১৯৩২ খ্রিস্টব্দের ঘটনা- ৩য় পর্ব
১৯৩২ খ্রিস্টব্দের ঘটনা- ২য় পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন
অবশেষে সেই দিনটি এসে যায়, সেই দিনটির জন্য লক্ষ লক্ষ জ্ঞানী গুণী মানুষ অধীর আগ্রহে প্রহর গুনছিলেন। সেই দিন ছিল সোমবার। লক্ষ লক্ষ মানুষের উপস্থিতিতে বেলা ১২ (বার) ঘটিকার সময় কবর দুটি খুলে দেখা হয়। কবর খুলে দেওয়ার পর দেখা গেল সত্যি সত্যিই হযরত হুজায়ফাতুল ইয়ামান (রাঃ)-এর কবরে কিছুটা আর্দ্রতা দেখা দিয়েছে। অথচ কবরদ্বয় থেকে দজলা নদীর দূরত্ব ছিল প্রায় দু’ফার্লং।
বিভিন্ন দেশের রাষ্টীয় প্রতিনিধিবৃন্দ, ইরাকের পার্লামেন্ট সদস্য এবং বাদশাহ ফয়সালের উপস্থিতে সর্ব প্রথম হযরত হুজায়ফাতুল ইয়ামান (রাঃ)-এর কবরটা খুলে দেওয়া হল। ক্রেনের সাহায্য তাঁর পবিত্র লাশটা কবর থেকে এমন ভাবে উঠানো হয় যে, মোবারক লাশটা আপনিতেই ক্রেনের মাথায় ফিট করে রাখা স্ট্রেচারে এসে পৌঁছে যায়। এরপর স্ট্রেচারটি ক্রেন থেকে আলাদা করে নেওয়া হলে শাহ ফারুক কাঁধে করে উঠিয়ে এনে লাশ মোবারককে একটি কফিনের ভিতর রেখে দেন। তারপর একইভাবে হযরত যাবের (রাঃ)-এর লাশটিকেও তুলে আনা হয়।
সাধারণ মানুষের লাশ কবরে দুই চার দিন না হলেও দু’ এক মাসে পঁচে গলে শেষ হয়ে যায় অথচ সম্মানিত সাহাবিদ্বয়ের লাশের বেলায় দু’এক যুগ নয় দু’এক শত বৎসর নয় বরং শত শত বৎসর কেটে গেলেও কোন প্রকার পরিবর্তনের ছোঁয়া লাগেনি। এমনকি তাঁদের কাফন পর্যন্ত এত স্বাভাবিক অবস্থায় ছিল যে, লাশ মোবারক দেখে কেউ ভাবতেই পারছিলেন না যে, লাশগুলো সুদীর্ঘ ১৩০০ (তেরশত) বৎসরের প্রাচীন বরং মনে হচ্ছিল তারা বোধহয় ঘণ্টা তিনেক আগেই ইহধাম ত্যাগ করেছেন।
সবচেয়ে বিস্বময়কর ব্যাপারটা হল, তাঁদের চোখ ছিল খোলা। আর চোখে ছিল এমনই এক অপার্থীব জ্যোতি যে, অনেকেই চোখে চোখ রেখে থাকতে গেলে সেই অপার্থীব জ্যোতির সামনে তাঁদের চোখগুলি ধরে রাখতে পারছিলেন না। বিশ্বের বড় বড় ডাক্তারগণ ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন। তারা এই দৃশ্য দেখে বিষ্ময়ে হতবাক হয়ে যান। জনৈক আন্তর্জতিক খ্যাতি সম্পন্ন জার্মান চক্ষু বিশেষজ্ঞ অত্যন্ত আগ্রহ সহকারে সব কিছু খুঁটীয়ে খুঁটীয়ে দেখে যাচ্ছিলেন। এ দৃশ্য এমনই প্রভাব বিস্তার করে যে, পবিত্র লাশ দুটি কফিনের ভিতরে রাখার সাথে সাথেই তিনি মুফতি সাহেবের কাপড় ঝাপটে ধরে বললেন, আপনাদের ইসলামের তথা কুরআনের সত্যতার স্বপক্ষে এর চেয়ে বড় প্রমাণ পৃথিবীতে আর কি হতে পারে? আপনার হাতটা দিন!
আর শুনুন, এখন থেকে আমি একজন মুসলমান! এই বলে সাথে সাথে তিনি আবেগের সাথে চিৎকার দিয়ে মুফতি সাহেবের হাতে তাওহিদ-রিসালাতের অমীয় বাণী লা-ইলাহা-ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রসূলুল্লাহ পাঠ করে মুসলমান হয়ে ইসলামের সুশীতল ছায়ায় আশ্রয় নেন। মোটকথা, লাশ মোরারক বের করে এনে কাঁচ দ্বারা নির্মিত আয়নার অপরূপ সুন্দর কফিনের ভিতর রেখে দেওয়া হয়। তারপর জনতার চক্ষু শীতল করার নিমিত্তে তাঁদের নূরানী চেহারা মোরারক থেকে কাফন সরিয়ে নেওয়া হয়।
ইরাকী সৈন্যরা যথারীতি ছালাম প্রদর্শন করেন এবং তারা তোপ ধ্বনি করেন। তারপর উপস্থিত জনতা তাঁদের নামাজে জানাজা আদায় করেন। এরপর আলিমগণ কফিন দুটি কাঁধে উঠিয়ে নেন। কিছু দূর যাওয়ার পর বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিবর্গ এবং সবশেষে শাহ ফয়ছাল কাঁধ পেতে ধরেন।
এ সময় একটি জার্মান টেলিভিশন ফিল্ম তৈরির কোম্পানি বড়ই কৃতিত্বপূর্ণ কাজ আঞ্জাম দেয়। তাঁদের এই পদক্ষেপ আগত অসংখ্যা দর্শনার্থীদের জন্য বিরাট একটা এহসান! তারা কবর দুটির দু’শ ফুট উপরে চারটি ইস্পাতের খামের উপর ৩০(ত্রিশ) ফুট লম্বা এবং ২০ (বিশ) ফুট চওড়া টেলিভিশনের খামের চতূষ্পার্শ্বে ছাদ সংলগ্ন স্থানে চারটি স্কীন স্থাপন করেন।
সূত্রঃ কবরের আযাব