হেরা গুহায় ধ্যান
দিন যতই অতিক্রান্ত হচ্ছে রাসূলুল্লাহ (সাঃ)- এর হৃদয় মন বিভিন্ন চিন্তা ভাবনায় ততই বিভোর হচ্ছিল। এ সময় তাঁর বয়স পঁয়ত্রিশ বছরে উপনীত হয়েছে। দু বছর আগে থেকেই তাঁর হৃদয় জগতে ভাবান্তর আরম্ভ হয়। দিন যতই যাচ্ছে ততই তা গভীর হতে গভীরতর হচ্ছে।
সদা সর্বদা তাঁর নয়ন যুগল কি যেন এক অপূর্ব জ্যোতি ভাসত। কর্ণপটে কি এক সুললিত সুর ঝংকৃত হত। এ সময় তিনি পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন হয়ে ধ্যান ও ইবাদাতে মশগুল থাকতেন। তাঁর কাছে লোকালয়ের এ কোলাহল পূর্ণ পরিবেশ থেকে নিভৃত নিস্তব্ধ স্থানে ধ্যানমগ্ন থাকাই অধিক প্রিয় বোধ হতে লাগল।
অতঃপর তিনি মক্কা হতে একক্রোশ দূরে হেরা পর্বতের এক অপ্রশস্ত গুহায় নির্জন বাসের লক্ষ্যে আশ্রয় গ্রহণ করেন। এর গুহায় গমন কালে হযরত খাদীজা কয়েক দিনের খাবার তৈরী করে দিতেন। খাদ্য ও পানীয় শেষ হয়ে গেলে পুনরায় ঘরে এসে খাদ্য ও পানীয় নিয়ে হেরার গুহায় গমন করতেন।
কখনও বা আবার হযরত খাদীজা (রাঃ) নিজেই খাদ্য ও পানীয় হেরা গুহায় দিয়ে আসতেন। আর রাসূলুল্লাহ (সাঃ) হেরা গুহার নির্জন গুহায় স্রষ্টা, সৃষ্টি, সৃষ্টির সেরা মানুষের অধঃপতন ইত্যাদি নিয়ে গভীর ধ্যানে মগ্ন হতেন।
হেরা পর্বতের নির্জন গুহাতে তিনি ধ্যানরত। এ অবস্থায় তাঁর বয়স চল্লিশ বছরে পৌঁছাল।
মাসটি ছিল রমযান। প্রতিদিনকার মত তিনি ইবাদতে মশগুল। হঠাৎ করে তাঁর সম্মুখে হযরত জিবরাঈল (আঃ) উপস্থিত হয়ে সুসংবাদ দিলেন- আল্লাহ তাআলা জিন ও মানবের হিদায়াতের জন্য আপনাকে নির্বাচিত করেছেন এবং রাসূলের গুরুত্বপূর্ণ পদমর্যাদায় অভিষিক্ত করেছেন।
যদিও মনে হয় এটি একটি ছোট্ট ঘটনা কিন্তু মানব ইতিহাসে এ ঘটনা এক মহাবিপ্লবের নিমিত্ত পূর্ব সংকেত। এ ঘটনা রাসূলে পাক (সাঃ)- এর পবিত্র সত্তাকে মর্যাদার সুউচ্চ সোপানে আরোহিত করেছে।