট হলে ঠিক করা লাগত। মোবাইল সেট চোরদের উৎপাতও তখন কম ছিল না। এতসব ঝামেলা এখন আর নেই। কারো সঙ্গে কথা বলার জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুতি নিলেই ফোন চলে যায় কাক্সিক্ষত ব্যক্তির কাছে। আকরাম উদ্দিন তার বড় ভাইয়ের সাথে কথা বলবেন- এমনটি ভাবনার সাথে সাথে সে হ্যালো বলে ওঠে। কি দরকার আকরাম? আমি ব্যস্ত। তাড়াতাড়ি বল, কি বলবে। তুমি কোথায়? উপরে মনে হচ্ছে? হ্যাঁ আমি পৃথিবী থেকে অনেক উপরে আছি। পাওয়ার হাউজে কাজ করছি। আচ্ছা ঠিক আছে। পরে কথা বলব। কথা বন্ধ করে আকরাম উদ্দিন। ইয়াসিন একজন পদার্থ বিজ্ঞানী।
তিনি পাওয়ার হাউজে কাজ করেন। পাওয়ার হাউজ মূলত: সূর্যের আলোক ও তাপ শক্তিকে ব্যবহার করে আলো ও চুলা জ্বালানো, গাড়ি ও বিমান চালানো এবং কম্পিউটারসহ অন্যান্য বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি পরিচালনা সংক্রান্ত গবেষণা সংস্থা। পাওয়ার হাউজ বর্তমান সভ্যতার উন্নতি ও অগ্রগতি অজর্নের ক্ষেত্রে অসামান্য অবদান রেখে চলেছে। পৃথিবীতে এক সময় মানুষ পৃথিবীর অভ্যন্তরস্থ গ্যাস ও পেট্রোলিয়াম জাতীয় পদার্থ ব্যবহার করে প্রয়োজনীয় অনেক কাজ সম্পাদন করেছে। কিন্তু এক সময় সেগুলো শেষ হয়ে যাওয়ায় বিজ্ঞানীরা বিকল্প পথ খোঁজা শুরু করেন। বিজ্ঞানীদের নিরলস প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকায় এক সময় সৌরশক্তিকে ব্যাপকভাবে ব্যবহার করার সুযোগ পায়। সৌরশক্তি ব্যবহারের অন্যতম সুবিধা হল এটি নিঃশেষ হওয়ার নয়। পৃথিবী যতদিন থাকবে, যতদিন সূর্য ও নক্ষত্র মন্ডলীর গতিময়তা অব্যাহত থাকবে, সৌরজগত যতদিন তার স্বাভাবিক কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার সুযোগ পাবে ততদিন মানুষ সূর্যের এ শক্তিকে কাজে লাগাতে পারবে। ইয়াসিন তার ছোটভাই আকরাম উদ্দিনের সাথে সংক্ষিপ্ত কথা শেষ করে নিজের কাজে মনোনিবেশ করেন। তিনি একজন নামকরা বিজ্ঞানী। একজন প্রকৃতি অনুরাগীও। প্রকৃতিকে গভীরভাবে ভালবাসেন এবং পর্যবেক্ষণ করেন। সূর্য থেকে পাওয়ার সংগ্রহের কাজ করার পাশাপাশি তিনি বায়ুমন্ডলের মধ্যে মনিটর বা পর্দা ছাড়া টিভির অনুষ্ঠান দেখার কৌশল আবিষ্কার করেছেন। গত শতাব্দীতে কয়েকজন বিজ্ঞানী এ বিষয়টি নিয়ে অনেক গবেষণা করেও সফল হতে পারেননি। তাদের গবেষণার মূল থিম ছিল যেহেতু বাতাসের মধ্যে অনুষ্ঠান বা প্রোগ্রাম ভাসমান বা চলমান থাকে, সেহেতু ছবি বা কথা মনিটরের পরিবর্তে বায়ুর মধ্যে স্থির অবস্থায় রাখা গেলে বায়ুমন্ডলের মধ্যে অনুষ্ঠানমালা দেখা সম্ভব। বিগত শতাব্দীর বিজ্ঞানীদের এ থিওরিকে ভিত্তি হিসেবে নিয়ে ইয়াসিন মনিটর ছাড়া টিভির অনুষ্ঠান দেখার পদ্ধতি আবিষ্কার করে বিশ্ববাসীর প্রশংসা কুড়িয়েছেন। তীব্র: আকরাম উদ্দিনের এক ভাই নাকি কৃষিক্ষেত্রে অনেক অবদান রেখেছেন? দুর্দান্ত: হ্যাঁ, আকরাম উদ্দিনের অপর এক ভাই কৃষিক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা রেখেছেন। তার নাম আলফাজ উদ্দিন। তিনি এগ্রিকালচার এন্ড টেকনোলজির উপর উচ্চতর ডিগ্রি অর্জন করেছেন। বিশ্বের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের নামকরা প্রফেসরদের সাথে আলফাজ উদ্দিন বিগত দশ বছর ধরে গবেষনা চালিয়ে যাচ্ছেন।
তাদের গবেষণার উদ্দেশ্য হল কিভাবে প্রতিকূল পরিবেশে দ্রুততম সময়ে বিভিন্ন খাদ্যশস্য উৎপাদন করা যায়। এক্ষেত্রে তারা অনেকটা সফল হয়েছেন। তাদের গবেষণার মাধ্যমে নতুন জাতের ধান বের হয়েছে যে ধান থেকে মাত্র বিশ দিনে ধান উৎপন্ন হয়। শুধু তাই না, জমিতে একবার বীজ বপন করলে তা থেকে পরপর চারবার ফসল ফলে। গম, ভূট্টাসহ অন্যান্য শস্যগুলোর ও নতুন জাত বের হয়েছে যেগুলো বিশ থেকে ত্রিশ দিনের মধ্যে নতুন শস্য দেয়। এমন মেশিন বের হয়েছে যার মাধ্যমে ধান দিলে প্রথমে তা সিদ্ধ হয়। পরবর্তীতে তা ভাত হয়ে প্যাকেট আকারে মেশিন থেকে বের হয়ে আসে। নতুন এ মেশিনের নাম জরপব গধশরহম গধপযরহব যা সংক্ষেপে জগগ নামে পরিচিত। ফসলের মতো ফলমূলের ক্ষেত্রে এসেছে অনেক পরিবর্তন। ফলের গাছ বা ফলের বাগান আগের মতো নেই। কিন্তু যেগুলো আছে সেগুলো থেকে সারা বছর প্রচুর ফল পাওয়া যায়। ফলের গাছগুলোতে এখন আর বিরতি দিয়ে ফল হয় না। পাকা ফল গাছ থেকে তুলে নেওয়ার পরপরই নতুন করে ফুল ও ফল আসে। বাজারে তিনভাবে ফল বিক্রি হয়, আসল ফল, ফলের জুস এবং ফলের ট্যাবলেট। তীব্র: পৃথিবীতে লোকসংখ্যা বেড়েছে প্রচুর।
কিন্তু সে তুলনায় হাঁস বা মুরগীর সংখ্যা বাড়েনি। তাই বলে কি ডিমের সংকট দেখা দিয়েছে? দুর্দান্ত: মোটেই না। কারণ এখন প্রতি তিন ঘণ্টা অন্তর হাঁস ও মুরগীতে একটি করে ডিম পাড়ে। অথচ আগেকার পৃথিবীতে চব্বিশ ঘণ্টায় একটি ডিম পাড়ত। তখনকার মানুষ নতুন প্রজাতির হাঁস-মুরগী ও বিশেষ পদ্ধতির খাবার তৈরি করতে জানত না। এজন্য এখনকার অনেক মানুষ আগের দিনের মানুষদের বোকা মনে করছে।

আরো পড়তে পারেন...

গরীবের খানা_মোহাম্মদ লিয়াকত আলী

একাধিক কন্যা সন্তান লালন পালন করে বিয়ে দানকারী পিতা-মাতার জান্নাতের খোশ খবর দিয়েছেন আল্লাহর নবী…

গাধার সংগীতচর্চা

এক গাঁয়ে এক ধোপার ছিল একটা গাধা। তার নাম অদ্ভূত। দিনভর গাধা ধোপার কাপড়ের বোঝা…

গাধা ও ব্যবসায়ী

এক লবণের ব্যবসায়ী সস্তায় পেয়ে একদিন বাজার থেকে প্রচুর লবণ কিনল। বোঝা বইবার জন্য ব্যবসায়ীর…