
ঘটনাটি আমার এক বড় ভাই আনিসের কাছ থেকে শোনা। ঘটনাটি ঘটেছিল জামালপুরে।
জামালপুরে একজন রিকশাচালক ছিল। সে অতিরিক্ত ইনকামের আশায় প্রায়ই রাতের বেলায় রিকশা চালাতো। কারণ, রাতের বেলায় ভাড়াটা একটু বেশি পাওয়া যায়, আর দূরের যাত্রীও মেলে — যেহেতু সেখানে রেলস্টেশন রয়েছে।
একদিন সে রেলস্টেশনে দাঁড়িয়ে আছে। অন্য কোনো রিকশাওয়ালাও তেমন ছিল না। অনেক রাত তখন। একটা ‘লাস্ট ট্রেন’ আসার কথা ছিল, কিন্তু সেটা প্রায় দুই ঘণ্টা দেরি করছিল।
হঠাৎ ট্রেনটা এলো — আর নামল একজনমাত্র যাত্রী। লোকটা স্যুট-বুট পরা, হাতে একটা ব্রিফকেস। সে রিকশাচালকের কাছে এসে বলল, “যাবে?”
রিকশাচালক বলল, “যাবো, কিন্তু কোথায়?”
লোকটা বলল, “আমি যেদিকে বলি, সেদিকে চলো।”
রিকশাওয়ালা চলতে শুরু করল। চালাতে চালাতে গিয়ে পৌঁছাল জামালপুরের সবচেয়ে বড় কবরস্থানে। সাধারণত এই কবরস্থানের গেটে বিশাল এক তালা ঝুলে থাকে।
কিন্তু লোকটা যখন গেটের সামনে গিয়ে দাঁড়াল, তখন তালাটা অটোমেটিক খুলে গেল।
রিকশাওয়ালা অবাক হয়ে সেই দৃশ্য দেখছে। লোকটা গেটের ভেতরে ঢুকে গেল। অনেকক্ষণ পরে সে ফিরে এলো — হাতে কাপড়ে ঢাকা কিছু একটা, দেখতে ছোটখাটো একটা লাশের মতো।
সে এসে রিকশায় উঠল এবং বলল, “যেখানে থেকে এনেছো, সেখানেই নিয়ে চলো।”
রিকশাওয়ালা খুব ভয়ে ভয়ে আবার চালাতে শুরু করল। পেছন থেকে সে একটা অদ্ভুত শব্দ শুনতে পেল — যেন কেউ হাড় চিবিয়ে খাচ্ছে, আর মাঝে মাঝে কিছু একটা ছুড়ে ফেলছে এমন শব্দ।
সে ভয়-ভয় করে আবার স্টেশনে ফিরে এলো।
স্টেশনে পৌঁছানোর পর লোকটা বলল, “এতক্ষণ যা দেখেছো, যা শুনেছো — এসব কখনো কাউকে বলবে না। আর বলো, তোমাকে কত ভাড়া দেব?”
রিকশাওয়ালা কিছু বলেনি। তখন লোকটা তার হাতে একটি তামার পয়সা তুলে দেয়।
ট্রেন তখনও স্টেশনে দাঁড়িয়ে, অথচ সেই সময়ের স্টেশন মাস্টার বা কর্মচারী কেউই নেই। পরে জানা যায়, সেই রাতে রেল ধর্মঘট ছিল — কোনো ট্রেন আসার কথাই ছিল না।
এরপর রিকশাচালক অজ্ঞান হয়ে পড়ে।
সকালবেলা আশেপাশের রিকশাওয়ালারা এসে দেখে — সে বৃষ্টিতে ভেজা অবস্থায় মাটিতে পড়ে আছে, সেন্সলেস।
হুঁশ ফিরে এলে সে এই ঘটনা তার স্ত্রীকে বলে। কথা শুনে আশেপাশের মানুষও কৌতূহলে এগিয়ে আসে। সে যখন ঘটনাটা সবাইকে বলছিল এবং তামার পয়সাটা দেখাচ্ছিল — হঠাৎ সে অস্বাভাবিক আচরণ করতে থাকে।
তার নাক-মুখ দিয়ে রক্ত বেরিয়ে আসতে শুরু করে, আর সেখানেই সে মারা যায়।
লোকজন স্বচক্ষে দেখেছে তার মৃত্যু — আর সেই তামার পয়সা নিয়েও নানা কথা ছড়িয়ে পড়ে পাড়ায়।