হযরত হাসান বসরী (রঃ) – পর্ব ১২

হযরত হাসান বসরী (রঃ) -১১ তম পড়তে এখানে ক্লিক করুন

ওহ! তিনি বলে উঠলেন, তাঁর মানে হাসান আমার রহস্য প্রকাশ করেছেন। ঠিক আছে, আমিও তাঁর রহস্য উন্মোচন করে দেব। আচ্ছা, বল দেখি কিছুক্ষণ আগে সাদা পোশাক পরা এক দরবেশ আমার সঙ্গে কথা বলে চলে গেলেন, তিনি কে চিনতে পেরেছ কি? আমর বললেন, না হুযুর।

সাধক বললেন, তিনিই হযরত হাসান বসরী (রঃ)। প্রতিদিন দুপুরের পর তিনি বসরা থেকে এখানে আসেন। তারপর কথাবার্তা বলে আবার বসরায় ফিরে গিয়ে আসরের নামাজ আদায় করেন। এমন একটি সুযোগ্য মানুষ বসরায় থাকতে তুমি আমার কাছে এলে কেন?

এক প্রতিবেশী। নাম শামাউন। অগ্নির উপাসক। দীর্ঘায়ু লোক। বার্ধক্যে উপনীত হয়েছেন। আক্রান্ত হলেন এক কঠিন অসুখে। জীবনের আশা অতি ক্ষীর্ণ, ক্ষীর্ণতম। তাঁর আসন্ন মৃত্যুর সংবাদ ছড়িয়ে পড়ল সর্বত্র। হযরত হাসান (রঃ)-এর কানেও এল কথাটা। তিনি প্রতিবেশীর অন্তিম শয্যার পাশে গিয়ে বসলেন। দেখলেন, শামাউনের সারা শরীরে কালো দাগ।

তিনি বললেন, আগুন আর ধোয়া নিয়েই তো কাল কাটালে, এখন একবার আল্লাহকে মেনে নাও। ইসলাম কবুল কর। হয়তো আল্লাহ্‌র রহমতে নেমে আসবে তোমার ওপর। শামাউনের ঠোঁটে তাচ্ছিল্যের আভাস। বললেন, দুটি কারণে তোমাদের ধর্মের প্রতি আমার বিতৃষ্ণা আছে। প্রথম কারণটি হল- ইসলাম ধর্মাবলম্বীরা দিনরাত দুনিয়ার কাজে ব্যস্ত থাকে। আর দ্বিতীয় কারণ তারা মুখে মৃত্যুর কথা বলে বটে তবে এমন সব কাজ-কারবার করে যা মৃত্যু-ভীতদের পক্ষে করা সম্ভব নয়। কেননা, ঐ সকল কাজে আল্লাহ্‌ অসন্তুষ্ট হন।

হযরত হাসান (রঃ) বললেন, শুভাকাঙ্ক্ষীর মতোই কথা বলেছ তুমি। কিন্তু, তুমি কী করলে? আজীবন আল্লাহকে ভুলে আগুনের উপাসনা করে কি তাঁর বিরাগভাজন হলে না? শোন, আমি কোনদিন আগুনের উপাসনা করিনি। কিন্তু আমি যাঁর এবাদত-বন্দেগী অর্চনা করি, তাঁর দয়ায় আগুন আমার বশীভূতঃ। আর তুমি সুদীর্ঘ জীবন আগুনের উপাসনা করেছ, কিন্তু এমন দাবী করতে পারবে না যে, আগুন তোমার বশীভূত। সে তোমার কোন ক্ষতি করবে না।

শামাউন বললেন, হ্যাঁ, আগুন আমার কোন অনিষ্ট করবে না আমার তা বিশ্বাস হয় না, হাসান (রঃ) বললেন, কিছু আগুন আনাও, পরীক্ষা করে দেখি।

আগুন আনা হল। হযরত হাসান (রঃ) শামাউনকে আগুনের ওপর হাত রাখতে বললেন। কিন্তু তার সাহস হল না। তখন হযরত হাসান (রঃ) নিজের একখানা হাত আগুনের ওপর চাপিয়ে দিলেন। আল্লাহ্‌র রহমতে তা পুড়ল না। একগুচ্ছ লোমও না।

হযরত হাসান বসরী (রঃ) -১৩ তম পড়তে এখানে ক্লিক করুন

সূত্রঃ তাযকিরাতুল আউলিয়া

You may also like...

দুঃখিত, কপি করবেন না।